প্রযুক্তি জায়ান্ট অ্যামাজন-এর সিইও অ্যান্ডি জ্যাসি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআইকে আলিঙ্গনের সঙ্গে সঙ্গে এ প্রযুক্তির কারণে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে কর্পোরেট কর্মীর সংখ্যা কমে যাবে বলে সতর্ক করেছেন। সম্প্রতি তিনি কর্মীদের উদ্দেশ্যে এই ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন, যেখানে জ্যাসি কর্মীদের ‘এআই নিয়ে আগ্রহী হতেও’ উৎসাহিত করেছেন বলে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন।
গোটা বিশ্বে দ্রুত চাকরি হারানোর আশঙ্কার মধ্যে সর্বশেষ প্রতিষ্ঠান হিসেবে নিজেদের এআই ব্যবহারের পরিকল্পনা প্রকাশ করল প্রযুক্তি জায়ান্ট অ্যামাজন।
জ্যাসি বলেছেন, কাজের ‘দক্ষতা বাড়াতে’ সহায়তা করবে এআই, যার ফলে কোম্পানির পক্ষে তাদের কর্পোরেট কর্মীর সংখ্যা কমিয়ে আনা সম্ভব হবে।
তিনি লিখেছেন, ‘আজ কর্মীরা যেসব কাজ করছে, সেখানে অনেকগুলোর জন্যই ভবিষ্যতে কম কর্মীর প্রয়োজন হবে এবং আমাদের অন্য ধরনের কাজে আরও বেশি মানুষের প্রয়োজন পড়বে।’
জ্যাসি আরও বলেন, ‘সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এর সঠিক প্রভাব কী হবে তা বলা কঠিন। তবে আমরা ধারণা করছি, আগামী কয়েক বছরের মধ্যে কোম্পানির বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যাপকহারে এআই ব্যবহারের মাধ্যমে দক্ষতা বৃদ্ধি পাওয়ায় আমাদের মোট কর্পোরেট কর্মীর সংখ্যা কমে যাবে।’
গত কয়েক বছরে বিশেষ করে প্রযুক্তি খাতে বিভিন্ন কোম্পানি এআইতে ব্যাপকহারে বিনিয়োগ করছে। কারণ, প্রযুক্তিগত অগ্রগতির ফলে এখন আগের চেয়ে অনেক সহজে চ্যাটবটের মাধ্যমে কম নির্দেশনাতেই কোড, ছবি ও লেখার মতো জিনিস তৈরি করা সম্ভব হচ্ছে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে রয়টার্স।
নতুন এসব এআই টুলের জনপ্রিয়তা বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কিছু প্রযুক্তি প্রধান সতর্ক করে বলেছেন, এসবের ফলে চাকরি হারানোর ঝুঁকি তৈরি হয়েছে, বিশেষ করে অফিসভিত্তিক বা এন্ট্রি-লেভেলের বিভিন্ন চাকরির বেলায়।
গত মাসে এআই স্টার্টআপ ‘অ্যানথ্রোপিক’-এর প্রধান নির্বাহী দারিও আমোডেই সংবাদ ওয়েবসাইট অ্যাক্সিওসকে বলেছেন, এআইয়ের কারণে অফিসের সাধারণ বা প্রাথমিক স্তরের অনেক চাকরি, এমনকি এই স্তরের অর্ধেক চাকরি হারিয়ে যেতে পারে।
সম্প্রতি এক পডকাস্টে এআই নিয়ে সতর্কতা পুনরায় ব্যক্ত করেছেন ‘এআই গডফাদার’ জেফ্রি হিন্টন। মার্কিন সার্চ জায়ান্ট গুগলে বহুবছর কাজ করেছেন তিনি।
AI জেনারেটেড পাখী
এআইয়ের কারণে অনেক মানুষ চাকরি হারালেও এই প্রযুক্তি নতুন ধরনের কাজ তৈরি করবে এমন যুক্তির বিরুদ্ধে মত প্রকাশ করে হিন্টন বলেছেন, ‘এটি একেবারে ভিন্ন ধরনের প্রযুক্তি। এআই যদি সব সাধারণ মানুষের মতো বুদ্ধিবৃত্তিক কাজ করতে পারে তবে এটা নতুন কী ধরনের চাকরি তৈরি করবে? কারণ যে কাজটি এআই করতে পারবে না সেই কাজটিই করার সুযোগ থাকবে আপনার।’
তবে এর মধ্যে অনেক কর্মী অ্যামাজনের ই-কমার্স গুদামে কাজ করেন এবং কোম্পানিটির প্রায় সাড়ে তিন লাখ কর্মী অফিসভিত্তিক বিভিন্ন পদে কাজ করেন বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিবিসি।
মেমোতে জ্যাসি বলেছেন, ‘প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই’ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই ব্যবহার করছে অ্যামাজন। তিনি আশা করছেন, ভবিষ্যতে রুটিন কাজ যেমন কেনাকাটা ও প্রতিদিনের ঘরের কাজও করতে পারবে এই প্রযুক্তি।
তার ভাষ্যে, ‘এসব এজেন্টের অনেকটাই এখনও তৈরি করা সম্ভব হয়নি। তবে এগুলো আসবে না ভেবে ভুল করবেন না। কারণ, এগুলো আসছে, আর খুব দ্রুতই আসছে।’
তিনি আরও বলেছেন, ‘যারা এসব পরিবর্তনকে আলিঙ্গন করবে, তারা কোম্পানিতে ‘ভালো অবস্থানে’ থাকবেন।’