বুধবার, ০১ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১

বেনামাজির রোজা কবুল হবে না

যাযাদি রিপোর্ট
  ২৪ মার্চ ২০২৪, ০৯:৪৯
ছবি-সংগৃহিত

ইমানের গভীরতা ও দৃঢ়তা সৃষ্টি এবং শরিয়ত পালনে অবিচলতা অর্জনের কার্যকর উপায় সিয়াম সাধনার মাস রমজানুল মোবারকের আজ চতুর্দশ দিবস আজ। বিগত জীবনের ভুল-ভ্রান্তি সংশোধনের জন্য ও জীবনের সব গুনার কথা স্মরণ করে মুসলমানরা প্রতি ওয়াক্ত নামাজ শেষে অশ্রুসিক্ত নয়নে তওবার মাধ্যমে রাব্বুল আলামিনের দরবারে ক্ষমা প্রার্থনা করছেন।

তবে নির্বোধ অনেকেই নামাজ না পড়ে সারাদিন উপবাস থেকে সেহরি ও ইফতারি খেয়ে সিয়াম পালনের দাবি করেন। ইসলাম তাদের সুনির্দিষ্টভাবে সতর্ক করে দিয়ে জানিয়েছে, বেনামাজির রোজা কবুল হবে না।

এ প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, ইসলামের প্রথম স্তম্ভ হলো নামাজ।

তারপর পর্যায়ক্রমিকভাবে রোজ, হজ, জাকাত ইত্যাদির অবস্থান। নামাজ ছাড়া কোনো ইবাদতই কবুল হয় না। এ ছাড়া সালাত হচ্ছে একজন মানুষের ইসলাম গ্রহণের পর ইসলাম টিকিয়ে রাখার প্রথম শর্ত। অর্থাৎ ইমান আনার পর সেই ইমানে অবিচল থাকা প্রধান শর্ত হচ্ছে ৫ ওয়াক্ত সালাত আদায় করা। যদি কেউ তা না করে তবে তার আর ইমান থাকবে না। সে কাফের হয়ে যাবে।

এ প্রসঙ্গে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আমাদের ও কাফেরদের মধ্যে চুক্তি হলো সালাত। সুতরাং যে ব্যক্তি তা ত্যাগ করবে সে কাফির হয়ে যাবে। (তিরমিজিঃ ২৬২১, ইবনে মাজাহঃ ১০৭৯) অর্থাৎ ৫ ওয়াক্তে সর্বমোট অন্তত ১৭ রাকআত ফরজ সালাত একজন মানুষকে মুসলিম থাকতে হলে অবশ্যই আদায় করতে হবে। যদি সে মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করে সে ক্ষেত্রেও তাকে প্রতিদিন ৫ ওয়াক্ত সালাত অবশ্যই আদায় করতে হবে। সুতরাং হাদিস অনুযায়ী যে রোজা রাখল কিন্তু সালাত আদায় করল না তার রোজা কবুল হওয়ার কোনো সম্ভাবনাই নেই।

এমনকি বেনামাজির জাকাত ও হজসহ কোনো আমলই কবুল হয় না। ইমাম বুখারি (৫২০) বুরাইদা (রা.) হতে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আসরের নামাজ ত্যাগ করে তার আমল নিষ্ফল হয়ে যায়।’

এ হাদিস প্রমাণ করে, বেনামাজির কোনো আমল আল্লাহ কবুল করেন না এবং বেনামাজি তার আমল দ্বারা কোনোভাবে উপকৃত হবে না। তার কোনো আমল আল্লাহর কাছে উত্তোলন করা হবে না।

‘ফাতাওয়াস সিয়াম’ (পৃ-৮৭) গ্রন্থে এসেছে শাইখ ইবনে উছাইমীনকে বেনামাজির রোজা রাখার হুকুম সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি এর উত্তরে বলেন, বেনামাজির রোজা শুদ্ধ নয় এবং তা কবুলযোগ্য নয়। কারণ নামাজ ত্যাগকারী কাফের, মুরতাদ। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কুরআন করিমে বলা হয়েছে, ‘আর যদি তারা তওবা করে, সালাত কায়েম করে ও জাকাত দেয় তবে তারা তোমাদের দ্বীনি ভাই।’ [৯ সূরা আত্ তওবা: ১১]

প্রসিদ্ধ তাবেয়ি আব্দুল্লাহ ইবনে শাক্বিক রাহিমাহুমুল্লাহ বলেছেন, ‘নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাহাবিগণ নামাজ ছাড়া অন্য কোনো আমল ত্যাগ করাকে কুফরি মনে করতেন না।’

উপরোক্ত আলোচনার ভিত্তিতে বলা যায়, যদি কোনো ব্যক্তি রোজা রাখে; কিন্তু নামাজ না পড়ে তবে তার রোজা প্রত্যাখ্যাত, গ্রহণযোগ্য নয় এবং তা কেয়ামতের দিন আল্লাহ্র কাছে কোনো উপকারে আসবে না।

এমনকি যদি কোনো ব্যক্তি শুধু রমজান মাসে রোজা পালনে ও নামাজ আদায়ে সচেষ্ট হয় আর রমজান শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই নামাজ ত্যাগ করে, তবে তার সিয়াম কি কবুল হওয়া নিয়ে সংশয় রয়েছে।

এ প্রসঙ্গে আলেমদের ভাষ্য, নামাজ ইসলামের পঞ্চস্তম্ভের অন্যতম। সাক্ষ্যদ্বয়ের পর ইসলামের স্তম্ভগুলোর মধ্যে এটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও ফরজে আইন। যে ব্যক্তি এর ফরজিয়তকে অস্বীকার করে কিংবা অবহেলা বা অলসতা করে তা ত্যাগ করল সে কাফের হয়ে গেল। আর যারা শুধু রমজানে নামাজ আদায় করে ও রোজা পালন করে তবে তা হলো আল্লাহ্র সঙ্গে ধোঁকাবাজি। রমজান ব্যতীত অন্য মাসগুলোতে নামাজ ত্যাগ করায় তাদের সিয়াম শুদ্ধ হবে না।

যাযাদি/ এস

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে