শনিবার, ৩১ মে ২০২৫, ১৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

ইশরাকের মেয়র পদ নিয়ে ধোঁয়াশা

লিভ টু আপিল পর্যবেক্ষণসহ নিষ্পত্তি  
যাযাদি ডেস্ক
  ২৯ মে ২০২৫, ১৯:৩১
ইশরাকের মেয়র পদ নিয়ে ধোঁয়াশা
ইশরাক হোসেন ফাইল ছবি

বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ঘোষণা করা নির্বাচন কমিশনের (ইসি) গেজেটের কার্যকারিতা স্থগিত করেননি আপিল বিভাগ। এই গেজেটের কার্যকারিতা স্থগিত চেয়ে যে লি ভটু আপিল (আপিলর অনুমতি চেয়ে আবেদন) করা হয়েছিল, তা পর্যবেক্ষণসহ নিষ্পত্তি করে দিয়েছেন সর্বোচ্চ আদালত।

আজ বৃহস্পতিবার (২৯ মে) প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন সাত বিচারপতির পূর্ণাঙ্গ আপিল বেঞ্চ এই আদেশ দেন।

1

আদালত আদেশে বলেছেন, এই মামলা থেকে উদ্ভূত প্রশ্নের সুরাহার বাধ্যবাধকতা সাংবিধানিক এবং আইনগতভাবে নির্বাচন কমিশনের রয়েছে।

সর্বোচ্চ আদালতের এই আদেশের পরও ইশরাক হোসেনের মেয়র পদ নিয়ে ধোঁয়াশা থেকেই গেল। শপথ নিয়ে তিনি এই পদে বসতে পারবেন কিনা, তা নিয়ে তিন পক্ষ তিন ধরনের কথা বলছেন।

আদালতে নির্বাচন কমিশনের পক্ষে বক্তব্য তুলে ধরেন আইনজীবী ইয়াসিন খান। লিভটু আপিলের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন- জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মোহাম্মদ হোসেন। সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী জহিরুল ইসলাম মুসা। ইশরাকের পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন। সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী এ কে এম এহসানুর রহমান।

আদেশের পর লিভ টু আপিলকারীর আইনজীবী মোহাম্মদ হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘পর্যবেক্ষণ দিয়ে আদালত আবেদনটি নিষ্পত্তি করে দিয়েছেন।

আমরা আশা করব নির্বাচন কমিশন এখন যথা শিগগিরই নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে (যে রায়ে ইশরাক হোসেনকে মেয়র ঘোষণা করা হয়) আপিল দায়ের করবে। আর যদি তা করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে আমরা আবার আইনগত ব্যবস্থা নেবো।’

এই আইনজীবী বলেন, ‘রিটের আদেশে হাইকোর্ট নির্বাচন কমিশনকে বলেছেন, যারা পক্ষ ছিল (মামলার) তারা আপিল করতে পারবে। আপিল করার ক্ষেত্রে তাদের যদি নির্ধারিত সময়সীমা নিয়ে কোনো বাধ্যবাধকতা থাকে, তাহলে সেই বাধ্যবাধকতা মার্জনা করে হলেও তাদের (পক্ষগুলোর) আপিল গ্রহণ করতে হবে। আর আজ আপিল বিভাগ বলে দিয়েছেন, নির্বাচন কমিশনকে সাংবিধানিক দায়িত্ব পালন করতে।’

তিনি আরো বলেন, ‘এখন হাইকোর্ট আর আপিল বিভাগের আদশ একসঙ্গে পড়লে এটাই দাঁড়ায় যে, আপিল বিভাগ নির্বাচন কমিশনকে আপিল করতে বলেছেন। ফলে ইশরাক হোসেনকে এখন আর শপথ পড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। কারণ গেজেটের মেয়াদ শেষ।’

এক প্রশ্নে মোহাম্মদ হোসেন বলেন, ‘এখতিয়ার প্রশ্নে হাইকোর্ট রিট আবেদনটি খারিজ করেছিলেন। সেই খারিজ আদেশের বিরুদ্ধে লিভটু আপিল করা হয়েছিল। আপিল বিভাগ লিভটু আপিলটি খারিজ না করে নিষ্পত্তি করে দিয়েছেন। তার মানে রিট আবেদন করার ক্ষেত্রে রিট আবেদনকারীর এখতিয়ার ছিল, আছে।’

ইশরাকের আইনজীবী এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন সাংবাদিকদের বলেন, ‘হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে লিভটু আপিলকারী গেজেট স্থগিত চেয়েছিলেন। আপিল বিভাগ সেটি স্থগিত করেননি। কোর্ট পর্যবেক্ষণ দিয়ে বলেছেন, নির্বাচন কমিশন স্বাধীন, সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান, এ ব্যাপারে ইসিই সিদ্ধান্ত নিবে। ইসির সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত হবে।’

তিনি আরো বলেন, ‘স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনকে আপিল করতে বলেছিল। কিন্তু ইসি চিঠি দিয়ে বলেছে, এই মামলার (নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালের মামলা) কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী পক্ষ না। আদালতের আদেশ অনুসারে গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে। ইসি আপিল করবে না।’

আপিল বিভাগের আদেশের ব্যাখ্যায় জ্যেষ্ঠ এই আইনজীবী বলেন, ‘লিভটু আপিলটি আদালত মঞ্জুর করেননি। কোনো স্থগিতাদেশ দেননি এবং নিষ্পত্তি করে দিয়েছেন। বলেছেন, নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত হবে। নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত তো ইতিমধ্যে আমরা দেখেছি। এখন নির্বাচন কমিশন পূর্ণাঙ্গ সিদ্ধান্ত জানাবে যে, গেজেট ঠিক আছে। আগের মতামত থেকে নির্বাচন কমিশনের সরে আসার সুযোগ নাই। ফলে এখন তারা একই রকম সিদ্ধান্ত দিলে সরকার শপথ পড়াতে বাধ্য হবে। শপথ না পড়ালে তা আদালত অবমাননা হবে।’

গেজেটের মেয়াদ শেষ, এখন কী হবে, জানতে চাইলে মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, ‘এতে কোনো সমস্যা নাই। বিজয়ী প্রার্থী যদি ৩০ দিনের মধ্যে শপথ না নেন তাহলে তার পদটা শূন্য হয়ে যায়। তাকে (ইশরাক হোসেনকে) তো এখানে শপথ পড়ানো হয়নি। যারা শপথ পড়াবেন, তারা শপথ পড়াননি। সুতরাং তার শপথ নেওয়ার যৌক্তিকতা আইনগতভাবে রয়ে গেছে।’

ইসির আইনজীবী ইয়াসিন খানের ব্যাখ্যা হচ্ছে, এসব মামলায় (নির্বাচন নিয়ে বিবদমান দুই পক্ষের মামলায়) ইসি নীতিগতভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে না, বা কোনা ভূমিকা পালন করে না। ইসি নিরপেক্ষ থাকে। ইসি নিউট্রাল (নিরপেক্ষ) আম্পায়ার হিসেবে দায়িত্ব পালন করে। হাইকোর্টে রিট মামলাতেও ইসি পক্ষ হয়নি।

আপিল বিভাগের পর্যবেক্ষণ তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘আপিল বিভাগ বলেছেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচনসহ সব নির্বাচন পরিচালনার বিষয়ে নির্বাচন কমিশন সম্পূর্ণ স্বাধীন। ইসি সংবিধানের সীমারেখার মধ্যে কাজ করবে। সাংবিধানিক দায়িত্ব পালন করার ক্ষেত্রে ইসিকে অন্য কারো মুখাপেক্ষী হওয়ার প্রয়োজন ছিল না এবং এখনো তার প্রয়োজন নেই। আদেশে ইসির গেজেট বাতিল ঘোষণা করে কোনো সিদ্ধান্ত দেননি। ফলে গেজেটটা বহাল রয়ে গেছে। এখন পূর্ণাঙ্গ আদেশ পেলে জানা যাবে বাকি আর কি কি পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন সর্বোচ্চ আদালত।’

ইশরাক হোসেনের শপথ নিয়ে এক প্রশ্নে এই আইনজীবী বলেন, ‘শপথের বিষয়ে নির্বাচন কমিশন আর কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারবে বলে আমার মনে হয় না। প্রচলিত আইনে গেজেট প্রকাশের পর স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ই শপথের আয়োজন করে থাকে। এই বিষয়ে আর কিছু করণীয় আছে কিনা তা আদেশটি পাওয়ার পরে বুঝতে পারব। নির্বাচন কমিশনের গেজেট পরিবর্তন করার সুযোগ নেই।’

ইশরাক হোসেনকে মেয়র হিসেবে শপথ না পড়ানোর নির্দেশনা চেয়ে গত ১৪ মে হাইকোর্টে রিট করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. মামুনুর রশিদ। ইশরাক হোসেনকে মেয়র ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশনের জারি করা গেজেটের কার্যকারিতা স্থগিত চাওয়া হয় রিটে। সেই সঙ্গে ইশরাককে মেয়র ঘোষণা করা নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালের বিচারকের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনাও রিটে চাওয়া হয়।

গত ২২ মে রিটটি সরাসরি খারিজ করে দেন বিচারপতি মো. আকরাম হোসেন চৌধুরী ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর হাইকোর্ট বেঞ্চ। আদেশে বলা হয়, রিট আবেদন করার ক্ষেত্রে আবেদনকারীর এখতিয়ার নেই। তাই রিটটি সরাসরি খারিজ করা হলো। ওই দিনই পূর্ণাঙ্গ আদেশটি প্রকাশ পায়। গত ২৬ মে হাইকোর্টের এই আদেশের বিরুদ্ধে লিভটু আপিল করলেন রিট আবেদনকারী। লিভটু আপিলে ইশরাক হোসেনকে মেয়র ঘোষণা করা নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালের রায় ও নির্বাচন কমিশনের গেজেটের কার্যকারিতা স্থগিত চাওয়া হয়। গত ২৭ মে লিভটু আপিলটি বিচারপতি মো. রেজাউল হকের চেম্বার আদালতে শুনানির জন্য ওঠে। কিন্তু চেম্বার বিচারপতি লিভটু আপিলটি আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে পাঠিয়ে দেন। বুধবার তা শুনানির জন্য উঠলে সর্বোচ্চ আদালত ইসির বক্তব্য শুনতে চান। আজ বৃহস্পতিবার ইসির পক্ষে বক্তব্য শোনার পর আদেশ দেন সর্বোচ্চ আদালত।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে