শুক্রবার, ২০ জুন ২০২৫, ৬ আষাঢ় ১৪৩২

ইরানি চায়ের বিশেষত্ব কী, কোনো বিশ্বজুড়ে এত জনপ্রিয়?

যাযাদি ডেস্ক
  ২০ জুন ২০২৫, ১২:০০
আপডেট  : ২০ জুন ২০২৫, ১২:০৫
ইরানি চায়ের বিশেষত্ব কী, কোনো বিশ্বজুড়ে এত জনপ্রিয়?
ইরানি চা একটি বিশেষ নাম, যার ঘ্রাণ, স্বাদ আর পরিবেশনের রীতি একে অন্যদের থেকে আলাদা করে তোলে

চা শুধু একটি পানীয় নয়, এটি একটি সংস্কৃতি, অভ্যর্থনা, আর আতিথেয়তার প্রতীক। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে চায়ের ভিন্ন ভিন্ন রীতি ও স্বাদ রয়েছে।

এর মধ্যে ইরানি চা একটি বিশেষ নাম, যার ঘ্রাণ, স্বাদ আর পরিবেশনের রীতি একে অন্যদের থেকে আলাদা করে তোলে।

ইরানে চা একটি দৈনন্দিন অভ্যাসের চেয়ে বেশি কিছু। এটি পারিবারিক বন্ধন, অতিথি আপ্যায়ন, আরাম ও আন্তরিকতার প্রতিচ্ছবি।

এই প্রতিবেদনে জানানো হলো, ইরানি চায়ের বিশেষত্ব, তার প্রস্তুত প্রণালী, পরিবেশন রীতি এবং কেন এটি এত জনপ্রিয়।

ইরানি চায়ের মূল বৈশিষ্ট্য

১. গাঢ় রঙ ও হালকা স্বাদ: ইরানি চা সাধারণত লালচে ও গাঢ় রঙের হয়, তবে স্বাদে হালকা ও কোমল। এটি চায়ের পাতার নিখুঁত পরিমাণ, ধীর প্রক্রিয়ায় ফোটানো ও ‘ড্যাম’ (steaming) করার কৌশলের ফল।

২. দুই স্তর বিশিষ্ট প্রস্তুতি:

ইরানি চা সাধারণত দুইটি পাত্রে তৈরি হয়—একটিতে গরম পানি, আরেকটিতে চায়ের পাতা। পাতার পাত্রটি বড় পাত্রের মুখে বসিয়ে ‘ড্যাম’ দেওয়া হয়, যাতে চায়ের পাতা ধীরে ধীরে ফোটে ও গন্ধ ছড়ায়। এই ধীরপ্রক্রিয়ায় তৈরি চায়ের স্বাদ হয় গভীর, কিন্তু কখনও তিতা নয়।

৩. মিষ্টি না করে আলাদাভাবে চিনির ব্যবহার: ইরানিরা সাধারণত চায়ে চিনি মিশিয়ে খায় না। তারা চা পান করার সময় মুখে চিনির টুকরো বা কান্দ (rock candy) রেখে চা চুমুক দেন। এতে চায়ের মূল স্বাদ বজায় থাকে এবং সঙ্গে মিষ্টির হালকা ছোঁয়াও মেলে।

ইরানি চায়ের বিশেষ উপকরণ চায়ের পাতা: অধিকাংশ ক্ষেত্রে কালো চা ব্যবহার হয়, যা দার্জিলিং বা আসামের চা থেকেও ভিন্ন, কারণ এটি দীর্ঘ সময় ‘steep’ করার জন্য উপযুক্ত।

কার্ডামম, গোলাপ পাপড়ি বা জাফরান: কখনো কখনো স্বাদ ও সুবাস বাড়াতে সামান্য পরিমাণ এই উপকরণগুলো ব্যবহার করা হয়। তবে এটি বাধ্যতামূলক নয়।

চিনি বা কান্দ: মুখে দিয়ে চুমুক দিয়ে চা খাওয়ার এই উপায়ই ইরানিদের চা সংস্কৃতিকে ভিন্ন করে তোলে।

পরিবেশনের অনন্যতা ইরানে চা পরিবেশন একটি রীতিমাফিক ব্যাপার। সাধারণত ছোট কাচের গ্লাসে চা পরিবেশন করা হয়, যাতে চায়ের গাঢ় রঙ দেখা যায়। চায়ের সঙ্গে দেওয়া হয় ছোট প্লেট, চিনি বা কান্দ, আর কখনো কখনো শুকনা ফল। অতিথি এলে প্রথমেই চা দেওয়া হয়, আর এটি ইরানিদের আতিথেয়তার অন্যতম চিহ্ন।

ইরানি চা ও সামাজিকতা ইরানে চায়ের সঙ্গে সময় কাটানো একটি ঐতিহ্য। বন্ধুবান্ধব বা পরিবারের সদস্যরা বসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা গল্প করেন, আর চলতে থাকে একের পর এক কাপ চা। এটি শুধু পানীয় নয়, বরং সম্পর্ক গড়ে তোলার এক শক্তিশালী মাধ্যম।

বিশ্বজুড়ে ইরানি চায়ের জনপ্রিয়তা ইরানি চায়ের অনন্য স্বাদ ও পরিবেশনের রীতির জন্য এখন এটি শুধু ইরানেই নয়, ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য ও দক্ষিণ এশিয়ার অনেক দেশেও জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। ঢাকায়ও কিছু ক্যাফে ও রেস্টুরেন্টে ইরানি চা পরিবেশন শুরু হয়েছে।

ইরানি চা কোনো সাধারণ চা নয়—এটি সময়, ধৈর্য, কৌশল এবং সংস্কৃতির সম্মিলন। চায়ের কাপে ইরানের আতিথেয়তা, সৌন্দর্য ও ধীরস্থির জীবনের একটি প্রতিচ্ছবি মেলে। যদি আপনি এখনো ইরানি চায়ের স্বাদ না নিয়ে থাকেন, তবে একবার চেষ্টা করেই দেখুন—এক কাপ চা আপনাকে নিয়ে যাবে এক ভিন্ন অভিজ্ঞতার জগতে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে