মুমিন মুসলমানের উচিত, কোরআনের আলোকে কোরবানির প্রতি গুরুত্ব দেওয়া। কোরআনের বিধানের আলোকে কোরবানি করা। কোরবানির মাধ্যমে নিজেদেরকে আল্লাহর প্রিয় বান্দা হিসেবে উপস্থাপন করা। কোরবানি ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত, যার মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা যায়। ঈদুল আজহার নির্দিষ্ট দিনে সামর্থ্যবান মুসলিমের জন্য কোরবানি ওয়াজিব। তবে এমন অনেক বিষয় রয়েছে, যা কোরবানিকে অগ্রহণযোগ্য করে দেয়। অর্থ ব্যয় করলেও যদি কোরবানি আল্লাহর কাছে কবুল না হয়, তবে তা কোনো উপকারে আসে না।
আল্লাহ তাআলা বলেন—
অবৈধ উপার্জনের কোরবানি
যদি কারও অর্থ উপার্জনের উৎস হারাম হয়—যেমন ঘুষ, সুদ, দুর্নীতি বা কালোবাজারি—তাহলে সে কোরবানি করলে তা কবুল হবে না। এমনকি যদি এক টাকাও হারাম থাকে, তবে পুরো কোরবানি বাতিল হয়ে যাবে। একজনের টাকায় সমস্যা থাকলে সাতজনের কোরবানিও বাতিল হতে পারে।
আল্লাহ বলেন— ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা ব্যয় কর তোমাদের অর্জিত হালাল সম্পদ থেকে।...’ (সুরা বাকারা: আয়াত ২৬৭)
নিয়তের শুদ্ধতা না থাকলে
কোরবানি কবুল হওয়ার জন্য একনিষ্ঠতা তথা নিয়ত বিশুদ্ধতা থাকা জরুরি। কোরবানিতে কাউকে শরিক করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো ভালোভাবে জেনে-বুঝে অংশীদার নির্বাচন করা। কারণ কোনো শরিকের নিয়ত গলদ হলে কারও কোরবানিই (অন্য শরিকদের কোরবানিও) শুদ্ধ হবে না। কেননা আল্লাহর কাছে কোরবানি রক্ত, মাংস ও হাড় কিছুই পৌঁছায় না বরং পৌঁছে মানুষের নিয়ত তথা তাকওয়া।
কোরবানির পশুর প্রদর্শনী করলে
কোরবানি হবে শুধু আল্লাহর জন্য। লোক দেখানোর জন্য কিংবা সুনাম-সুখ্যাতির জন্য নয়। মানুষকে দেখানোর জন্য বাজারের বড় বড়, সুন্দর ও দামি পশু জবাই করলেই কোরবানি হবে না। বরং তাতে ইখলাস থাকতে হবে।
তবেই কোরবানি কবুল হবে। কোরবানির পশু প্রদর্শনীর ইচ্ছা থাকলে এ কোরবানি আল্লাহর কাছে কবুল হবে না। কার কোরবানি আল্লাহর কাছে কবুল হবে তা-ও ওঠে এসেছে কোরআনের বর্ণনায়-
إِنَّمَا يَتَقَبَّلُ اللهُ مِنَ الْمُتَّقِينَ অর্থ : নিশ্চয়ই আল্লাহ তো মুত্তাকি (পরহেজগার ও সংযমীদের) কোরবানিই কবুল করে থাকেন।' (সুরা মায়েদা: আয়াত ২৭)
কোরআন-সুন্নাহর বিধানের লঙ্ঘন হলে
আল্লাহ ও তার রাসুলের বিধিবিধান অনুসরণ করা ছাড়া কোনোভাবেই কোরবানি কবুল হবে না। বিষয়টি আল্লাহ তাআলা কোরআনুল কারিমে এভাবে তুলে ধরেছেন-
فَمَنْ كَانَ يَرْجُوا لِقَاءَ رَبِّهِ فَلْيَعْمَلْ عَمَلاً صَالِحاً وَّلاَ يُشْرِكْ بِعِبَادَةِ رَبِّهِ أَحَدا
অর্থ : যে তার প্রতিপালকের সাক্ষাৎ কামনা করে; সে যেন সৎকর্ম করে এবং তার প্রতিপালকের ইবাদতে কাউকে শরিক না করে।' (সুরা কাহফ : আয়াত ১০) সুতরাং যারা কোরবানি করবেন, তাদের কোরবানি কবুল হওয়ার জন্য কোরআন-সুন্নাহর দিকনির্দেশনার প্রতি লক্ষ্য রাখার গুরুত্ব অপরিসীম। যারা শুধু বছরজুড়ে এ পশু জবাই করে গোশত খাওয়ার উদ্দেশে কোরবানি দেয়; তাদের কোরবানিও গ্রহণযোগ্য হবে না।
ভাগ-বণ্টনে গরমিল হলে
কোরবানির পশুতে প্রত্যেকের অংশ সমান হতে হবে। কারও অংশ অন্যের অংশ থেকে কম হতে পারবে না। যেমন কারও আধা ভাগ, কারও দেড় ভাগ। এমন হলে কোনো শরিকের কোরবানি শুদ্ধ হবে না। (বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৭) উট, গরু, মহিষ সাত ভাগে এবং সাতের কমে যে কোনো সংখ্যা যেমন দুই, তিন, চার, পাঁচ ও ছয় ভাগে কোরবানি করা জায়েজ। (মুসলিম ১৩১৮, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৭)। উটের বয়স পাঁচ বছর হতে হবে। গরু ও মহিষের বয়স দুই বছর হতে হবে। (মুআত্তা মালেক: ৭৫৪)
গোশত খাওয়ার নিয়তে কোরবানি করলে
যদি কেউ আল্লাহ তাআলার হুকুম পালনের উদ্দেশ্য ছাড়া কোরবানি না করে শুধু গোশত খাওয়ার নিয়তে কোরবানি করে তাহলে তার কোরবানি সহিহ হবে না। তাকে অংশীদার বানালে শরিকদের কোরবানিও কবুল হবে না। (বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৮, কাজিখান ৩/৩৪৯)
হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালামের কোরবানি
মানুষের মনের সর্বোচ্চ ত্যাগই হলো কোরবানি। কোরবানির পশুর রক্ত, পশম, হাড় কোনো কিছুই আল্লাহর কাছে পৌছে না। আল্লাহ তাআলা মানুষের মনের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করেন। যার দৃষ্টান্ত হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালাম। তিনি ‘কোরবানি’র নির্দেশকে হৃদয় দিয়ে উপলব্দি করেছিলেন বলেই তা বাস্তবে সম্পাদন করতে সক্ষম হয়েছিলেন। আর আল্লাহ তাআলা তাঁর কোরবানি কবুল করেছিলেন।
কোরআনুল কারিমে মহান আল্লাহ বলেন- لَن يَنَالَ اللَّهَ لُحُومُهَا وَلَا دِمَاؤُهَا وَلَكِن يَنَالُهُ التَّقْوَى مِنكُمْ كَذَلِكَ سَخَّرَهَا لَكُمْ لِتُكَبِّرُوا اللَّهَ عَلَى مَا هَدَاكُمْ وَبَشِّرِ الْمُحْسِنِينَ
এগুলোর গোশত ও রক্ত আল্লাহর কাছে পৌঁছে না, কিন্তু পৌঁছে তাঁর কাছে তোমাদের মনের তাকওয়া। এমনিভাবে তিনি এগুলোকে তোমাদের বশ করে দিয়েছেন, যাতে তোমরা আল্লাহর মহত্ত্ব ঘোষণা কর এ কারণে যে, তিনি তোমাদের পথ প্রদর্শন করেছেন। সুতরাং সৎকর্মশীলদের সুসংবাদ শুনিয়ে দিন।’ (সুরা হজ : আয়াত ৩৭)
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে কোরআনের আলোকে উত্তমভাবে কোরবানি করার তাওফিক দান করুন।