বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ)-এর চেয়ারম্যানের পদটি বর্তমানে শূন্য। সদ্যপ্রয়াত চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আসাদুজ্জামানের মৃত্যুর পর থেকেই এই গুরুত্বপূর্ণ পদটি ঘিরে শুরু হয়েছে জল্পনা-কল্পনা, গুঞ্জন ও তদবিরের তোড়জোড়। কে হবেন পরবর্তী চেয়ারম্যান- এই প্রশ্নে এখন বরেন্দ্রজুড়ে আলোচনার ঝড়।
বিএমডিএর চেয়ারম্যান পদটি প্রতিষ্ঠানের সর্বোচ্চ প্রশাসনিক ও নীতিনির্ধারক পদ। বরেন্দ্র অঞ্চলের পানি ব্যবস্থাপনা, কৃষি উন্নয়ন ও অবকাঠামো পরিকল্পনায় এই পদের গুরুত্ব অপরিসীম। ফলে সংশ্লিষ্ট মহলের দাবি- যোগ্য, দক্ষ ও সুশাসনমনস্ক একজন ক্লিন ইমেজের ব্যক্তিকে যেন এই পদে নিয়োগ দেওয়া হয়।
সূত্র জানায়, বর্তমান পরিচালনা পর্ষদের কয়েকজন সদস্যকে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। বিশেষ করে তিনজনের নাম আলোচনায় উঠে এলেও, একজন সদস্যকে ঘিরেই আলোচনার কেন্দ্র গড়ে উঠেছে। তারা ছাড়াও রাজনৈকিভাবে চলছে তদবির। বিশেষ করে বিএনপি ও জামায়াত নিজের লোক বসাবে সরকারের উচ্চ মহলে তদবির শুরু করেছে।
তবে বিএমডিএর অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারীর মতে, যেহেতু বোর্ড সদস্যরা প্রতিষ্ঠানটির কাঠামো ও কার্যক্রম সম্পর্কে সরাসরি অভিজ্ঞ, তাই সাধারণত তাদের মধ্য থেকেই চেয়ারম্যান নিয়োগের রেওয়াজ রয়েছে। এছাড়া রাজশাহীতে বিএমডিএর প্রধান কার্যালয় হওয়ায়, রাজশাহী বা আশেপাশের জেলার কেউ এ পদে নিয়োগ পেলে দাপ্তরিক কার্যক্রম আরও কার্যকরভাবে পরিচালিত হবে। বিএমডিএর পরিচালনা পর্ষদে কৃষি মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি, কৃষি বিশেষজ্ঞ এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা সদস্য হিসেবে থাকেন।
একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “আমরা এমন কাউকে চাই যিনি শুধু রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত নন, একই সঙ্গে প্রতিষ্ঠানটির ভবিষ্যৎকে সামনে রেখেই সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন।”
তবে চেয়ারম্যান পদ নিয়ে ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে নানা মহলের তদবির ও লবিং। স্থানীয় রাজনৈতিক মহলের একাধিক পক্ষ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে নিজেদের পছন্দের প্রার্থীর নাম প্রস্তাব করে সক্রিয় ভ‚মিকা নিচ্ছেন বলে জানা গেছে।
বিশ্লেষকদের মতে, বরেন্দ্র অঞ্চলের টেকসই উন্নয়নের জন্য বিএমডিএর নেতৃত্বে থাকা ব্যক্তির নৈতিক সততা, প্রশাসনিক দক্ষতা ও জনসম্পৃক্ততাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এসব গুণাবলি না থাকলে প্রকল্প বাস্তবায়নে দুর্নীতি, রাজনৈতিক প্রভাব এবং জনস্বার্থে ব্যর্থতা দেখা দিতে পারে।
উল্লেখ্য, বিএমডিএ ১৯৯২ সালে কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীনে প্রতিষ্ঠিত হয়। এর আগেই, ১৯৮৫ সালে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের (বিএডিসি) অধীনে শুরু হয় বরেন্দ্র সমন্বিত এলাকা উন্নয়ন প্রকল্প, যা ১৯৯০ সালে সফলভাবে সম্পন্ন হয়। সেই সফলতার ধারাবাহিকতায় গঠিত হয় বিএমডিএ, যার মূল লক্ষ্য- বরেন্দ্র অঞ্চলে কৃষি উন্নয়ন, সেচ স¤প্রসারণ, খাল-পুকুর পুনঃখনন, সড়ক নির্মাণ এবং বনায়ন কার্যক্রম পরিচালনা।