বৃহস্পতিবার, ২৯ মে ২০২৫, ১৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

রূপের জাদুতে ভরা এই শহর

যাযাদি ডেস্ক
  ২৭ মে ২০২৫, ১৯:৫০
রূপের জাদুতে ভরা এই শহর
ছবি: সংগৃহীত

ইতিহাস, সংস্কৃতি আর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপূর্ব মিশেলে গঠিত ভিয়েতনামের ঐতিহ্যবাহী শহরগুলো আজও ভ্রমণপিপাসুদের মোহিত করে তুলছে। বিশেষ করে হোই আন ও হোয়ান কিয়েম এলাকার চিত্র যেন এক জীবন্ত শিল্পকর্ম।

হোই আন, যেটি ইউনেস্কো ঘোষিত বিশ্ব ঐতিহ্য স্থান, তার প্রাচীন লণ্ঠন-আলোকিত রাস্তাগুলো ও বর্ণিল কাঠের স্থাপত্য ভিয়েতনামের অতীত ঐশ্বর্যকে ধারণ করে আছে। ১৬শ থেকে ১৯শ শতাব্দী পর্যন্ত এ শহর ছিল একটি সমৃদ্ধ বন্দর নগরী। এখানকার চীনা, জাপানি এবং ইউরোপীয় স্থাপত্যরীতির মিশ্রণ পর্যটকদের বিস্মিত করে তোলে।

1

অন্যদিকে রাজধানী হ্যানয়ের হোয়ান কিয়েম লেক এলাকা যেন শহুরে কোলাহলের মাঝে এক শান্তির আশ্রয়। এখানকার ঐতিহাসিক মন্দির, সাইক্লো ট্যুর এবং লোকজ সংস্কৃতি স্থানীয় জীবনধারার সঙ্গে পর্যটকদের একাত্ম করে।

পর্যটন কর্তৃপক্ষের মতে, “এই শহরগুলো শুধু প্রাকৃতিক নয়, সাংস্কৃতিক সৌন্দর্যেও সমৃদ্ধ। এখানে আসলে ভিয়েতনামের আত্মা অনুভব করা যায়।”

বছর জুড়ে লক্ষ লক্ষ পর্যটক এই শহরগুলোর মাধুর্য উপভোগ করতে ছুটে আসেন। স্থানীয়দের আতিথেয়তা, ঐতিহ্যবাহী খাবার এবং শিল্পকলার সমন্বয় এ অভিজ্ঞতাকে আরও হৃদয়গ্রাহী করে তোলে।

ভিয়েতনামের প্রাচীন শহরগুলো যেন ইতিহাসের পাতায় আঁকা এক একটি জীবন্ত ক্যানভাস। বিশেষ করে ইউনেস্কো স্বীকৃত হোই আন ও রাজধানী হ্যানয়ের হোয়ান কিয়েম এলাকা যেন ভ্রমণপিপাসুদের জন্য এক স্বপ্নপুরী। এখানকার স্থাপত্য, লোকজ সংস্কৃতি, লণ্ঠন-আলোকিত গলি, ঐতিহ্যবাহী খাবার আর মানুষের আন্তরিকতা মিলে গড়ে উঠেছে এক অনন্য অভিজ্ঞতা।

হোই আন: রঙিন লণ্ঠনের শহর

ভিয়েতনামের মধ্যাঞ্চলের এই ছোট শহরটি বিখ্যাত তার ঐতিহাসিক জাপানি কাঠের সেতু, চীনা মন্দির, ফরাসি কলোনিয়াল বাড়ি এবং প্রাচীন বন্দর এলাকায় ছড়িয়ে থাকা শত শত বছরের পুরোনো ভবনের জন্য। সন্ধ্যা নামলেই শহরটি যেন রূপকথার এক শহরে রূপ নেয় – বাতাসে ভেসে বেড়ায় হালকা ধূপের গন্ধ, আর টানানো থাকে শত শত রঙিন লণ্ঠন।

সপ্তাহে একাধিক দিন এখানে গাড়ি চলাচল বন্ধ রাখা হয়, ফলে পর্যটকরা পায়ে হেঁটেই ঘুরে দেখতে পারেন এই শহরের অলিগলি। হোই আন-এ রয়েছে অসংখ্য হস্তশিল্পের দোকান, সিল্কের পোষাক তৈরির স্টুডিও এবং ঐতিহ্যবাহী খাবারের স্টল।

হোয়ান কিয়েম লেক: হ্যানয়ের প্রাণকেন্দ্র

রাজধানী হ্যানয়ের প্রাণ হোয়ান কিয়েম লেক এলাকা – ইতিহাস, প্রকৃতি এবং আধুনিকতার এক অপূর্ব সংমিশ্রণ। প্রাচীন এনগোক সন মন্দির, হোয়ান কিয়েম ব্রিজ ও শহরের কিংবদন্তি 'তরোয়ালের লেক' ঘিরে ছড়িয়ে রয়েছে অসংখ্য কাহিনি ও সংস্কৃতি।

সকালে এখানে স্থানীয়রা তায় চি অনুশীলন করেন, আর রাতে জমে ওঠে রাস্তার পাশে বসা ছাতা ঢাকা চা-স্টলগুলো। লেকের চারপাশে ছড়িয়ে থাকা বুক স্টল, আর্ট গ্যালারি ও সঙ্গীত পরিবেশনা জায়গাটিকে করে তুলেছে সাংস্কৃতিক প্রাণকেন্দ্র। ঐতিহ্যবাহী খাবার ও আতিথেয়তা

ভিয়েতনামের ঐতিহ্যবাহী খাবার যেমন 'ফো' (গরুর মাংসের সুপ), 'বান মি' (স্যান্ডউইচ), আর 'কাও লাউ' হোই আন-এর স্পেশাল নুডল – সবকিছুতেই রয়েছে এক ভিন্নস্বাদ। রান্নায় ব্যবহৃত তাজা উপকরণ আর রাস্তাঘাটের পাশে বসা ছোট দোকানের পরিবেশ পর্যটকদের মনে গেঁথে থাকে।

পর্যটনের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ

সরকারি পর্যটন পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৪ সালে ভিয়েতনামে আন্তর্জাতিক পর্যটকের সংখ্যা ছিল ১২ মিলিয়নেরও বেশি। এর বড় একটি অংশই আসে হোই আন ও হ্যানয়ের ঐতিহ্যবাহী শহরগুলো দেখতে। সংস্কৃতি, প্রকৃতি আর ঐতিহ্যের এমন মেলবন্ধন একে দিয়েছে বিশ্ব পর্যটনের মানচিত্রে এক বিশেষ স্থান।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে