‘স্কুলে আমার স্যান্ডেল ছিঁড়ে গিয়েছিল। লজ্জায় কাউকে বলতে পারিনি। বিকেলে হঠাৎ বাবা নতুন একজোড়া স্যান্ডেল নিয়ে বাসায় ফিরলেন। তখনও বুঝিনি, তার নিজের ছেঁড়া জুতোর সঙ্গে বিনিময় করেই কিনেছিলেন আমারটা।’ এই কথাগুলো এক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী মুঠোফোনে বলছিলেন আমাদের প্রতিবেদককে। বাবা দিবস সামনে আসতেই অনেক সন্তানের ভেতরে জমে থাকা কথাগুলো যেন হঠাৎ করেই ভিড় করে আসছে হৃদয়ের গভীরে।
বাংলাদেশে এখনও অধিকাংশ পরিবারেই বাবার ভূমিকা রয়ে গেছে কঠিন ছায়ার মতো-স্নেহের, ত্যাগের, কিন্তু নিঃশব্দ। মাকে ভালোবাসা প্রকাশ করা গেলেও বাবার সামনে এসে সেই তিনটি শব্দ বলতে গিয়ে গলা কেঁপে ওঠে—‘ভালোবাসি বাবা’।
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক বিশেষজ্ঞ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগের শিক্ষক ড. রাশেদা পারভীন বলেন, ‘আমাদের সমাজে আবেগপ্রকাশের চর্চা বেশি মায়ের সঙ্গে গড়ে উঠেছে। বাবাকে ভালোবাসলেও তা বলা হয় না। এতে দুজনের মাঝেই এক ধরনের দূরত্ব তৈরি হয়, যা সম্পর্কের গভীরতাকে আড়াল করে রাখে।”
বাবা দিবসকে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ইতোমধ্যেই অনেক তরুণ-তরুণী নিজেদের অনুভূতি প্রকাশ করছেন। কেউ লিখছেন, "বাবা তোমার মতো মানুষ আমি জীবনে আর দেখিনি", কেউ বলছেন, "তোমাকে কোনোদিন বলিনি—ভালোবাসি, অথচ তোমাকেই সবচেয়ে বেশি ভালোবাসি।"
আন্তর্জাতিকভাবে জুন মাসের তৃতীয় রোববার পালিত হয় বাবা দিবস। বাংলাদেশেও এ উপলক্ষে ছাপা ও অনলাইন গণমাধ্যমে প্রতিবেদন, টেলিভিশনে বিশেষ অনুষ্ঠান এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা ক্যাম্পেইন শুরু হয়।
তবে দিনটি কেবল একটি আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে পরিবারে বাবাদের ভূমিকা নিয়ে গভীরভাবে ভাবার সময় এসেছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।
বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও সমাজচিন্তক অধ্যাপক সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেছিলেন, ‘বাবারা সব সময় দায়িত্বের পাহাড় কাঁধে নিয়ে হাঁটেন, কিন্তু বিনিময়ে খুব কমই পান—একটু ভালোবাসার স্পর্শ, কৃতজ্ঞতার কিছু শব্দ।”
এই বাবা দিবসে হয়তো একজন বাবার দরকার শুধু একটি বাক্য—
‘তোমাকে অনেক ভালোবাসি বাবা।’