শনিবার, ১০ মে ২০২৫, ২৬ বৈশাখ ১৪৩২

হলফনামায় আলাউদ্দিন নাসিমের ‘শত কোটি টাকার বাড়ির’ তদন্তে দুদক

বিশেষ সংবাদদাতা
  ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৯:৩৭
হলফনামায় আলাউদ্দিন নাসিমের ‘শত কোটি টাকার বাড়ির’ তদন্তে দুদক
ফাইল ছবি

ঢাকার গুলশানে শত কোটি টাকার বাড়ির তথ্য নির্বাচনি হলফনামায় গোপন করেছেন ফেনী-১ আসনের সাবেক এমপি আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম। ওই বাড়িটির তথ্য নির্বাচনি হলফনামায় উল্লেখ করেননি। অবশেষে তার হলফনামা দেখে এসব সম্পদের তদন্তে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আলাউদ্দিন চৌধুরী নাসিম শেখ হাসিনার প্রটোকল অফিসার ছিলেন। ২০০৯ সালের পর আওয়ামী রাজনীতিতে উল্লেখযোগ্য কোনও পদপদবি না থাকার পরও প্রশাসনে বদলি, পদায়ন থেকে শুরু বিনা টেন্ডারে কাজ পাইয়ে দেওয়া, বিদ্যুৎ কোম্পানির লাইসেন্স করে দেওয়া কাজ করে হাজার কোটি টাকার মালিক হন।

নির্বাচনি হলফনামা ঘেঁটে দেখা গেছে, ২০২৪ সালের নির্বাচনি হলফনামায় স্থাবর সম্পদ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেছেন, কৃষিজমি ১০ কোটি ১৩ লাখ ৪৫ হাজার ১৪৭ টাকা, তার স্ত্রীর ৪৬ লাখ ৪৬ হাজার ৭৯৬ টাকা, অকৃষি জমি ২৫ লাখ ৫২ হাজার টাকা, স্ত্রীর ৭৭ লাখ ৩২ হাজার টাকা। তার রয়েছে ৮ কোটি ৫২ লাখ ৯৩ হাজার ৪৬৬ টাকা মূল্যের তিনটি দালান (আবাসিক ও বাণিজ্যিক)। ১২ কোটি ৩১ লাখ ৪৬ হাজার ৯২০ টাকা মূল্যের ৬টি ও তার স্ত্রীর ২ কোটি ২৫ লাখ ৯৪ হাজার ২০১ টাকা মূল্যের ৪টি বাড়ি ও অ্যাপার্টমেন্ট।

আলাউদ্দিন চৌধুরী নাসিম বিসিএস প্রশাসন সার্ভিসে ১৯৮৬ সালে যোগ দেন। ১৯৯৬ সালে সেসময়ের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রটোকল অফিসার হিসেবে নিযুক্ত হয়ে ২০০১ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। ২০০১ সালের পর সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনার এপিএস হিসেবে কাজ শুরু করেন। এই দায়িত্বে তিনি ২০০৮ সালের নির্বাচন পর্যন্ত ছিলেন। ২০০৯ সালে উপসচিব হিসেবে তিনি প্রশাসন ক্যাডার থেকে পদত্যাগ করে অবসরে যান।২০১২ সালে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হন।

ফেনী জেলা দুদকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ১৯৮৬-২০০৯ পর্যন্ত উপসচিব মর্যাদার কর্মকর্তা আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম ২০২৪ সালের নির্বাচনি হলফনামায় তার ও স্ত্রীর ১০৮ কোটি ৩৭ লাখ ৪১ হাজার ৮৪৫ টাকার সম্পদ রয়েছে বলে উল্লেখ করেন। প্রশ্ন উঠেছে, এই সময়ে অন্য যেসব উপসচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তা ছিলেন তারাও কী এমন শত কোটি টাকার মালিক হতে পেরেছেন? ২০১৮ সালের নভেম্বর মাসে নাসিম রাজধানীর গুলশান এলাকায় এনই(কে) ব্লকের ৮৩ নং সড়কের ১৩/বি প্লটটি জমি ও ভবনসহ কিনে নেন। জমির পরিমাণ ১২ কাঠা। যদি জমির সর্বনিম্ন মূল্য কাঠাপ্রতি ১০ কোটি টাকা ধরা হয়, তাহলে ১২ কাঠার দাম ১২০ কোটি টাকা। যদিও তার হলফনামায় এই বাড়ি ও জমির বিস্তারিত উল্লেখ নেই।

অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল অবৈধ সম্পদ অর্জন করায় ২ অক্টোবর তার বিরুদ্ধে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় দুদক। একই সঙ্গে নাসিম ও তাদের পরিবারের বিরুদ্ধে বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুদক।

এ বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন নোয়াখালী সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক ফারুক আহমেদ বলেন, সাবেক সংসদ সদস্য আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিমের সম্পদের অনুসন্ধান করছি আমরা। তার অনেক সম্পদের তথ্য পাচ্ছি। এর মধ্যে নির্বাচনি হলফনামায় গুলশানে যে বাড়ির তথ্য গোপন করেছেন, সেটির তদন্ত চলছে। আরও কোথায় কোথায় সম্পদের তথ্য গোপন করেছেন, তারও খোঁজখবর নিচ্ছি। আমাদের তদন্ত শেষ হলে দ্রুত সময়ের মধ্যে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করবো।

যাযাদি/ এস

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে