শুক্রবার, ১৩ জুন ২০২৫, ৩০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

বাংলাদেশে রাজনীতির ‘মেসি’: বেগম খালেদা জিয়া

শাহীন রাজা
  ১২ জুন ২০২৫, ১৪:০০
বাংলাদেশে রাজনীতির ‘মেসি’: বেগম খালেদা জিয়া
বেগম খালেদা জিয়া-ফাইল ছবি

রাজনৈতিক সচেতন প্রায় সকল নাগরিকের দৃষ্টি এখন লন্ডনে । আর কয়েক ঘন্টা পর লন্ডনে হতে যাচ্ছে এক যুগান্তকারী বৈঠক। এই বৈঠকেই হয়ত বাংলাদেশে বর্তমান রাজনৈতিক হিসেবনিকেশ পাল্টে যেতে পারে।

রাজনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুস সাথে বিএনপি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠক আগামীকাল শুক্রবার জুম্মা’র দিনে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।

1

বিষয়টি শুধু রাজধানীতেই ‘টক অব দ্যা টাউন’ নয়। বাংলাদেশের প্রতিটি বাজার এবং গ্রামে চায়ের আড্ডায় একমাত্র আলোচনা’র বিষয় হচ্ছে এই বৈঠক !

বাংলাদেশিরা উৎসুক হয়ে অপেক্ষায় আছে। আগামীকালের বৈঠকে কে বিজয়ী হবে ? অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান? না বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ! না কি এই বৈঠকের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের বিজয় হতে যাচ্ছে ?

বাংলাদেশের অনেক সুশীল এবং মধ্যবিত্ত শকুন দৃষ্টিতে অপেক্ষায় আছেন। অন্তর্বর্তী সরকার প্রধান, বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী’র সাক্ষাৎ পেল কি না ? কিন্তু এই সফরে বাংলাদেশের নিযুত সংখ্যক মানুষের এ ব্যাপারে কোন আগ্রহ নেই। তাদের একমাত্র দৃষ্টি ড. ইউনুস এবং তারেক রহমানের বৈঠক। তাদের প্রত্যাশা, দুই নেতার বৈঠকের মধ্য দিয়েই দেশে বিদ্যমান রাজনৈতিক অস্থিরতা’র নিরসন হবে এবং সূচীত হবে, বাংলাদেশের প্রত্যাশিত বিজয় !

২০২৪ সালের ৫ আগষ্ট আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে গণঅভ্যুত্থান হয়। অভ্যুত্থানের কয়েকদিনের মধ্যে রাজনৈতিক সঙ্কট দেখা দেয়।

কোটাবিরোধী আন্দোলনের নেতারা মনে করতে থাকেন, তাদের আন্দোলনের কারণেই এই বিজয়। অন্তর্বর্তী সরকার পরবর্তীতে তারাই হবেন আগামী দিনের জনপ্রতিনিধি।

নব্বই পরবর্তী থেকে দেশে যে কোন অভ্যুত্থান ঘটলেই, জামায়াত তার হক দাবীদার মনে করে। এবার-ও জামায়াত নেতারা মনে করেন, জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক ভাবে এই সফল আন্দোলনে তাদের ভূমিকাই মূখ্য। একারণে তাঁদের ভেতরে বিশ্বাস জন্মায় অন্তর্বর্তী সরকার পরবর্তী দেশ পরিচালনার হক-অধিকার তাঁদেরই।

কিন্তু তারা কেউ একবারও ভেবে দেখেননি বাংলাদেশের রাজনৈতিক খেলায় একজন “মেসি” আছে ! তিনি বাংলাদেশের রাজনীতি’র সকল হিসেবনিকেশ পাল্টে দিতে পারেন ! বাংলাদেশের রাজনীতির মেসি হচ্ছেন,বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের চেয়ারপার্সন ” বেগম খালেদা জিয়া ” !

বেশ কিছুদিন ধরেই বিএনপি এবং অন্তর্বর্তী সরকার পরষ্পর বিপরীতমুখী অবস্থানে। বিশেষ করে নির্বাচন ইস্যুতে। অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের শুরুতেই বিএনপি তিনমাসের মধ্যে নির্বাচন দাবী করে বসে।

এ নিয়ে জনমনে সংশয় দেখা দেয়। কিন্তু অতীতে প্রত্যেক অস্থায়ী বা অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব লাভের তিন মাসের মধ্যে নির্বাচন দিয়েছে এবং নির্বাচিত সরকারের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করেছেন।

এই চলমান প্রক্রিয়ার প্রথম ব্যত্য় ঘটায় মঈন-ফখরুদ্দিন যৌথ সরকার। তারা টানা দুইবছর সরকার পরিচালনা করে এবং একটা অস্বচ্ছ নির্বাচন অনুষ্ঠিত করে। যার পরবর্তী ইতিহাস হচ্ছে, আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকারের উপহার !

বিএনপি পরবর্তীতে তিনমাসের দাবী থেকে সরে আসে। তাদের বর্তমান চাওয়া হচ্ছে, ২০২৫ সালের ডিসেম্বরে নির্বাচন দিতে হবে। কিন্তু অন্যান্য দলের মধ্যে এনসিপির দাবী সংস্কার এবং আওয়ামী ফ্যাসিস্টদের বিচার শেষে নির্বাচন দেয়ার ।

জামায়াতে ইসলামী শক্তির ভারসাম্য অনুযায়ী একেক সময় এক এক কথা বলে। তবে বিএনপির সাথে সিপিবি,জাসদ,বাসদসহ বেশ কয়েকটি বাম এবং দক্ষিণ পন্থী দল ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন দাবী করে আসছে। ডিসেম্বরে যারা নির্বাচন চাইছে, দল হিসেবে তাদের সংখ্যাই অধিক।

বিএনপির যখন ডিসেম্বরে নির্বাচন অনুষ্ঠানে অনড়। এমন অবস্থায় গত ৬ জুন কোরবানির ঈদের ঠিক আগের দিন সন্ধ্যায়, জাতির উদ্দেশে প্রধান উপদেষ্টা ভাষন দেন।

সেই ভাষণে, এপ্রিলের প্রথম ভাগে নির্বাচনের ঘোষণা দেন প্রধান উপদেষ্টা। তিনি জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণের পর পরই রাতেই স্থায়ী কমিটির বৈঠক ডাকে বিএনপি। সরকারের এই ঘোষণার কড়া প্রতিক্রিয়া জানায় বিএনপি।

সেখানে দলটির পক্ষ থেকে এপ্রিলে নির্বাচনের বিষয়ে আপত্তির কথা জানানো হয়। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও লন্ডন থেকে ঘোষণা দেন আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন হতে হবে।

নির্বাচন নিয়ে দু’পক্ষের অবস্থান একেবারে ইউটার্ন। বিএনপি ঘোষণা দিয়ে বসে, ঈদের পর নতুন কর্মসূচি দিতে যাচ্ছে ।

এইরকম টানটান অবস্থায় দলের হাল ধরেন, বেগম খালেদা জিয়া। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যদের সাথে তাঁর বাসভবনে কথা বলেন। তিনি তাঁর দলের লোকদের হয়তো বলেছেন, সরকারের সাথে মুখোমুখি অবস্থানে যাওয়া ঠিক হবে না।

মারমুখী আন্দোলনে সংঘাত বাড়বে এবং নির্বাচন বিলম্ব হবে। যা কোন কোন পক্ষ চাইছে। কিংবা তৃতীয় পক্ষ এ-থেকে সুবিধা নিতে পারে। তার চেয়ে উত্তম হবে, সরকারের সাথে আলাপ-আলোচনা করে একটা সুষ্ঠু, অবাধ এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন আদায় করা।

বেগম খালেদা জিয়ার এই সিদ্ধান্তে পাল্টে যায় সবকিছু। অন্তর্বর্তী সরকার প্রধান ড. ইউনুস-ও হালকা হন। তিনিও হয়-তো চাইছিলেন এই মুখোমুখি অবস্থানের অবসান।

ড. ইউনুসের লন্ডন পূর্বনির্ধারিত সফরের সাথে যোগ হয়, তারেক রহমানের সাথে বৈঠক। প্রধান উপদেষ্টা’র কার্যালয় থেকে বৈঠক নিয়ে পত্র দেয়া হয়। এই অনুরোধ আসার পর বিএনপি চেয়ারপার্সন তাঁর বাসভবন থেকে গ্রীন সিগন্যাল দেন।

এর পর পর-ই স্থায়ী কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় বিএনপি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ভার্চ্যুয়ালী যুক্ত হন। ঐ সভায় সিদ্ধান্ত হয়, বিএনপি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান প্রধান উপদেষ্টার সাথে বৈঠকে বসবেন।

এখানেও বেগম খালেদা জিয়া একক সিটি না দিয়ে দলীয় শিষ্টাচার রক্ষা করেছেন। যা বাংলাদেশের বড় রাজনৈতিক দলের নেতাদেরই কাছে আশা করা যায় না।

এখন আমাদের একটাই আশা বা আকাঙ্ক্ষা। বাংলাদেশের রাজনীতির ‘মেসি’সুস্থ রাজনীতির বিজয় উপহার দেবেন। আমরা আর সংঘাত চাই না। আমরা এটাও চাই না কোনো নির্বাচিত সরকার জগদ্দল পাথরের মতো জাতির ঘাড়ে চেপে বসবে, যা গত বিদায়ী সরকারের আমলে দেখেছি।

সাধারণ মানুষ হিসেবে আমাদের কোন দাবী থাকে না। এবার একটাই দাবী, আমাদের দেশে যেন প্রতি পাঁচ বছর পরপর গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সরকার পরিবর্তন। গণতন্ত্রের প্রধান বাহন হলো সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং অবাধ নির্বাচন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে