শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
আন্তজাতিক নারী দিবস

ওরা কাজ করে সমান মজুরী পান পুরুষের চেয়ে কম

মন্তোষ চক্রবর্তী
  ০৮ মার্চ ২০২৩, ১১:৫০
লেখকের সঙ্গে নারী শ্রমিকরা

ব্রাম্মণবাড়িয়ার জেলার নাসিরনগর,সরাইল,হবিগঞ্জের লাখাই,আজমেরিগঞ্জ,বানিয়াচং কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম,ইটনা, মিঠামইন,বাজিতপুর, নিকলী,সুনামগঞ্জের দিরাই, শাল্লা,নেত্রকোনার খালিয়া জুড়ি ও পাশ্ববর্তী উপজেলা নিয়ে বিস্তন হাওর অঞ্চল মজুরীর বঞ্চনার শিকার হচ্ছে হাজার হাজার নারী মজুর। কৃষি নির্ভর যে সভ্যতা মানুষ প্রথম প্রর্বতন করে, তাতে প্রধান অবদান ছিল নারীর। এমন কি এক সময়ে কৃষকের ভূমিকায় আমরা পুরুষদের অধিষ্ঠিত হতে দেখা যেত। তাতে কৃষিকাজ থেকে নারীর পুরোপুরি বিচ্যুতি ঘটেনি। বর্তমান আত্ম সামাজিক অবস্থা পরিবর্তনে নারী-পুরুষ শ্রম বিভাজনের পরিবর্তন আসছে।পুরুষ কৃষি কাজ ছেড়ে গ্রাম থেকে শহরমুখী হচ্ছে।এতে কৃষি কাজে নারীদের দায়িত্ব বাড়ছে। খোঁজ খবর নিয়ে জানা যায়,রোদ,বৃষ্টি ঝড়,শীত ইত্যাদি প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার হয়ে এসব নারী শ্রমিকেরা সারাদিন কাজ করে। কিন্তু পুরুষদের সমান কাজ করেও তাদের দৈনিক মজুরী কখনো পুরুষদের অর্ধেক, কখনো কিছু বেশি পেয়ে থাকেন। যদি শ্রম আইন অনুযায়ী নারী কিংবা পুরুষ সমমান,সমঘন্টা কাজ করলে তার সমপরিমাণ মজুরি পাওয়ার অধিকার রয়েছে।

এ ব্যাপার সরকারি বা স্থানীয় ভাবে বঞ্চিত এসব নারী শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়নে বা মজুরী বৃদ্ধির কোন উদ্যােগ গ্রহণের দৃষ্টান্ত পাওয়া যায় না। সূত্র জানান,কিশারগঞ্জ, হবিগঞ্জ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া,সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা জেলার সংযোগস্থল এক ফসলী বারো উৎপাদনী এই বিস্তর্ণ হাওরাঞ্চল। বর্ষার ৬ মাস কাজ থাকে। বর্ষার পানিতে একাকার হয়ে গেলে কাজের কর্ম সংস্থান থাকে না। এছাড়াও এ অঞ্চলর সংখ্যা গরিষ্ট মানুষই শ্রমজীবি খেটে খাওয়া শ্রেণীর। ভাত কাপড়ের সংস্থান হলেও এসব পরিবার দরিদ্র তালিকায় রযে গেছে। বর্ষার কাজ করে ওদের বর্ষার খাবার সংগ্রহ করতে হয়। বেশির ভাগ মজুরই বোরো উৎপাদন রোপণ, বাচাই, নিরানী, সার দেওয়া, ধান কাটা মাড়াই এবং কৃষকদের গোলায় গোলায় কাজ করার কাজের মজুরী বিক্রি করেন।

অষ্টগ্রামের বড় হাওড়, শিয়াল ডাঙ্গা, চৌদন্ত বস্তি, ভাটিনগর,শরীফপুর,ভাতশালা,কাকুরিয়া,চন্ডীপুরর হাওর বাজিতপুরের হুমায়ুনপুর,আছান পুর দিঘীরপাড়,কামরবাওলীর হাওর আজমিরীগঞ্জর পাহাড়পুর,বদল পুরের হাওর,লাখাই মাহমুদ পুর হাওর,নোয়া গাঁয়ের হাওর বামৈর হাওর,নাসির নগরের গোয়াল নগর, ভলাকুট, নোয়াগাঁও ইত্যাদি এলাকার হাওড় ঘুরে দেখা গেছে। অসংখ্য নারী শ্রমিকরা ফসলি জমি,সড়ক নির্মান ও খামার কাজ করছেন। বর্তমান এই অঞ্চলের সরকারি কাজ যোগালী,নির্মাণ,মাটি ভরাট কোন কোন ইউনিয়েন কাচা সড়ক সংস্কারে মহিলা কাজ করতে দেখা যায়। এক সময়ে বদ্ধ মহিলারই শুধু মজুরি বিক্রি করতেন। বর্তমানে সংখ্যাগরিষ্ট যুবতী, গৃহবধু, কিশোরীরা মজুরী বিক্রি করতে দেখা গেছে। এছাড়াও বৃদ্ধরাও মনের আনন্দে কাজ করছেন। একাধিক নারী দিনমজুর জানান,বাড়ি থেকে নদী পাড় হয়ে ৫-৭ মাইল দূর গিয়েও কখনো কখনো নিজ উপজেলা থেকে অন্য উপজেলা গিয়েও কাজ করতে হয়। মাঝে মধ্যে এরা পাশ্ববিক লালশার সহ বিভিন্ন নির্যাতন শিকার হয়েও মজুরী না পাওয়ার মত ঘটনার অসংখ্যা দৃষ্টান্ত রযেছে বলে জানা গেছে।

সন্তান ও পরিবারের ভরণ পোষণ চালাতে গিয়ে মজুরি বিক্রি করে যাচ্ছে। হাওর অঞ্চলে প্রায় কয়েক বছর পর পর অকাল বন্যা, ঝড় শীলাবষ্টি ইত্যাদি প্রাকতিক দুর্যোগে ফসলহানি ঘটলে এদের কাজের পরিধি কমে যায়। অভাব অনটন এদের নিত্য দিনের সাথী হয়ে দাঁড়ায়।বেসরকারি এনজিও গুলাতও কাজ করেও যেখান পুরুষদের দৈনিক মজুরি ৬’শ টাকা যেখান মহিলা মজুরদের মজুরী ৩শ থক ৪শ টাকা দেওয়া হয় বলে একাধিক নারী শ্রমিকরা জানান। এ ব্যাপার নারী মজুরী বঞ্চনার শিকার হলেও তাদের প্রতিবাদ করার উপায় নেই বলেও জানান তারা। এই সব হাওরাঞ্চলে নারী নেতত্ব বিকাশে কোন নারী সংগঠনও গড়ে উঠেনি। হাওরাঞ্চলের বিভিন্ন অবকাঠামো উন্নয়ন প্রচুর কাজ হলেও নারীদের কাজ করার মত কোন কুটির শিল্প বা শিল্পী প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেনি। হাওরের দুইজন নারী জানান ওরা কুটির শিল্প পরিচালনা করে উৎপাদন শুরু করার পর পুঁজির অভাবে কাজ বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছেন।

এদিকে হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক (ডিসি) ইশরাত জাহান এর সঙ্গে কথা বললে তিনি জানান, মজুরি একই রকম পাওয়া উচিত, আইনত সেটিই বিধান, আমি চা- শ্রমিক যারা আছে তাদের নিয়ে অনেক কাজ করেছি সেখানে কোন বৈষম্য নেই সবাই একই রকম পাচ্ছে, হাওরাঞ্চলে নারী শ্রমিকদের মজুরির কোন বৈষম্য আছে কি না সেই বিষয়ে আমার কাছে কোন অভিযোগ আসেনি যদি আসে তাহলে সবাই যেন একই রকম মজুরি পান সেই বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হবে এবং এমনটি হওয়া উচিত নয় বলেও জানান তিনি।

এদিকে ইটনা উপজেলা ধনপুর গ্রামের সুরেখা দাস (৪০) মৃগা গ্রামের পেশু বেগম (৩৫) অষ্টগ্রাম উপজলার কলমা ইউনিয়নের চন্ডিপুর গ্রামের ঝর্ণা রানী দাস বলেন, ৩ ছেলে মেয়েকে বাড়িতে রেখে সকাল ৭.৩০ মিনিট বাড়ি থেকে বেড় হয়ে প্রায় দেড় ঘন্টা পায়ে হেটে বোরো জমিনে কাজ করে ৩ শ টাকা মজুরি পাচ্ছেন একই গ্রামের, প্রতিভা রানী দাস,নমিতা রানী দাস,মলিনা দাসসহ ৪-৫ জনের একটি নারী শ্রমিকদলের সাথে কথা বলার সময় তারা জানান, অভাব অনটনের কারনে বাড়ি থেকে প্রায় ৭-৮ কিলোমিটার দুরে হাওরের এসে সারাদিন

কাজ কর পুরুষদের যেখান ৬শ থেকে ৭ শত টাকা মজুরী পান আমরা সেখান পুরুষদের সমান কাজ করেও ৩শ টাকা মজুরী পেয়ে থাকেন।

এদিকে বিষয়টি আলোচনা করে দেখবেন বলে জানিয়েছেন কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ।

এ ব্যাপার পরিবেশবাদী ও হাওরাঞ্চলবাসী ঢাকা কমিটির সাধারন সম্পাদক রোটারিয়ান কামরুল হাসান বাবু মনে করেন, শ্রম আইন অনুযায়ী নারী কিংবা পুরুষ সমমান,সমঘটা কাজ করলে তার সমপরিমান মজুরি পাওয়ার অধিকার রয়েছে। এতে যদি কম দেওয়া হয় তাতে রাষ্ট্রীয় শ্রম আইন লঙ্গন এবং এটি আইন বর্হিভূত হবে,সেই ক্ষেত্রে স্থানীয় প্রশাসন আরোও কঠোর হওয়ার দরকার বলে মনে করেন তিনি ।

লেখক, সাংবাদিক

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে