ঢাকার বাইরের জেলা বরগুনাকে ডেঙ্গুর ‘হটস্পট’ ঘোষণা করা হয়েছে। ডেঙ্গু মৌসুমের শুরুতে সেখানে আক্রান্তের সংখ্যা ও মৃত্যু বাড়ছে। গতকাল শনিবার পর্যন্ত বরগুনায় ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এবার ঢাকার বাইরেও কোনো কোনো জেলায় ডেঙ্গুর ভয়াবহতা বাড়তে পারে।
এদিকে ডেঙ্গুর পিক সিজন কখনো আগস্টে, কখনো সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে হয়ে আসছে। এই তিন মাসের কোনো না কোনো মাসে দেশে ডেঙ্গুর ভয়াবহতা বৃদ্ধি পায়। এটি নির্ভর করে মশার বংশবিস্তারে সহায়ক আবহাওয়া অর্থাৎ বৃষ্টিপাতের ওপর। তবে বছরের কোন মাসে ভয়াবহতা বাড়বে, তা সুনির্দিষ্ট করে বলা মুশকিল।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডেঙ্গুর ভয়াবহতা রোধে মশা নির্মূলের বিকল্প নেই। তবে সেই কাজে এবার কিছুটা বিঘ্ন ঘটছে ঢাকার দুই সিটিতে জনপ্রতিনিধি না থাকায়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ২০২১ সালের জুলাইয়ে ডেঙ্গু রোগী বাড়া শুরু করে, আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে বেড়ে অক্টোবরে কমতে শুরু করে। ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে বাড়তে শুরু করে, অক্টোবর ছিল পিক সিজন, নভেম্বরে কমতে শুরু করে। ২০২৩ সালের জুলাই থেকে বাড়তে শুরু করে আগস্ট-সেপ্টেম্বরে বেড়ে অক্টোবরে গিয়ে কমতে শুরু করে। পিক সিজন ছিল আগস্ট-সেপ্টেম্বর। ২০২৪ সালের আগস্টে বাড়তে শুরু করে, সেপ্টেম্বর-অক্টোবর পর্যন্ত বেড়ে নভেম্বরে কমতে শুরু করে।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ‘এবার ভয়াবহভাবে ডেঙ্গু বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। পিক সিজন আগস্ট-সেপ্টেম্বরে হতে পারে। এখনই ভয়াবহতা রোধে উদ্যোগ নিতে হবে। বড় পরিসরে সবাইকে সম্পৃক্ত করে পরিচ্ছন্নতা অভিযান চালিয়ে মশার উৎপত্তিস্থল ধ্বংস করে দিতে হবে।’
প্রখ্যাত মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ও ইমেরিটাস অধ্যাপক এ বি এম আব্দুল্লাহ বলেন, এখন ডেঙ্গুর ধরন বদলেছে। কখন যে এর প্রকোপ বাড়বে তা বলাই মুশকিল। শীত মৌসুমেও এখন ডেঙ্গু হচ্ছে। সারা বছর যখনই জ্বর হোক, অবহেলা না করে ডাক্তারের কাছে গিয়ে পরীক্ষা করিয়ে নিশ্চিত হতে হবে।
কীটতত্ত্ববিদ ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কবিরুল বাশার বলেন, ‘এ বছর ঢাকার বাইরেও কোনো কোনো জেলায় ভয়াবহতা দেখা দিতে পারে। ইতোমধ্যে বরগুনায় বৃদ্ধির চিত্র আমরা দেখতে পাচ্ছি।’
এদিকে রাজধানীর মিরপুর, মোহাম্মদপুর, পুরান ঢাকা, বাসাবো, রামপুরা, যাত্রাবাড়ীসহ বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা জানান, মশার উৎপাত আগের তুলনায় এখন বেড়েছে। কিছু এলাকায় দিনে-দুপুরে মশার কামড়ে অতিষ্ঠ হয়ে পড়ছেন তারা। অনেকে অভিযোগ করেন, ওষুধ ছিটালেও তার কার্যকারিতা কম।
দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. নিশাত পারভীন বলেন, ‘জনপ্রতিনিধি না থাকায় আমাদের কিছু সমস্যা তো রয়েছেই। লোকবলের কিছু ঘাটতি রয়েছে। মশা একেবারে নিধন করা সম্ভব নয়। তবে যেখানে মশা বেশি হচ্ছে, সেসব স্থান ও এলাকা চিহ্নিত করে পদক্ষেপ নিচ্ছি। যে ওয়ার্ডগুলোতে (যাত্রাবাড়ী, পুরান ঢাকা, শ্যামপুর) ডোবা-নালা বেশি, পানি বহমান নয়, বরং জমে থাকে সেসব স্থানে প্রতিদিন তৎপরতা চালাচ্ছি।’
তিনি জানান, ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে প্রায় ১ হাজার ১০০ জন মশক নিধন কর্মী সকাল-বিকেল শিফট করে কাজ করে যাচ্ছেন। আরও কিছু নিয়োগ দেওয়া হতে পারে। তবে শুধু মশক নিধন কর্মী দিয়ে মশা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। এ জন্য জনসচেতনতা সৃষ্টিরও প্রয়োজন রয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইমরুল কায়েস চৌধুরী বলেন, ‘জনপ্রতিনিধি থাকলে আমাদের জন্য সুবিধা, এখন না থাকায় কিছুটা অসুবিধা হচ্ছে। তার পরও আমরা চেষ্টা করছি এসব সমস্যা কাটিয়ে ওঠার। এখন প্রায় ১১ মশক নিধন কর্মী মাঠপর্যায়ে কাজে নিয়োজিত। কর্মীদের দিয়ে প্রতিদিন মশার উৎপাদন স্থান চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, চলতি বছরে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন মোট ৫ হাজার ৭৩৯ জন। মৃত্যু হয়েছে ২৯ জনের। এর মধ্যে জানুয়ারিতে ১০ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৩, এপ্রিলে ৭, মে মাসে ৩ ও জুনে ৬ জন।