শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১

বর্তমানে টাকা দিয়ে কি ফিতরা আদায় হবে?

যাযাদি ডেস্ক
  ৩১ মার্চ ২০২৪, ১২:৩৮
প্রতিকী ছবি

আমাদের সমাজে বর্তমান একটা বিতর্ক আছে যে, টাকা দিয়ে কি ফিতরা আদায় হবে। কারণ এ নিয়ে সমাজে ২টি মত প্রচলিত আছে। একটি হল বর্তমান প্রেক্ষাপটে টাকা দিয়ে ফিতরা হয়ে যাবে। অন্য মতটি হল না খাদ্যদ্রব্য দিয়ে ফিতরা দিতে হবে।

১. ইমাম বুখারি (রহ.) তাঁর সহিহ বুখারিতে মুআজ (রা.)-এর বক্তব্য উল্লেখ করেছেন।

তিনি ইয়ামেনবাসীকে বলেন, তোমরা সদকার মধ্যে খাদ্যদ্রব্যের পরিবর্তে কাপড় নিয়ে আসো। কেননা এটা তোমাদের জন্য অধিকতর সহজ এবং মদিনার সাহাবিগণের জন্যও অধিক উপযোগী। (বুখারি, হাদিস : ১১৪৭)

ইমাম আবু হানিফা (রহ.) এই দৃষ্টিকোণ থেকেই বলেছেন, টাকা দিয়ে আদায় করা উত্তম। কারণ এটি মানুষের জন্য সহজ এবং উপকারী।

আল্লামা ইবনু রাশিদ (রহ.) বলেন, উক্ত মাসআলাটির মাঝে ইমাম বুখারি (রহ.) হানাফিদের সহমত পোষণ করেছেন। (ফাতহুল বারি, ইবনে হাজার : ৩/৩১২)

২. জুহাইর (রহ.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আবু ইসহাক (রহ.) থেকে শুনেছি তিনি বলেছেন, আমি সাহাবায়ে কেরাম (রা.)-কে এই অবস্থায় পেয়েছি যে তারা রমজানে সদকাতুল ফিতর খাবারের বিনিময়ে টাকা দ্বারা আদায় করতেন। (মুসান্নাফ ইবনে আবি শায়বা, হাদিস : ১০৪৭২)

অতএব ফিতর খাদ্যদ্রব্য দিয়ে যেমন আদায় করা যায়, তেমনি টাকা দিয়েও আদায় করা যায়। কারণ অসংখ্য সলফ হাদিসে উল্লিখিত খাদ্যদ্রব্যের পরিবর্তে মুদ্রা বা টাকার মাধ্যমে সদকাতুল ফিতর আদায় করেছেন। নিম্নে তার কয়েকটি উদাহরণ তুলে ধরা হলো।

সদকাতুল ফিতরের উদ্দেশ্য শুধু ‘গরিবদের ঈদের খুশিতে শরিক করা’ বলে যে ধারণা প্রচলিত আছে, তা যথার্থ নয়। কেননা হাদিস শরিফে সদকাতুল ফিতরকে কাফফারাতুন লিসসাওম, অর্থাৎ রোজা অবস্থায় অবচেতনভাবে যে ত্রুটি-বিচ্যুতি হয়ে যায়, তার কাফফারা বা ক্ষতিপূরণ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

ফিতরা আদায় নিয়ে হাদিসে যা বলা হয়েছে

হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, ইবনে ওমর রা. বলেন, ‘রাসুল সা. সদকাতুল ফিতর অপরিহার্য করেছেন। এর পরিমাণ হলো, এক সা জব বা এক সা খেজুর। ছোট-বড়, স্বাধীন-পরাধীন সবার ওপরই এটি ওয়াজিব।’ (বুখারি, হাদিস : ১৫১২)

অপর হাদিসে হজরত আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জাকাতুল ফিতর অপরিহার্য করেছেন অনর্থক ও অশ্লীল কথা-বার্তা দ্বারা সিয়ামের যে ত্রুটি-বিচ্যুতি হয়েছে তা থেকে পবিত্র করা এবং মিসকীনদের খাদ্য প্রদানের জন্য। ঈদের নামাজের পূর্বে আদায় করলে তা জাকাতুল ফিতর হিসাবে গণ্য হবে। আর ঈদের নামাজের পর আদায় করলে তা অন্যান্য সাধারণ দানের মত একটি দান হবে।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ১৬০৯; ইবন মাজাহ, হাদিস : ১৮২৭; মুস্তাদরাকে হাকেম; ১/৪০)

ফিতরা কার ওপর ওয়াজিব?

জাকাতের নিসাবের সমপরিমাণই ফিতরার নিসাব। অর্থাৎ কারো কাছে সাড়ে সাত ভরি সোনা বা সাড়ে বায়ান্ন ভরি রুপা অথবা তার সমমূল্যের নগদ অর্থ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের অতিরিক্ত হয়ে ঈদুল ফিতরের দিন সুবহে সাদিকের সময় বিদ্যমান থাকলে— তার ওপর ফিতরা ওয়াজিব হবে।

যার ওপর সদকাতুল ফিতর আদায় করা ওয়াজিব, তিনি নিজের পক্ষ থেকে যেমন আদায় করবেন, তেমন নিজের অধীনদের পক্ষ থেকেও আদায় করবেন। তবে এতে জাকাতের মতো বর্ষ অতিক্রম হওয়া শর্ত নয়। (ফাতহুল কাদির : ২/২৮১)

রমজান ও ইদুল ফিতরের সাথে সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ একটি ইবাদত সদকাতুল ফিতর। সম্পদশালী মুসলমানদের পাশাপাশি দরিদ্র মুসলামানরাও যেন ঈদের আনন্দে শামিল হতে পারে, সে জন্য আল্লাহ সুবাহানাহু ওয়াতাআলা ফিতরা বা সদকাতুল ফিতর নির্ধারণ করে দিয়েছেন, যা ঈদের নামাজের আগে প্রদান করতে হয়। এই দানকে জাকাতুল ফিতরও বলা হয়।

ইদের দিন সকালে ঈদগাহে যাওয়ার আগে সদকাতুল ফিতর আদায় করা সর্বোত্তম। আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত রয়েছে, আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ঈদের নামাজের উদ্দেশ্যে বের হওয়ার আগে সদকাতুল ফিতর আদায় করার নির্দেশ দিয়েছেন। (সহিহ বুখারি: ১৫০৯)

সাহাবায়ে কেরাম ইদের আগে সদকাতুল ফিতর আদায় করেছেন এ রকম দৃষ্টান্তও পাওয়া যায়। নাফে (রহ.) থেকে বর্ণিত রয়েছে, আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) ঈদের এক দুদিন আগেই সদকাতুল ফিতর আদায় করে দিতেন। (সুনানে আবু দাউদ: ১৬০৬)

ইসলামি আইনবিশারদগণের নির্ভরযোগ্য মত অনুযায়ী ঈদের আগে রমজানের শুরু থেকে বা রমজানের আগেও সদকাতুল ফিতর আদায় করা জায়েজ। তাই রমজানের আগেও কেউ যদি সদকাতুল ফিতরের নিয়তে কিছু দান করলে তা সদকাতুল ফিতর গণ্য হবে। তবে সদকাতুল ফিতর ইদের দিন বা রমজানের শেষ দিকে আদায় করাই উত্তম।

যাযাদি/ এস

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে