মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১

বিচারককে হেয়প্রতিপন্ন করায় খুলনার পিপিকে হাইকোর্টে তলব

খুলনা অফিস
  ০৩ এপ্রিল ২০২৪, ১৩:৫৭
আপডেট  : ০৩ এপ্রিল ২০২৪, ১৪:২১

আদালত অবমাননা এবং সোশ্যাল মিডিয়াতে বিচারকের বিরুদ্ধে মিথ্যা ও হেয়প্রতিপন্নমূলক বক্তব্য সম্বলিত ভিডিও প্রকাশ করায় ব্যাখ্যা দিতে খুলনার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল ২-এর বিশেষ পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট জহিরুল ইসলাম পলাশকে তলব করেছেন হাইকোর্ট।

আগামী ৭ মে তাকে সশরীরে হাজির হয়ে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে। একইসঙ্গে তার বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার ঘটনায় কেন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন আদালত।

বুধবার (৩ এপ্রিল) বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের হাইকোর্ট বেঞ্চ স্বপ্রণোদিতভাবে এ আদেশ দেন। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল প্রতিকার চাকমা।

এর আগে গত ৩১ মার্চ খুলনা মেট্রোপলিটন আদালতের বিচারক তরিকুল ইসলাম তাকে নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়াতে মিথ্যা ও হেয়প্রতিপন্নমূলক ভিডিও প্রকাশ এবং আদালতে অশালীন আচরণের ঘটনায় খুলনার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল ২-এর বিশেষ পাবলিক প্রসিকিউটর জহিরুল ইসলাম পলাশের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে প্রধান বিচারপতি বরাবর চিঠি দেন।

চিঠিতে বলা হয়, একটি মামলার শুনানিকে কেন্দ্র করে আদালত কক্ষে আইনজীবী জহিরুল ইসলাম পলাশের সঙ্গে কিছুটা বাগ্বিত্ক হয়। এ কারণে ন্যায়বিচারের স্বার্থে আমি মামলাটি না শুনে চিফ মেট্রোপলিটন আদালতে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিই। তখন জহিরুল ইসলাম পলাশ বলে উঠেন, ‘আপনি আমাকে না শুনেই সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলেন?’ আমি বললাম, ‘এটা কোর্টের প্রসিডিউর, যেহেতু আপনার সাথে কিছুক্ষণ আগে আমার কিছুটা বাগ্বিত্তা হলো।’ তখন প্রত্যুত্তরে উচ্চস্বরে তিনি বললেন যে, ‘আপনার চেয়ে আমি এই বারে আগে আসছি। আমি প্রসিডিউর ভালো বুঝি। আপনার ব্যবহার সবচেয়ে খারাপ। আপনি অনিয়ম করেন। আমরা খুলনা বারে ২০০০ জন আর আপনারা মাত্র ৫০ জন। আমি আপনাকে চিনি। আপনার বাড়ি চিতলমারী। আমার বাড়িও চিতলমারী। আমি (অমুক) এর ছেলে। আপনাকে আমি ভালো করে চিনি। আপনার বিরুদ্ধ আমি চিফ জাস্টিসের কাছে যাব। আপনি আমাকে ইংলিশ শোনান। বারের প্রেসিডেন্ট সেক্রেটারিতে কাজ হবে না। এমন অনেক বিচারক ছিলেন যারা এখান থেকে বিদায় নিয়ে যাওয়ারও সময় পায় নাই, এটা মনে রাইখেন। আপনি আপনার ফিউচারের জন্য প্রস্তত থাকেন।’ উচ্চস্বরে এমন বক্তব্য প্রদান করার পর তিনি আমার এজলাস ত্যাগ করেন। আমি ব্যক্তিগতভাবে বাদীপক্ষের আইনজীবীর এমন আচরণে বিব্রতবোধ করায় বিজ্ঞ আইনজীবী মামলাটি চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট, খুলনা মহোদয়ের নিকট বিচার ও নিষ্পত্তির জন্য প্রেরণ করি।

চিঠিতে আরও বলা হয়, আইনজীবী জহিরুল ইসলাম পলাশ সেদিনই সোশ্যাল মিডিয়া ফেসবুকে ‘First NewsBD ২৪’ নামের একটি পেজে লাইভে আসেন এবং আদালতে ঘটে যাওয়া ঘটনার সত্যতা ও কোর্ট প্রসিডিউরকে পাশ কাটিয়ে বিষয়টি ভিন্নভাবে উপস্থাপন করেন।

ওই বিষয়টি গত ২৬ মার্চ স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস ২০২৪ উপলক্ষ্যে আয়োজিত আলোচনা সভার শুরুতে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল ২-এর বিচারক জানান যে, তার ব্যক্তিগত ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারে ওই আইনজীবী সোশ্যাল মিডিয়াতে তার প্রদত্ত ভিডিও চিত্র সেন্ড করেছেন। যা উপস্থিত খুলনা বিচার বিভাগে কর্মরত আমার স্থানীয় কর্তৃপক্ষ (মাননীয় মহানগর দায়রা জজ ও মাননীয় সিএমএম মহোদয়) ও অন্যান্য বিচারকরা জেনেছেন, শুনেছেন। ওই ভিডিওতে বিচারক হিসেবে আমাকে দুর্নীতিবাজসহ আরও অনেক বিষয়ে মিথ্যা, বানোয়াট এবং সম্মানহানিকর বক্তব্য দেওয়া হয়েছে। পরে প্রধান বিচারপতি জহিরুল ইসলাম পলাশের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে আবেদনটি হাইকোর্টে পাঠান। তার ধারাবাহিকতায় বিষয়টি আজ শুনানির জন্য ওঠে।

যাযাদি/ এসএম

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে