শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১

রমজানের শেষ দিকে যে কাজ করা উত্তম

যাযাদি ডেস্ক
  ০৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৪:০৫
ছবি-সংগৃহিত

মুমিনের মনে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। কারণ মাহে রমজান বিদায় নিচ্ছে। আর এই বিদায়ে মুমিনের মন ভারী হয়ে যাচ্ছে। কারণ এই মাস আবার পাবে কিনা তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। মাহে রমজান হচ্ছে কোরআন নাজিলের মাস। এই মাসে মুমিন বান্দারা মন ভরে ইবাদত করতে পারেন। দেখতে দেখতে শেষ হয়ে আসছে পবিত্র রমজান মাস।

রহমত, মাগফেরাত ও নাজাতের এই মাসের বিদায়লগ্নে মুমিনের প্রধান লক্ষ্য থাকে শেষ সময়ের একটি মুহূর্তও যেন নষ্ট না হয়। এই অবস্থায় রোজাদার মুমিনের কিছু বিশেষ করণীয় রয়েছে। যেমন, সদকাতুল ফিতরের প্রস্তুতি নেয়া, তাকওয়া অবলম্বন ও নৈতিক জীবনের অঙ্গীকার করা। কিছু দোয়া রয়েছে যেগুলো রমজানের শেষ দিকে বেশি বেশি পড়া উচিত।

গুনাহ মাফের জন্য মহান আল্লাহর দরবারে ক্ষমা চাওয়ার উপযুক্ত সময় এটিই। পবিত্র এই মাসে হয়ে যাওয়া ত্রুটি-বিচ্যুতির জন্য অনুতপ্ত হয়ে আল্লাহর কাছে এই দোয়ায় রাখা উচিত, ‘হে আমাদের রব! আমাকে, আমার মাতা-পিতাকে এবং সব ইমানদারকে আপনি সেই দিন ক্ষমা করে দিন, যেদিন হিসাব কায়েম করা হবে।’ (সুরা ইবরাহিম, আয়াত: ৪১) অথবা এই দোয়া করা উচিত ‘হে আল্লাহ, আপনি মহানুভব ক্ষমাশীল এবং ক্ষমা করতে পছন্দ করেন, অতএব আমাকে ক্ষমা করুন।’ (তিরমিজি: ৩৫১৩)

মাহে রমজানের রোজার পাশাপাশি বেশি বেশি নামাজ আদায় করেন মুমিন বান্দারা। কোরআন-হাদিসে বর্ণিত ক্ষমা প্রার্থনার সব দোয়া করা যাবে। বিশেষ করে শেষরাতের দোয়া বেশি গুরুত্বপূর্ণ। শেষরাতে আল্লাহ তাআলা প্রথম আসমানে এসে বান্দাদের ফরিয়াদ শোনেন। ‘আল্লাহ তাআলা প্রতিদিন রাতের শেষ তৃতীয়াংশে নিচের আসমানে অবতরণ করেন এবং বলেন, কে আমাকে ডাকবে, আমি তার ডাকে সাড়া দেব। কে আমার কাছে কিছু চাইবে, আমি তাকে দান করব। আর কে আমার কাছে ক্ষমা চাইবে, আমি তাকে ক্ষমা করব।’ (সহীহ বুখারী: ১১৪৫, মুসলিম: ৭৫৮)

এ মাস হলো তাকওয়া অবলম্বনের মাস। তাই রমজানের শেষভাগে মুমিন ব্যক্তি আল্লাহর দরবারে তাকওয়া তথা আল্লাহভীতির জীবন যাপনের অঙ্গীকার করবে এবং দোয়া করবে। কেননা তাকওয়া অর্জন রোজা পালনের অন্যতম উদ্দেশ্য। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনরা, তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর; যাতে তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারো।’ (সুরা আল বাকারা, আয়াত: ১৮৩)

তাকওয়া অর্জনে আল্লাহর সাহায্য চেয়ে এই দোয়া করবে— অর্থ: ‘হে আল্লাহ আমি তোমার কাছে হেদায়েত, তাকওয়া, সুস্থতা ও সম্পদ প্রার্থনা করছি।’ (সুনানে তিরমিজি: ৩৪৮৯)

চারিত্রিক উন্নয়ন ও নৈতিক জীবন লাভের দোয়া:

চারিত্রিক উন্নয়ন ও নৈতিক জীবন লাভ রমজানের রোজা পালনের অন্যতম উদ্দেশ্য। তাই ব্যক্তি রমজানের শেষভাগে নৈতিক ও সংযত জীবনযাপনের দোয়া করা করবে।

রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি মিথ্যা বলা ও সে অনুযায়ী আমল বর্জন করেনি, তার এ পানাহার পরিত্যাগ করায় আল্লাহর কোনো প্রয়োজন নেই।’ (সহীহ বুখারী: ১৯০৩)

রমজানের বিদায়লগ্নে মুমিন চারিত্রিক উন্নতির জন্য এই দোয়া করবে, হে আল্লাহ! তুমি আমাকে সৎকাজ ও উত্তম চরিত্রের দিকে হেদায়াত দান করো। তুমি ছাড়া কেউ এমন নেই যে, সৎকাজ ও উত্তম চরিত্রের দিকে হেদায়াত দান করবে। তুমি আমাকে অসৎ চরিত্র ও বদ আমল থেকে বাঁচিয়ে রাখো। তুমি ছাড়া অসৎ চরিত্র ও বদ আমল থেকে বাঁচিয়ে রাখার কেউ নেই। (সুনানুল কুবরা: ১/৩১২)।

গুনাহমুক্ত জীবন লাভের দোয়া:

রমজানের শেষপ্রান্তে এসে বান্দা গুনাহ থেকে বেঁচে থাকার এই দোয়া করবে, হে আল্লাহ! আমার অন্তরকে বরফ ও শীতল পানি দিয়ে ধৌত করুন। আর আমার অন্তর গুনাহ থেকে এমনভাবে পরিষ্কার করে দিন, যেভাবে আপনি শুভ্র বস্ত্রের ময়লা পরিষ্কার করে থাকেন এবং আমাকে আমার গুনাহ থেকে এতটা দূরে সরিয়ে রাখুন, পৃথিবীর পূর্ব প্রান্তকে পশ্চিম প্রান্ত থেকে যত দূরে রেখেছেন। (বুখারী: ৬৩৭৭)

উল্লেখ্য, রমজানের তাকওয়া নিয়ে বছরের সামনের দিনগুলোতেও নিজের আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে একজন খাঁটি মুমিন হিসেবে জীবনযাপনের শিক্ষা নেয়ার উপযুক্ত সুযোগ এই রমজান।

যাযাদি/ এস

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে