আন্তর্জাতিক

প্রেমে প্রত্যাখ্যান—সেখান থেকেই জন্ম প্রতিশোধের ইচ্ছা। আর সেই প্রতিশোধ বাস্তবায়নে একটি গোটা দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে নাড়িয়ে দেওয়া হলো।

এয়ার ইন্ডিয়া বিমানের দুর্ঘটনা, নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে বোমা হামলার হুমকি, ভারতের ১২টি রাজ্যে সন্ত্রাসের বার্তা—সব কিছুর পেছনে ছিলেন একজন নারী প্রযুক্তিবিদ, যিনি ভালোবাসার ব্যর্থতা ঢাকতে চেয়েছিলেন সাইবার অপরাধের ছায়ায়।

পুলিশ জানিয়েছে, অভিযুক্ত রেনে জোশিল্ডা (৩১) চেন্নাইয়ের একজন রোবোটিক্স প্রশিক্ষিত প্রকৌশলী এবং ২০২২ সাল থেকে আন্তর্জাতিক পরামর্শক সংস্থা ডেলয়েটে কর্মরত ছিলেন। সম্প্রতি তাকে চেন্নাইয়ের নিজ বাসা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

প্রেমে ব্যর্থতা, প্রতিশোধের প্ল্যান

আহমেদাবাদ পুলিশের যুগ্ম পুলিশ কমিশনার (অপরাধ) শরদ সিংহল ভারতীয় সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে জানান, রেনে দীর্ঘদিন ধরে ডিভিজ প্রভাকর নামে এক ব্যক্তিকে ভালোবাসতেন এবং বিয়ে করতে চেয়েছিলেন।

কিন্তু সেই প্রেম ছিল একতরফা। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে প্রভাকর অন্য এক নারীকে বিয়ে করলে ভেঙে পড়েন রেনে। সেই ভাঙনের মাঝেই জন্ম নেয় প্রতিহিংসার বীজ।

সাইবার দুনিয়ায় মাস্টারমাইন্ডের মতো অভিযান

পুলিশের ভাষ্য অনুযায়ী, রেনে একাধিক ভুয়া ইমেইল আইডি তৈরি করেন—কিছু প্রভাকরের নাম ব্যবহার করে। পরিচয় গোপন রাখতে তিনি ভিপিএন, ভার্চুয়াল ফোন নম্বর এবং এমনকি ডার্ক ওয়েবও ব্যবহার করেন। তবে সব প্রযুক্তির মাঝেও একটি ছোট ভুল তাকে ফাঁসিয়ে দেয়। সেই সূত্র ধরেই সাইবার অপরাধ বিভাগ চেন্নাইয়ের ঠিকানায় পৌঁছায়।

‘স্টেডিয়ামে বোমা বসানো হয়েছে, বাঁচাতে পারলে বাঁচাও’

পুলিশ জানায়, রেনে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ভুয়া হুমকিমূলক ইমেইল পাঠিয়েছেন। যার মধ্যে ছিল নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়াম, বিজে মেডিকেল কলেজ, আহমেদাবাদের বিভিন্ন স্কুল, এমনকি ১১টি রাজ্যের একাধিক স্থান।

ইমেইলের ভাষা ছিল ভয়ংকর। একটি ইমেইলে লেখা হয়—‘নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে সফলভাবে বোমা বসানো হয়েছে। পারো তো স্টেডিয়াম বাঁচাও।’

আরেকটি ইমেইলে ছিল আরও চাঞ্চল্যকর দাবি, ‘আমরা গতকাল বলেছিলাম, এবার তোমরা বুঝলে আমরা কী করতে পারি। সাবেক মুখ্যমন্ত্রীকে বহনকারী এয়ার ইন্ডিয়া বিমানে হামলা করেছি।’

উল্লেখ্য, গত ১২ জুন এয়ার ইন্ডিয়ার একটি উড়োজাহাজ আহমেদাবাদের বিজে মেডিকেল কলেজের হোস্টেলে বিধ্বস্ত হয়।

গণহারে হুমকি বার্তা: ১৩টি স্টেডিয়ামে, ৪টি স্কুলে

তদন্তে উঠে এসেছে রেনে জোশিল্ডা মোট ২১টি ভুয়া হুমকি ইমেইল পাঠান:

১৩টি: নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে

৪টি: জেনেভা লিবারেল স্কুলে

৩টি: দিব্য জ্যোতি স্কুলে

১টি: বিজে মেডিকেল কলেজে

এছাড়াও মহারাষ্ট্র, রাজস্থান, দিল্লি, কর্ণাটক, কেরালা, বিহার, তেলেঙ্গানা, পাঞ্জাব, মধ্যপ্রদেশ ও হরিয়ানাসহ দেশের মোট ১২টি রাজ্যে এই ধরনের ইমেইল পাঠানো হয়।

পুরনো ধর্ষণ মামলার দোহাই

আসামির দাবি, হুমকির মাধ্যমে তিনি ২০২৩ সালে হায়দরাবাদের একটি হোটেলে সংঘটিত ধর্ষণ মামলার দিকে পুলিশের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চেয়েছিলেন। এক ইমেইলে লেখা ছিল, ‘তোমার স্কুলে বোমা ফেলব যাতে হায়দ্রাবাদের লেমন ট্রি হোটেলে যে মেয়েটিকে ধর্ষণ করা হয়েছিল, সেই মামলার দিকে নজর যায়।’

প্রযুক্তিকে অস্ত্র বানিয়ে প্রতিশোধ

চেন্নাইয়ের এই প্রযুক্তি প্রকৌশলী কীভাবে ব্যক্তিগত অনুভূতিকে সাইবার অপরাধে পরিণত করে গোটা দেশজুড়ে আতঙ্ক ছড়ালেন, সেটি এখন ভারতের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে এক গুরুত্বপূর্ণ গবেষণার বিষয়।

পুলিশ বলছে, ‘তার প্রতিভা ছিল, কিন্তু সেটিকে ব্যবহার করেছেন ভুল পথে। আমরা বহুদিন ধরে নজরদারি করেছি। শেষ পর্যন্ত একটি ছোট ভুলেই ধরা পড়ে যান।’ সূত্র: হিন্দুস্তান টাইমস।