সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যার ডেথ রেফারেন্স এবং দণ্ডের বিরুদ্ধে আসামিদের আপিল শুনানি শেষে আগামী ২ জুন রায়ের দিন ধার্য করেছেন আদালত।
বৃহস্পতিবার (২৯ মে) বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমান ও বিচারপতি মো. সগীর হোসেনের হাইকোর্ট বেঞ্চ শুনানি শেষে এই আদেশ দেন।
এর আগে গত ২ জানুয়ারি মেজর সিনহা হত্যা মামলাটি হাইকোর্টে দ্রুত শুনানির উদ্যোগ গ্রহণ করতে অ্যাটর্নি জেনারেলের কাছে আবেদন করেন তার মা নাসিমা আক্তার। পরে মামলাটি দ্রুত শুনানির আশ্বাস দেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান।
২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাতে টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের বাহারছড়া শামলাপুর তল্লাশি চৌকিতে নিহত হন মেজর সিনহা। এ ঘটনায় পুলিশ টেকনাফ থানায় দুটি এবং রামু থানায় একটি মামলা করে। সরকারি কাজে বাধা প্রদান এবং মাদক আইনে এসব মামলা হয়। টেকনাফ থানায় করা দুই মামলায় নিহত সিনহার সঙ্গী সাইদুল ইসলাম সিফাতকে আসামি করা হয়। আর রামু থানায় মাদক আইনে করা মামলায় আসামি করা হয় সিনহার অপর সঙ্গী শিপ্রা দেবনাথকে।
পরে নিহত সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস ২০২০ সালের ৫ আগস্ট বাদী হয়ে কক্সবাজার আদালতে টেকনাফের বাহারছড়া পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক লিয়াকত আলীকে প্রধান করে ৯ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন। মামলায় টেকনাফ মডেল থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশকে করা হয় দুই নম্বর আসামি।
এ মামলাটির পাশাপাশি পুলিশের করা তিনটি মামলার তদন্তভার দেয়া হয় র্যাব। ২০২০ সালের ৬ আগস্ট মামলায় অভিযুক্ত ৯ জনের মধ্যে সাত পুলিশ সদস্য আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। পরে আরও সাত আসামিকে বিভিন্ন সময় গ্রেপ্তার করে র্যাব। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মো. খাইরুল ইসলাম ওসি প্রদীপসহ ১৫ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দেন। অভিযোগপত্রে সাক্ষী করা হয় ৮৩ জনকে। একই দিন পুলিশের করা মামলা তিনটির চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়।
২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর আদালত অভিযোগপত্র গ্রহণ করে পলাতক আসামি কনস্টেবল সাগর দেবের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তাররি পরোয়ানা জারি করেন। সেই সঙ্গে পুলিশের করা তিনটি মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন গ্রহণ করে মামলা থেকে সাইদুল ইসলাম সিফাত ও শিপ্রা দেবনাথকে অব্যাহতি দেন আদালত।
এরপর মামলার কার্যক্রম পরিচালনার জন্য কক্সবাজারের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম তামান্না ফারাহর আদালত থেকে জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইলের আদালতে স্থানান্তর হয়। ২০২১ সালের ২৭ জুন আদালত ১৫ আসামির বিরুদ্ধে বিচারকাজ শুরুর আদেশ দেন। কিন্তু করোনা মহামারির কারণে বিচার কার্যক্রম স্থগিত থাকায় ধার্য দিনে সাক্ষ্য গ্রহণ সম্ভব হয়নি।
পরে ২০২১ সালের ২৩ আগস্ট থেকে ১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৮ দফায় ৮৩ জনের মধ্যে ৬৫ জন এ মামলায় সাক্ষ্য দেন। ২০২২ এ ৯ থেকে ১২ জানুয়ারি পর্যন্ত মামলায় রাষ্ট্র ও আসামি উভয়পক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের পর ওই বছরের ৩১ জানুয়ারি কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল মামলার রায় ঘোষণা করেন। রায়ে বরখাস্ত ওসি প্রদীপ ও এসআই লিয়াকতকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়। আর ছয় আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দিয়ে বাকিদের খালাস দেন বিচারিক আদালত।