শুক্রবার, ২০ জুন ২০২৫, ৬ আষাঢ় ১৪৩২

যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র অংশ নিলে পুরো অঞ্চল নরকে পরিণত হবে: ইরান

যাযাদি ডেস্ক
  ২০ জুন ২০২৫, ০৯:৪৮
আপডেট  : ২০ জুন ২০২৫, ০৯:৫০
যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র অংশ নিলে পুরো অঞ্চল নরকে পরিণত হবে: ইরান
বৃহস্পতিবার তেল আবিবের কাছে মধ্য ইসরায়েলের রামাত গানে ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র হামলার স্থানে ধ্বংসপ্রাপ্ত একটি ভবনের সামনে ইসরায়েলি পতাকা উড়ছে। ছবি: এএফপি

ইসরায়েলি হামলায় যুক্তরাষ্ট্র অংশ নিলে তা “পুরো অঞ্চলকে নরকে পরিণত করবে” বলে মন্তব্য করেছেন ইরানের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাঈদ খতিবজাদে। বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি এমন মন্তব্য করেন।

সাঈদ খতিবজাদে বলেন, “এটি আমেরিকার যুদ্ধ নয়। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যদি এই যুদ্ধে জড়ান, তাহলে ইতিহাসে তিনি সেই প্রেসিডেন্ট হিসেবে স্মরণীয় হবেন, যিনি এমন এক যুদ্ধে প্রবেশ করেছেন যেখানে তার কোনো স্থান ছিল না।”

খতিবজাদে আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সরাসরি হস্তক্ষেপ যুদ্ধকে আরও দীর্ঘায়িত করবে এবং “নৃশংসতা বন্ধের পথ রুদ্ধ করবে”।

এই বক্তব্য এমন এক সময় আসলো, যখন ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় দক্ষিণ ইসরায়েলের সোরোকা হাসপাতালের পাশে একটি সামরিক স্থাপনায় আঘাত হানা হয়েছে। যদিও ইরানি রাষ্ট্রীয় মিডিয়া বলছে, হামলার লক্ষ্য ছিল সামরিক স্থাপনা, হাসপাতাল নয়।

ইসরায়েলের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ওই হামলায় অন্তত ৭১ জন আহত হয়েছে।

পাল্টা হামলায় ইসরায়েল দাবি করেছে, তারা ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় আঘাত করেছে—যার মধ্যে ছিল ‘নিষ্ক্রিয়’ আরাক হেভি ওয়াটার রিয়্যাক্টর ও নাতাঞ্জ ফ্যাসিলিটি।

তবে ইরান এখনও ইসরায়েলি হামলায় হতাহতের সংখ্যা জানায়নি।

হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ঠিক করবেন যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি এই সংঘাতে জড়াবে কিনা।

বিবিসিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে খতিবজাদে বলেন, “কূটনীতি অবশ্যই আমাদের প্রথম পছন্দ। কিন্তু যতক্ষণ পর্যন্ত বোমাবর্ষণ বন্ধ না হয়, ততক্ষণ আমরা আলোচনায় বসতে পারি না।”

তিনি বারবার বলেন, ইরানের হামলা ছিল জাতিসংঘ সনদের ৫১ নম্বর অনুচ্ছেদের অধীনে আত্মরক্ষা।

খতিবজাদে দাবি করেন, “আমরা কূটনৈতিক আলোচনার মধ্যেই ছিলাম, ঠিক তখনই ১৩ জুন ইসরায়েল ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালায়, যাতে শীর্ষ জেনারেল ও বিজ্ঞানীরা নিহত হন।”

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বক্তব্য—যদি ইরান পরমাণু চুক্তি মেনে নিত, তবে এই যুদ্ধ হতো না—এর জবাবে খতিবজাদে বলেন, “আমরা ষষ্ঠ দফা পরমাণু আলোচনা করতে যাচ্ছিলাম ওমানের মাসকাটে। আমরা চুক্তির একেবারে দ্বারপ্রান্তে ছিলাম। ইসরায়েলের হামলাই আলোচনা বানচাল করেছে।”

তিনি ট্রাম্পের “বিভ্রান্তিকর ও পরস্পরবিরোধী” সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম পোস্ট ও বক্তব্য নিয়েও সমালোচনা করেন। বলেন, এতে স্পষ্ট, “যুক্তরাষ্ট্র পরিস্থিতির সাথে জড়িত এবং অংশ নিয়েছে।”

রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, মার্কিন বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ ও ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাকচি শান্তিপূর্ণ সমাধানের বিষয়ে বেশ কয়েকবার ফোনে কথা বলেছেন।

তিন কূটনীতিক রয়টার্সকে জানান, ইরান স্পষ্ট করে বলেছে—ইসরায়েল হামলা বন্ধ না করলে তারা আলোচনায় ফিরবে না।

ইসরায়েল অভিযোগ করেছে, ইরান সাম্প্রতিক সময়ে ইউরেনিয়াম মজুত ‘অস্ত্রায়ন’ করতে পদক্ষেপ নিচ্ছে। যদিও ইরান বরাবরই বলছে, তাদের পরমাণু কর্মসূচি সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ।

জাতিসংঘের পারমাণবিক সংস্থা (আইএইএ) জানায়, ইরান ৬০ শতাংশ পর্যন্ত ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করেছে, যা অস্ত্র তৈরির ৯০ শতাংশ মাত্রার কাছাকাছি।

এর জবাবে খতিবজাদে বলেন, “এটা ভিত্তিহীন। যদি আমাদের বোমা বানানোর ইচ্ছা থাকত, অনেক আগেই বানিয়ে ফেলতাম।”

তিনি জোর দিয়ে বলেন, “ইরান কখনো শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক কর্মসূচিকে অস্ত্রায়ন করেনি।”

খতিবজাদে বলেন, জি-৭ সম্মেলনের পর ইউরোপীয়রা ইঙ্গিত দিয়েছেন যে তারা আবার মন্ত্রী পর্যায়ে আলোচনায় ফিরতে চায়। “তারা জেনেভায় একটি বৈঠকের প্রস্তুতি নিচ্ছে এবং আমরা এতে অংশ নিতে আগ্রহী। এখন সময় এসেছে টেবিলে বসে সমাধান খোঁজার।”

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে