সাধারণত আশ্বিন মাসে শীতের একটা আমেজ পাওয়া যায়। এই সময় ভোরবেলা বাইরে হালকা শীতল হাওয়া বইতে দেখা যায়। খনার বচনে আছে ‘আশ্বিন গা করে শিন শিন।’ অর্থাৎ আশ্বিন মাসে শীতের একটু আভা চলে আসে। বাংলা পঞ্জিকা মতে আশ্বিনের প্রথম সপ্তাহ পার হচ্ছে, অথচ এখনো সকালে ভাদ্র মাসের তালপাকা রোদ, দুপুর-সন্ধ্যা রাতে ভারি বৃষ্টি ও মধ্যরাতে ভ্যাপসা গরম অনুভূত হচ্ছে।
আশ্বিন মাসও। অথচ প্রকৃতিতে নেই শীতের আমেজ। সকালে দুর্বাঘাসে চিকচিক করা সোনালি শিশির বিন্দুর দেখা মিলেনি এখনো। উপরন্তু আশ্বিনেও বর্ষার বজ্রধ্বনি হয় প্রকৃতিতে। আর বর্ষাকাল যেন শেষ হয়েও হলো না শেষ। আকাশ খানিকটা মেঘাচ্ছন্ন থাকলেও বৈরী প্রকৃতিতে ভ্যাপসা গরমে স্বস্তি নেই জনজীবনে। আশ্বিনের রাতেও শরীর ঘাম ঝরচ্ছে।
শহরে এসি বা ফ্যান চালিয়ে ঘুমাতে হয়। এরপর দুপুর ও সন্ধ্যা রাতের এক পশলা ভারি বৃষ্টি ও মেঘের গর্জন যেন অসময়ের বর্ষা। বিকালের সময়টায় নীল আকাশে সাদা মেঘের ভেলা বলে দিচ্ছে শরৎ এখনো যায়নি। গোধূলি বেলায় ছাতিম ফুলের ম ম গন্ধ আর শিউলির মৃদুমন্দ সৌরভ, হিমেলের ছোঁয়া নেই প্রকৃতিতে। সকাল-সন্ধ্যায় হেমন্তের মিহি কুয়াশারও দেখা নেই। ‘অসময়ের বৃষ্টি ও তাপপ্রবাহ বইছে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে।
তারপরও গেল ২৪ ঘণ্টায় দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল কুমিল্লায় ৩৪ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস, রাজধানী ঢাকায় তাপমাত্র ছিলো ৩২ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস, খুলনায় ৩৩ দশমিক ০ ডিগ্রি সেলসিয়াস, রংপুরে ছিল ৩৩ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস, সিলেটে ৩২ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং চট্টগ্রামে তাপমাত্রা ছিল ৩৩ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দেশের কোথাও নেই স্বস্তির আবহাওয়া। বৃষ্টিতে যেন গরমের তেজ উসকে উঠছে। তাছাড়া হঠাৎ ও ক্ষণস্থায়ী বর্ষণের পরই অসহনীয় ভ্যাপসা গরম আবারও ফিরে আসছে। রাতে ঘুমালে কাঁথা-কম্বল টেনে শরীরটাকে ঢেকে দেওয়ার প্রয়োজন পড়ছে না। রাজধানী ঢাকায় এখনো ফ্যানের বাতাসের গুরুত্ব কমে যায়নি।
আবহাওয়াদি সহিদুল ইসলাম বলেন, সারা দেশেই দিনের তাপমাত্রা কমে আসবে। আগামী সপ্তাহেই মৌসুমি বায়ুর প্রভাব কমে গিয়ে বাতাস বইতে পারে উত্তর দিক থেকে। এ বাতাসই হিমালয় পাড়ি দিয়ে শীত নিয়ে আসবে সুদূর সাইবেরিয়া থেকে। এ সময় প্রকৃতিতে চলে বর্ষার বিদায় আর শীতের আগমনের প্রস্তুতি। প্রকৃতিতে শীত আসে একটু একটু করে। অনেকেই বলছেন, কয়েক দিনের বৃষ্টির পর আবহাওয়া শীতল হতে পারে। শীতল বাতাস শীতের আগমনী বার্তা নিয়ে আসতে পারে। গোধূলি বেলায় ছাতিম তলায় ফুলের ম ম গন্ধ জানান দিচ্ছে শীতের পূর্বাভাস।
এ বিষয়ে ডক্টর ইকবাল কবীর জানান, অসময়ের বৃষ্টিতে গরমের দাপট কাটছেই না। বরং বৃষ্টিতে ডেঙ্গু রোগের বাহক এডিস মশার প্রজনন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে ডেঙ্গু। অসময়ের বৃষ্টি প্রকৃতি, পরিবেশ ও কৃষির জন্য ক্ষতিকর। বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে আলু নষ্ট হবে, গমের গাছ হেলে পড়বে। শীতকালীন সবজির আবাদ পিছিয়ে যাবে। তিনি বলেন, ভোর থেকে সূর্যের মিষ্টি রোদে রাঙিয়ে দেয় বৃষ্টিস্নাত পরিবেশ। আর বুধবার ভোরে মেঘের চাদরে ঢেকে যায় আকাশ। এতে প্রকৃতিতে কিছুটা শীতের আমেজ লক্ষ্য করা গেছে। এ যেন শীতের আগমনী বার্তা।
ষড়ঋতুর দেশ বাংলাদেশ। গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরৎ, হেমন্ত, শীতও বসন্ত। এ ছয় ঋতুর আবর্তন বাংলাদেশকে বৈচিত্র্যময় করে তোলে । প্রত্যেকটি ঋতুরই রয়েছে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য। এক এক ঋতু আমাদের জীবনে আসে এক এক রকম ফুল, ফল আর ফসলের সম্ভার নিয়ে। গ্রীষ্মের দাবদহ, বর্ষার সজল মেঘ-বৃষ্টি, শরতের আলোঝলমলে স্নিগ্ধ আকাশ হেমন্তের ফসলভরা মাঠ, শীতের শিশিরভেজা সকাল আর বসন্তের পুষ্প সৌরভ বাংলার প্রকৃতি ও জীবনে আনে বৈচিত্র্যেময় ছোঁয়া। ঋতুচক্রের আবর্তনে প্রকৃতির এ সাজবদল বাংলাদেশকে রূপের রানীতে পরিণত করে। আমনচাষ পুরোপুরি বৃষ্টিনির্ভর। শীতকালে শাক-সবজিতে ভরে ওঠে সারা দেশ।
কৃষিপ্রধান এ দেশে আবহাওয়া বদলের ফলে দেখা দিচ্ছে নানা সমস্যা। চলতি মৌসুমে বৃষ্টির অভাবে আমন রোপণ বিলম্ব হয়। পাট জাগ দিনে পারেননি কৃষক। বর্তমানে মূলত গ্রীষ্ম, বর্ষা ও শীত এ তিন ঋতু টের পাওয়া যায়।
আবহাওয়াবিদ এমএ জলিল বলেন, সম্প্রতি অন্যান্য বছরের মতো নভেম্বরে শীতের দেখা মিলতে পারে। শীতের ছোঁয়া পাওয়া যাবে উত্তরবঙ্গে। রাজশাহী, রংপুরসহ এর আশপাশের এলাকায় নভেম্বর মাসের শুরুতে কুয়াশাসহ শীত শীত অনুভূত হতে পারে। তবে শহরে শীত একটু দেরি করে আসতে পারে। মৌসুমি বায়ুপ্রবাহ বিদায় নিয়ে শীতের আমেজ শুরু হবে। প্রকৃতি সাজবে নতুন সাজে।
যাযাদি/ এস