মঙ্গলবার, ০১ জুলাই ২০২৫, ১৭ আষাঢ় ১৪৩২

‘গণরুম, গেস্টরুম মুক্ত ঢাবি দিয়ে গেলাম, তোমরা রক্ষা করিও’ — হলের দেয়ালে আবেগঘন বার্তা

যাযাদি ডেস্ক
  ০১ জুলাই ২০২৫, ১৩:৩২
‘গণরুম, গেস্টরুম মুক্ত ঢাবি দিয়ে গেলাম, তোমরা রক্ষা করিও’ — হলের দেয়ালে আবেগঘন বার্তা
‘গণরুম, গেস্টরুম মুক্ত ঢাবি দিয়ে গেলাম, তোমরা রক্ষা করিও’ শীর্ষক গ্রাফিতিটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সূর্যসেন হলের কোনো এক কক্ষের দেয়ালে এঁকেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০২তম ব্যাচের অর্থাৎ ২০২২-২৩ সেশনের কোনো শিক্ষার্থী। 

‘গণরুম, গেস্টরুম মুক্ত ঢাবি দিয়ে গেলাম, তোমরা রক্ষা করিও’ শীর্ষক গ্রাফিতিটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সূর্যসেন হলের কোনো এক কক্ষের দেয়ালে এঁকেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০২তম ব্যাচের অর্থাৎ ২০২২-২৩ সেশনের কোনো শিক্ষার্থী।

প্রাথমিকভাবে সেই কক্ষের তথ্য ও অঙ্কনকারীর পরিচয় জানা যায়নি। তবে ছবিটি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আলোচনা হচ্ছে।

চব্বিশের জুলাই বিপ্লবে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের গেস্টরুম ও গণরুম সংস্কৃতির বিরুদ্ধে এক জোরালো বার্তা নিয়ে এসেছে এ গ্রাফিতি।

কীভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোতে যুগ যুগ ধরে চলে আসা এই অভিশপ্ত সংস্কৃতিকে প্রতিরোধ করা যায়, স্লোগানটি নতুন করে শিক্ষার্থীদের মনে এমন আত্মোপলব্ধি ও গভীর অনুভূতির সঞ্চার করেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০২তম ব্যাচ হলো গণরুম ও গেস্টরুমের শেষ ব্যাচ। এরপর ১০৩ ও ১০৪ তম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে এসেছেন এবং গেস্টরুমমুক্ত ক্যাম্পাস পেয়েছেন।

গ্রাফিতি আঁকার বিষয়টি নিয়ে সূর্যসেন হলের একাধিক শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কেউ কেউ এটিকে ৫ আগস্ট পরবর্তী লেখা বলছেন, আবার কেউ সাম্প্রতিক সময়ের লেখা হিসেবে উল্লেখ করছেন।

তবে এর মূল বার্তাটি স্পষ্ট যে, আর কোনো শিক্ষার্থী যেন গেস্টরুম ও গণরুমের মতো অমানবিক সংস্কৃতির শিকার না হয়। এছাড়া, শিক্ষার্থীরা এখন আর চুপ থাকতে রাজি নয়। তারা তাদের অধিকার আদায়ে সোচ্চার।

শিক্ষার্থীরা বলছেন, এই গ্রাফিতিটি কেবল একটি লেখা নয়, এটি একটি আন্দোলনের প্রতীক। এটি মনে করিয়ে দেয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলো জ্ঞানচর্চার কেন্দ্র হওয়া উচিত, ভীতিকর পরিবেশের আখড়া নয়।

দীর্ঘদিনের এই অসুস্থ সংস্কৃতি থেকে মুক্তির জন্য কেবল শিক্ষার্থীদের সদিচ্ছা যথেষ্ট নয়, বরং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং সংশ্লিষ্ট সকলের পক্ষ থেকে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি।

জানা যায়, জুলাই অভ্যুত্থানের পূর্ববর্তী সময়ে, ছাত্রলীগের নাম করে ক্ষমতার দাপটে দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষার্থীদের অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে তাদের এক প্রকার দাসে রূপান্তরিত করে রাখা হয়েছিল।

এই দাসত্বের শৃঙ্খল থেকে মুক্তি পেতে গণরুম ও গেস্টরুম কালচার ভেঙে দেওয়ার জন্য প্রতিনিয়ত দাবি জানিয়ে আসছিলেন শিক্ষার্থীরা, যা চব্বিশের জুলাই আন্দোলনে আরও জোরালো হয় এবং এক পর্যায়ে তা বাস্তবে রূপ নেয়।

জুলাই আন্দোলনে সামনের সারিতে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী মোসাদ্দেক আলী ইবনে মোহাম্মদ। এর আগে, শেখ হাসিনা সরকার থাকাকালেই তিনি গেস্টরুম ও গণরুম কালচারের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন এবং বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন।

সূর্যসেন হলের গ্রাফিতিটির বার্তা সম্পর্কে অনুভূতি প্রকাশ করে তিনি দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, গণরুম-গেস্টরুম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে সব সময়ই ছিল। যে দলই যখন ক্ষমতায় এসেছে, তারাই এখানে গণরুম-গেস্টরুম প্রতিষ্ঠা করেছে।

অভ্যুত্থান-পরবর্তী আমাদের মূল দাবি ছিল, আর কোনো গণরুম-গেস্টরুম থাকবে না। মেধার ভিত্তিতে শিক্ষার্থীরা সিট পাবে এবং ক্লাস শুরু হওয়ার পূর্বেই প্রথম বর্ষ থেকেই শিক্ষার্থীরা সিট পাবে। এটা আমাদের দাবি ও অঙ্গীকার ছিল।

তবে মোসাদ্দেক আলী আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সেই বৈধ সিট দিতে পারছে না। ফলে রাজনৈতিক দলগুলো সেই সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করছে।

তারা প্রভোস্টকে ম্যানেজ করে গণরুমের আপডেটেড ভার্সন আনার চেষ্টা করছে। এভাবেই গণরুম ফিরে আসার আশঙ্কা রয়েছে।

তাই প্রশাসনকে এই ব্যাপারে সোচ্চার হতে হবে। সেই সাথে শিক্ষার্থীদেরকেও এই ব্যাপারে সচেতন হতে হবে।

সূর্যসেন হলের শিক্ষার্থী আয়মান তার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেন, দীর্ঘদিন আমরা যে ছাত্রলীগের অত্যাচার সহ্য করেছি, আমরা চাই না আমাদের পরবর্তী কোনো জুনিয়র সেই নির্যাতনের শিকার হোক। আমরা চাই প্রত্যেকে তার বৈধ সিটে থাকুক।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে