সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫ বাতিলের দাবিতে আজ সোমবার দুই উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ও মাহফুজ আলমের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছেন বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্য ফোরাম।
স্মারকলিপি দেওয়ার আগে আন্দোলনকারী কর্মচারীরা সচিবালয়ের বাদামতলায় বিক্ষোভ সমাবেশ করেন।
সমাবেশে আন্দোলনকারী কর্মচারীদের সংগঠন বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্য ফোরামের নেতারা বলেন, অধ্যাদেশটি বাতিলের ব্যবস্থা না করা হলে ঈদুল আজহার পর তাঁরা কঠোর আন্দোলনে যাবেন। কঠোর আন্দোলনে যাওয়ার জন্য তাঁরা সচিবালয় ছাড়াও সারাদেশের সরকারি কর্মচারীদের প্রস্তুত হওয়ার আহ্বান জানান।
সমাবেশের পর উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া ও উপদেষ্টা মো. মাহফুজ আলমের দপ্তরে স্মারকলিপি জমা দিতে যান সচিবালয়ের কর্মচারীরা। তবে এই দুই উপদেষ্টা সে সময় দপ্তরে উপস্থিত ছিলেন না। আন্দোলনকারী কর্মচারীরা আগামীকাল মঙ্গলবার অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ ও আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুলের কাছে স্মারকলিপি দেবেন।
বিক্ষোভ সমাবেশে ঐক্য ফোরামের কো-চেয়ারম্যান বাদীউল কবীর বলেন, শুধু সচিবালয় নয়, সারা দেশে সব সরকারি দপ্তর, সংস্থা ও পরিষেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানে কর্মচারীরা ক্ষোভে ফুঁসছেন। তারা এই কালো আইনকে ধিক্কার জানাচ্ছেন। এই নিবর্তনমূলক আইন প্রত্যাহার না করা পর্যন্ত তাঁরা মাঠে থাকবেন।
অধ্যাদেশ প্রত্যাহারের আদেশ জারির দাবি জানিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে বাদীউল কবীর বলেন, ‘কর্মচারীদের শান্তিপূর্ণ ও শৃঙ্খলাপূর্ণ আচরণকে যদি দুর্বলতা মনে করেন, তাহলে এটি বুমেরাং হয়ে যাবে।’
ঈদের পর কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেন বাদীউল কবীর। উপস্থিত কর্মচারীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘ঈদের পর যদি কঠোর আন্দোলনের ডাক দিই, তাহলে আপনারা সবাই প্রস্তুত থাকবেন তো?’ জবাবে উপস্থিত কর্মচারীরা সমস্বরে ‘হ্যাঁ’ বলে চিৎকার করেন।
তখন বাদীউল কবীর বলেন বলেন, সব সরকারি দপ্তরে এ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হবে। বিক্ষোভ সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন ঐক্য ফোরামের আরেক কো-চেয়ারম্যান মুহা. নূরুল ইসলাম ও কো-মহাসচিব নজরুল ইসলাম।
একই দাবিতে রোববার বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ, সড়ক পরিবহন ও সেতু এবং রেলপথ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খানের কাছে স্মারকলিপি জমা দেন আন্দোলনকারী কর্মচারীরা। খাদ্য ও ভূমি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন ও পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের কাছেও স্মারকলিপি দেওয়া হয়। ওই দিন বেলা ১১টার দিকে সচিবালয়ের ৬ নম্বর ভবনের সামনে বাদামতলায় কর্মচারীরা বিক্ষোভ মিছিল করেন। এর পর মিছিল নিয়ে উপদেষ্টাদের কাছে স্মারকলিপি দেন তারা।
কর্মচারী নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান সাংবাদিকদের বলেন, এ অধ্যাদেশের কিছু বিধানের অপপ্রয়োগের শঙ্কা রয়েছে। কয়েকজন উপদেষ্টার নজরে এই জিনিসটি এনেছি। প্রধান উপদেষ্টার কাছেও বিষয়টি তুলে ধরব। তবে অধ্যাদেশটি রেখে কী কী সেফগার্ড করলে কর্মচারীর কাছেও এটা গ্রহণযোগ্য হবে, তাও ভেবে দেখা দরকার।
উপস্থিত কর্মচারী নেতারা বলেন, এই অধ্যাদেশ সংবিধানবিরোধী কালো আইন। অবিলম্বে এটা বাতিল চাই। এ সময় বক্তব্য দেন সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্য ফোরামের কো-চেয়ারম্যান নূরুল ইসলাম ও কো-মহাসচিব নজরুল ইসলাম।
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস গত শনিবার জাপান সফর শেষে দেশে ফিরেছেন। এখন মন্ত্রিপরিষদ সচিব এ বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে আলোচনা করবেন। কর্মচারী নেতারা বলছেন, এ অবস্থায় প্রধান উপদেষ্টার কাছ থেকে একটা আশাব্যঞ্জক খবর পাবেন।
২২ মে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮ সংশোধন করে সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫-এর খসড়া অনুমোদন হয়। এরপর থেকে এই অধ্যাদেশটিকে ‘নিবর্তনমূলক ও কালো আইন’ আখ্যায়িত করে আন্দোলনে নামেন সচিবালয়ের কর্মচারীরা। আন্দোলনের মধ্যেই ২৫ মে সন্ধ্যায় সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫ জারি করে সরকার। এ অধ্যাদেশ বাতিলের দাবিতে টানা চার দিন বিক্ষোভের পর সরকারের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে আলোচনা শুরু করায় কর্মসূচিতে পরিবর্তন আনেন তারা।