বিশ্ব যখন যুদ্ধ, সংঘাত ও রাজনৈতিক বিভাজনে টালমাটাল, ঠিক তখনই জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের মাসিক সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণ করলো পাকিস্তান।
মঙ্গলবার (১ জুলাই) থেকে শুরু হয়েছে পাকিস্তানের এই সভাপতিত্ব, যা আন্তর্জাতিক কূটনীতির জটিল সময়ের এক প্রতীকী হলেও তাৎপর্যপূর্ণ মাইলফলক বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
৮ম বারের মতো নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য পাকিস্তান দ্য ডন জানায়, এ নিয়ে অষ্টমবারের মতো জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য হয়েছে পাকিস্তান।
অস্থায়ী সদস্য হিসেবে তারা দায়িত্ব গ্রহণ করে ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে, মেয়াদ শেষ হবে ২০২৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। তবে ২০১৩ সালের পর এবারই প্রথম তারা সভাপতির দায়িত্বে।
গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় ইসলামাবাদ : জাতিসংঘে পাকিস্তানের স্থায়ী প্রতিনিধি আসিম ইফতিখার আহমদ বলেন, “বর্তমান বিশ্ব এক অস্থির ও সংকটময় সময়ে দাঁড়িয়ে আছে। যুদ্ধ, ভূরাজনৈতিক দ্বন্দ্ব ও নিরাপত্তা হুমকি ক্রমাগত বাড়ছে। এর মধ্যেই আমাদের ওপর এই নেতৃত্বের দায়িত্ব এসেছে।”
তিনি আরও বলেন, “এটি পাকিস্তানের জন্য বড় একটি সুযোগ ও দায়িত্ব। আমরা শান্তিপূর্ণ সমাধান, সংলাপ ও কূটনীতিকে অগ্রাধিকার দেবো।”
সভাপতির ভূমিকা: প্রতীকি হলেও প্রভাবশালী : জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের সভাপতি প্রতিমাসে পরিবর্তিত হয়। যদিও এই দায়িত্বের মাধ্যমে কোনও নির্বাহী ক্ষমতা প্রয়োগ করা যায় না, তবু সভাপতিত্বকারী দেশ আলোচনার এজেন্ডা নির্ধারণ ও আলোচনার গতিপথ প্রভাবিত করতে পারে।
বিশ্বজুড়ে গাজা সংকট, ইউক্রেন যুদ্ধসহ বহু ইস্যুতে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। অনেকেই মনে করছেন, পাকিস্তান এই অচলাবস্থায় আলোচনার নতুন মাত্রা আনতে পারে।
শান্তি ও কূটনীতির বার্তা : রাষ্ট্রদূত আসিম বলেন, “আমরা আন্তর্জাতিক আইন ও জাতিসংঘ সনদের আলোকে চলবো। স্বচ্ছতা, দায়বদ্ধতা এবং সকল সদস্যের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করাই আমাদের অঙ্গীকার।”
নিরাপত্তা পরিষদে কাঠামো ও দায়িত্ব : জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে রয়েছে ১৫ সদস্য—এর মধ্যে ৫টি স্থায়ী (যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, চীন, রাশিয়া ও ফ্রান্স) এবং ১০টি অস্থায়ী সদস্য, যাদের মেয়াদ দুই বছর। প্রতিটি সদস্য দেশ এক মাস করে সভাপতির দায়িত্ব পালন করে।
বিশ্ব রাজনীতির এমন সংকটময় মোড়ে পাকিস্তানের সভাপতিত্ব শুধু আনুষ্ঠানিক নয়, তা হতে পারে একটি কৌশলগত অবস্থান গ্রহণের সুযোগ—যা ভবিষ্যতের আন্তর্জাতিক আলোচনায় তাদের অবস্থানকে প্রভাবিত করতে পারে।