আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম সৎ, আদর্শ ও নীতিবান রাজনীতিবিদ। যিনি লোভ লালসার ঊর্ধ্বে উঠে তিনি নীতি-নৈতিকতার সঙ্গে মানুষের কল্যাণে সারাজীবন কাজ করেছেন। নিজের ওপরে অর্পিত দায়িত্ব সততার সঙ্গে পালন করেছেন। তার মধ্যে কোনো অহংকারবোধ কেউ কখনো দেখেননি। তার মতো বন্ধুবৎসল ও অতিথিপরায়ণ মানুষ আমাদের সমাজে বিরল। জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে তিনি সবসময় থেকেছেন সামনের কাতারে।
বিসিএস পাস করে সিভিল প্রশাসনে যোগদান করেন। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর প্রটোকল অফিসার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। এরপর ২০০১ সাল থেকে বিরোধী দলীয় নেতার এপিএস হিসেবে যোগদান করেন। নৈতিক কারণে ২০০৮ সালে সরকারের উপসচিব পদ থেকে পদত্যাগ করেন। নৈতিক কারণে পদত্যাগের ঘটনা এ দেশে কখনও দেখা যায়নি। স্বাধীনচেতা, স্পষ্টভাষী, অটুট মনোবল এবং ঈর্ষণীয় ব্যক্তিত্বের কারণে তিনি সবার কাছে অত্যন্ত শ্রদ্ধেয় ব্যক্তি।
আলাউদ্দিন নাসিম চাকরি থেকে পদত্যাগের পর ব্যবসায়ী হিসেবে তার নতুন কর্মজীবন শুরু করেন এবং গত ১৬ বছর নিয়মিত কর প্রদান এবং নিয়মিত সব হিসাব-নিকাশ দাখিল করেছেন। একজন ব্যবসায়ী হিসেবে তার অর্জিত সম্পদ প্রদর্শন করেন। যা হলফনামায়ও দাখিল করেছেন। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলেও ২০২৪ সালের আগে আলাউদ্দিন নাসিম গত ১৬ বছর সরকার বা দলের কোনো পর্যায়ের কোনো অবস্থানে ছিলেন না, যা থেকে অনিয়ম বা দুর্নীতি করার সুযোগ আছে। চাকরি থেকে পদত্যাগের পর তিনি অনেকটা নিভৃত জীবনযাপন করেছেন এবং নিজের কাজ করেছেন।
আলাউদ্দিন নাসিমের পরিবার এ দেশে অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সফল পৃষ্ঠপোষক পাকিস্তান ও ব্রিটিশ আমল থেকে। ঢাকার হাবিবুল্লাহ বাহার কলেজ তাদের পরিবারের করা। ফেনীতে পারিবারিক অর্থায়নে বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ, হাসপাতাল, স্কুল ও মাদ্রাসা স্থাপন করেছেন। ফেনীসহ দেশের শিক্ষা বিস্তারে তার পরিবারের যথেষ্ট অবদান রয়েছে।
স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা আলাউদ্দিন নাসিমের অন্যতম গুণ। ব্যক্তি জীবনে কখনও দুর্নীতি করেননি। রাজনৈতিক ও চাকরি জীবনে কখনও দুর্নীতির সঙ্গে আপোষ করেননি। কখনও কারো কাছ থেকে কোনো অনৈতিক সুবিধা নেননি। তারপরেও ওয়ান ইলেভেনের সময়ে তার বিরুদ্ধে দুদক একটি মামলা করে। জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের মামলা হলেও তদন্তে এর সত্যতা পায়নি দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ২০১১ সালের ১৪ ডিসেম্বর মামলার তদন্তে অব্যাহতি পান সরকারের সাবেক উপসচিব আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী ও তার স্ত্রী ডা. জাহানারা আরজু।
আলাউদ্দিন নাসিমের বাবা একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। তার পরিবারে স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত শহিদ মুক্তিযোদ্ধাসহ একাধিক শহিদ মুক্তিযোদ্ধা এবং ১০ জনেরও অধিক বীর মুক্তিযোদ্ধা রয়েছেন। স্বাধীনতাযুদ্ধের পুরো সময় তার পরিবারের সদস্যরা ত্রিপুরার বিলোনিয়া মহকুমার মতাই থানার কৃষ্ণপুর কলোনিতে মানবেতর জীবনযাপন করেছেন।
আলাউদ্দিন নাসিম ছাত্রজীবনে চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের সদস্য ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি (১৯৮৪-৮৬) ও ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ছিলেন। সাবেক ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগ নেতা হওয়ায় আলাউদ্দিন নাসিম ফেনীর সর্বজন শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিত্ব। গণমানুষের নেতা হিসেবে দলমত নির্বিশেষে সবাই তাকে সম্মান করতেন। তিনি কখনও রাজনীতিতে গডফাদার ছিলেন না। তিনি আজীবন গণমানুষের কল্যাণে কাজ করেছেন।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফেনী-১ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন আলাউদ্দিন আহম্মদ চৌধুরী নাসিম। ৬ মাস এমপি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এই সময়ে তিনি ফেনী-১ আসনের উন্নয়নে যথেষ্ট অবদান রাখেন। এ সময় ফেনীর দুঃখ হিসেবে আলোচিত মুহুরী-কহুয়া-সিলোনীয়া নদী বন্যা নিয়ন্ত্রণ টেকসই বাঁধ বাস্তবায়নের আশ্বাস দেন। ফেনী-বিলোনিয়া রেললাইন পুনরায় চালু করার উদ্যোগ নেন। বীর মুক্তিযোদ্ধারা ফেনীর বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, রাস্তা, পুল কালভার্টসহ বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর ও উদ্বোধন করবেন এমন নির্দেশনা দেন।
আলাউদ্দিন আহম্মদ চৌধুরী নাসিমের মতো সৎ ও নিষ্ঠাবান রাজনীতিক এ দেশে বিরল। রাজনীতিবিদদের জন্য তিনি অনুকরণীয় হয়ে থাকবেন আজীবন।
যাযাদি/ এসএম