মঙ্গলবার, ২০ মে ২০২৫, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

পল্লী বিদ্যুতের সংকট সমাধানে আলোচনায় বসতে ৪৮ ঘন্টার আল্টিমেটাম 

যাযাদি ডেস্ক
  ১৯ মে ২০২৫, ১৯:২২
পল্লী বিদ্যুতের সংকট সমাধানে আলোচনায় বসতে ৪৮ ঘন্টার আল্টিমেটাম 
ছবি : যায়যায়দিন

কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চাকরিতে পূনর্বহাল ও মামলা প্রত্যাহার, এক ও অভিন্ন সার্ভিস কোড বাস্তবায়ন এবং অনিয়মিতদের নিয়মতকরনসহ বিদ্যমান সংকট সমাধানে আগামী ৪৮ ঘন্টার মধ্যে আলোচনা বসার আল্টিমেটাম দিয়েছে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির বৈষম্য বিরোধী কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

বিকালে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ আহ্বান জানান তারা। সংবাদ সম্মেলনে ভুক্তভোগী কর্মকর্তা কর্মচারীরা অভিযোগ করেন, গ্রামাঞ্চলে মানসম্মত বিদ্যুৎ সেবা প্রদানে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড ও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিসমূহের বিদ্যমান সংকট নিরসনপূর্বক যৌক্তিক সংস্কার চাওয়ায় জুলাই স্প্রিরিট ধারণকারী বৈষম্য বিরোধী কর্মকর্তা কর্মচারীদের বিরুদ্ধে ঢালাওভাবে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। গত চার মাসে প্রায় চার সহস্রাধিক কর্মকর্তা কর্মচারীর বিরুদ্ধে চাকরিচ্যুতি, বদলি সংযুক্তিসহ হয়রানি মুলক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

1

তারা জানান, নিম্ন মানের মালামাল দিয়ে ভঙ্গুর বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থা নির্মাণ করে গ্রাহক হয়রানি এবং গ্রাহক বনাম সমিতির কর্মরত কর্মচারীদের মুখোমুখি দাঁড়া করিয়ে দেওয়া, আরইবির ব্যার্থতার দায়ভার সমিতিগুলোর উপর চাপানো, নানান আর্থিক অনিয়ম; কর্মক্ষেত্রে বিদ্যুৎ স্পৃষ্ট হয়ে অকালে মৃত্যুবরণ করা কর্মীর দায় না নিয়ে বরং সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিভিন্নভাবে হয়রানি ও জুলুম ইত্যাদি কারণে দীর্ঘকালের অসন্তোষের প্রেক্ষিতে গত বছরের জানুয়ারি থেকে সমিতিগুলোতে সম্মিলিত আন্দোলনের সূত্রপাত।

তাদের অভিযোগ, যৌক্তিক দাবীতে নিয়মানুযায়ী প্রথমে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড, এরপর বিদ্যুৎ সচিব এবং পরবর্তীতে তৎকালীন মন্ত্রণালয় প্রধানকে লিখিতভাবে জানানো হয়। এরপর থেকেই পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি সমূহের উপর পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের দমন নিপীড়ন শুরু হয়। ফলশ্রুতিতে কর্মকর্তা কর্মচারীরা ৫ মে তারিখে বিদ্যুৎ সরবরাহ ও গ্রাহকসেবা অক্ষুন্ন রেখে আন্দোলনে যেতে বাধ্য হয়।

বিদ্যুৎ বিভাগ, আরইবি এবং সমিতির প্রতিনিধিগণের সমন্বয়ে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছিল এবং তাদের আশ্বাসের প্রেক্ষিতে কর্মসূচি প্রত্যাহার করা হয়।

কিন্তু ২০২৪ সালের ১০ মে তারিখে সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নির্ধারিত সময় অতিক্রান্ত হয়ে গেলেও সমিতির প্রতিনিধিগণের সাথে আলোচনায় বসার কোন উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। তদুপরি এই সময়ের মধ্যে আরইবি কর্তৃক “বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড আইন-২০১৩” সংশোধনের প্রস্তাব উপস্থাপন করা হয়। জবাবদিহিতার উর্ধ্বে গিয়ে গ্রাহক এবং সমিতিগুলোকে বিপাকে ফেলতে উক্ত আইনে আরইবি কিছু ধারা সংশোধন ও সংযোজন করে প্রস্তাব উপস্থাপন করে।

পরবর্তীতে গ্রাহক হয়রানি ও সভার সিদ্ধান্ত না মেনে আমাদের প্রতি প্রহসন, বৈষম্যমূলক আচরণ এবং আমাদেরকে হয়রানির প্রতিবাদে ১ জুলাই ২০২৪ তারিখ থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ ও গ্রাহক সেবা সচল রেখে পুনরায় কর্মবিরতি শুরু হয়। তদপ্রেক্ষিতে ৫ জুলাই তারিখ বিদ্যুৎ বিভাগে আরইবি, পবিস এবং বিদ্যুৎ বিভাগের সমন্বয়ে সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভার আলোচনা ফলপ্রসূ না হওয়ায় পুনরায় ১০ জুলাই তারিখ বিদ্যুৎ বিভাগে সভা অনুষ্ঠিত হয়।

পরবর্তীতে জুলাইয়ের ছাত্র আন্দোলনের প্রতি সংহতি জানিয়ে আমরা আন্দোলন স্থগিত করি। তখন আমাদেরকে বিএনপি ও জামায়াতের দোসর ও উন্নয়ন বিরোধী হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয়। আগস্টে অন্তর্বতীকালীন সরকার গঠিত হওয়ার পরেও বারংবার আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করলেও পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের অসহযোগিতার কারণে তা আলোর মুখ দেখেনি। বাধ্য হয়ে ২০২৪ সালের ৩০শে সেপ্টেম্বর তারিখে সারাদেশে পল্লী বিদ্যুতের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারী গ্রাহক সেবা চালু রেখে ৬১জেলার জেলা প্রশাসকের সামনে শান্তিপূর্ণ মানব বন্ধন করেন এবং মানববন্ধন শেষে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি প্রেরণ করা হয়। উক্ত স্মারকলিপির দাবি "জেলা প্রশাসক সম্মেলন-২০২৫" এর এজেন্ডা হিসেবে গৃহীত হয় এবং আরইবি-পবিস একীভূত করার দাবিটি যৌক্তিক হওয়ায় মন্ত্রীপরিষদ বিভাগ হতে বাস্তবায়নের নিমিত্তে বিদ্যুৎ বিভাগকে নির্দেশনা দেওয়া হয়।

তারা বলেন, এরপর থেকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপর আস্থা রেখে আমরা কোন কর্মসূচি আর দেইনি। কিন্তু ৩০শে সেপ্টেম্বরের মানববন্ধনে উদঘাটন হওয়া ঘটনাকে ধামাচাপা দেওয়ার জন্য উদ্দেশ্যমূলকভাবে হঠাৎ করেই ১৬ এবং ১৭ই অক্টোবর এই দুইদিনে সমিতির ১৭১ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর নামে রাষ্ট্র বিরোধী ও সাইবার নিরাপত্তা আইনে মামলা ও ২৪ জনকে চাকরিচ্যুত করা হয়। মামলায় মোট ১৬ জনকে আটক এবং রিমান্ডে নেওয়া হয়। ৬৩ জনকে ১৭ অক্টোবর পরবর্তী ১ সপ্তাহে সাময়িক বরখাস্তসহ বিভিন্ন শাস্তি প্রদান করা হয়েছে।

তাদের অভিযোগ, পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড ও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি সমূহের মধ্যে বিদ্যমান সংকট নিরসনের লক্ষ্যে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান এর সাথে বারংবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও কোন সাড়া পাওয়া যায়নি।

বিগত ০৩ মাসে বদলীকৃত ৪০৭১ জনের প্রায় ৯০ ভাগকে নিজ জেলা হতে ইচ্ছাকৃতভাবে ৪০০/৫০০ কি: মি: দূর পদায়ন করা হয়েছে। এমনকি ০১ জন মৃত ব্যাক্তিসহ ০৩ জন পক্ষাঘাতগ্রস্ত লাইনক্রুকে বদলী করা হয়েছে। মূলত সংস্কারের কথা বলায় তাদের উপর এহেন দমন নিপীড়ন তথা স্বৈরশাসন চালানো হচ্ছে। অনেকে এই অন্যায়ের প্রতিবাদ করায় তৎক্ষনাৎ সাময়িক বরখাস্তসহ সংযুক্তির স্বীকার হয়েছেন। এমনকি পল্লী বিদ্যুত সমিতি সমূহ সংস্কারের যে আশার আলো দেখছিলো তাও ফিকে হতে শুরু করেছে। পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি সংস্কারের লক্ষ্যে বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠিত হলেও পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের অনৈতিক হস্তক্ষেপের কারণে ০৮ মাসেও কমিটির রিপোর্ট আলোর মুখ দেখছে না। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ কর্তৃক এক ও অভিন্ন সার্ভিস কোড প্রণয়নের নির্দেশনা দেওয়া হলেও, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও বিদ্যুৎ বিভাগের অদূরদর্শীতার কারণে তাও ভেস্তে যেতে বসেছে।

বৈষম্য বিরোধী কর্মকর্তা কর্মচারীরা জানান, পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির প্রায় ৪৫০০০ মানুষ যে কোন মূল্যে এই সংকট নিরসন করতে বদ্ধ পরিকর। চলমান সংকট সমাধানে আগামী ৪৮ ঘন্টার মধ্যে আলোচনায় বসার আহ্বান জানান তারা।

সংবাদ সম্মেলনে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ভুক্তভোগী ডিজিএম রাহাত হোসেন, ডিজিএম আলী হাসান মোহাম্মদ আরিফুল ইসলাম, ডিজিএম আসাদুজ্জামান ভুঁইয়া, এজিএম মনির হোসেন বক্তব্য রাখেন।

এছাড়াও সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) শ্রমিক উয়িং এর প্রধান সমন্বয়কারী মাজহারুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক রিয়াজ মোর্শেদ, যুগ্ম সমন্বয়কারী সজিব ওয়াফি, মোহাম্মদ আবু আব্দুল্লাহ, কেন্দ্রীয় সংগঠক সম্রাট আজাদসহ নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে