ইরান আজ ইসরায়েলের বিভিন্ন স্থানে যে ২০টি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে, তার মধ্যে অন্তত একটি ছিল ক্লাস্টার বোমা ওয়ারহেডযুক্ত। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর হোম ফ্রন্ট কমান্ডের বরাতে টাইমস অব ইসরায়েল এ তথ্য জানিয়েছে।
কী এই ক্লাস্টার বোমা?
আজকের হামলায় আজোর শহরের একটি বাড়িতে একটি সাব-মিউনিশন আঘাত হানে, যার ফলে ক্ষয়ক্ষতি হয়। বড় দুর্ঘটনা এড়ানো গেলেও, ঘটনাটি ইঙ্গিত দেয় এই ধরনের অস্ত্র কতটা অনিয়ন্ত্রিত এবং বিপজ্জনক।
মানবিক ও আইনি প্রশ্ন
২০০৮ সালে গৃহীত "Convention on Cluster Munitions" নামক আন্তর্জাতিক চুক্তি অনুযায়ী, ক্লাস্টার বোমার ব্যবহার, উৎপাদন ও মজুদ নিষিদ্ধ। ১২০টির বেশি দেশ এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে, যদিও ইরান, ইসরায়েল এবং যুক্তরাষ্ট্র তাতে অংশ নেয়নি। ফলে আন্তর্জাতিক আইনের সীমারেখায় থাকলেও, মানবিক দৃষ্টিকোণে বিষয়টি অত্যন্ত উদ্বেগজনক।
যুদ্ধের নিয়ম ও অসামরিক সুরক্ষা আন্তর্জাতিক যুদ্ধ আইন বা International Humanitarian Law (IHL) অনুযায়ী, যুদ্ধকালীন সময়েও অসামরিক ব্যক্তিদের জীবন ও বসতবাড়ি সুরক্ষিত রাখার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। অস্ত্র প্রয়োগের ক্ষেত্রে নির্বিচার আক্রমণ বা এমন কোনো হামলা যা অসামরিক জনগণের ক্ষতির সম্ভাবনা রাখে, তা আন্তর্জাতিক অপরাধ হিসেবে গণ্য হতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ক্লাস্টার বোমা "সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুর" বিপরীতে ব্যাপকভাবে এলাকা ধ্বংস করতে ব্যবহৃত হয়—যা এই যুদ্ধনীতি পরিপন্থী।
সামরিক দৃষ্টিকোণ ইরান বহুদিন ধরেই দাবি করে আসছে যে তাদের হাতে MIRV (Multiple Independently Targetable Reentry Vehicle) প্রযুক্তি রয়েছে, যা একবারে একাধিক লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম। ক্লাস্টার ওয়ারহেডের ব্যবহার সেই কৌশলেরই একটি রূপ, যেখানে একটি মিসাইল পুরো এলাকাকে অচল করে দেওয়ার চেষ্টা করে।
জনসচেতনতা ও নিরাপত্তা ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জনসাধারণকে সাবধান করে বলেছে, মাটিতে পড়ে থাকা ক্ষেপণাস্ত্র বা বোমার কোনো অংশ ছুঁয়ে না যেতে, কারণ সেগুলো এখনও বিস্ফোরক থাকতে পারে। এতে নতুন করে মৃত্যু বা গুরুতর আহত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
ইসরায়েল-ইরান চলমান উত্তেজনা এক ভয়াবহ মোড় নিচ্ছে, যেখানে আন্তর্জাতিক যুদ্ধনীতি, অসামরিক সুরক্ষা এবং কৌশলগত অস্ত্রের ব্যবহার এক সঙ্গে প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। ক্লাস্টার বোমার ব্যবহার শুধু তাৎক্ষণিক ক্ষয়ক্ষতি নয়, বরং ভবিষ্যতের জন্যও এক ভয়ঙ্কর মানবিক বিপর্যয়ের পূর্বাভাস।