রোববার, ২৫ মে ২০২৫, ১১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

নতুন করে চিন্তা, পুরোনো ভুলের পাঠ

ইঞ্জিনিয়ার এ কে এম রেজাউল করিম
  ২৫ মে ২০২৫, ১২:৪৬
নতুন করে চিন্তা, পুরোনো ভুলের পাঠ
ইঞ্জিনিয়ার এ কে এম রেজাউল করিম। ফাইল ছবি

শেষ পর্যন্ত কিছুটা বরফ গলেছে। ড. মুহাম্মদ ইউনূস অবশেষে বিএনপি ও জামায়াতের সঙ্গে বৈঠকে বসতে সম্মত হয়েছেন। আজকের শেষ দিকে দুই পক্ষের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এ বৈঠকের পরেই প্রফেসর ইউনূস তার পরবর্তী কৌশল নির্ধারণ করবেন। গত ৪৮ ঘণ্টায় রাজনৈতিক অঙ্গনে ছিল নাটকীয় উত্তেজনা, আবেগঘন বক্তব্য, এমনকি পদত্যাগের হুমকিও।

কিন্তু এই সংকটের জন্ম কোথায়? একটি চক্র পরিকল্পিতভাবে ইউনূস সাহেবকে জনবিচ্ছিন্ন করার পথে ঠেলে দেয়। ফলে অভ্যুত্থানের মূল শক্তিগুলো—বিএনপি, জামায়াত ইসলাম এবং সশস্ত্র বাহিনী—ধীরে ধীরে ছিটকে পড়ে যায়। এমনকি ছাত্রসমাজের মধ্যেও দেখা দেয় মতানৈক্য। এই বিভাজনের ফলেই আন্দোলনের গতি শ্লথ হয়, এবং ইউনূসপন্থী মহল পড়ে যায় চাপে। তাই এখন আর পদত্যাগ নয়, চলছে নতুন করে ঘুঁটি সাজানোর প্রক্রিয়া—যেন দাবার ছকে রাজাকে বাঁচানোর চেষ্টায় ঘুঁটি বদল।

1

পর্যবেক্ষকদের ভাষ্যে, অভ্যন্তরীণ কোন্দলে যারা সরকারের ভিতরে থেকেই বিভ্রান্তিকর চাল দিচ্ছিলেন, তারা এখন অনেকটাই নীরব। বাস্তবতা তাদের পক্ষে নেই। সমঝোতার অংশ হিসেবে অন্তত তিন থেকে চারজন উপদেষ্টাকে বিদায় নিতে হতে পারে। ইউনূস সাহেব দক্ষ ব্যাংকার ও সংগঠক হলেও রাজনৈতিক নেতৃত্বের ক্ষেত্রেই তিনি বারবার চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ছেন।

এখানে প্রশ্ন আসে—পদত্যাগ চাইলেই কি তা বাস্তবায়ন করা যায়? আপাতত সেটি হচ্ছে না। ইউনূসপন্থী প্রশাসন এখন চিন্তা করছে সামনে কীভাবে এগোনো যায়। ডিসেম্বরে নির্বাচন অনিবার্য—এ নিয়ে আর সংশয় নেই। আমরা বহুবার বলেছি, নির্বাচন বিলম্বিত হলে সংকট আরও গভীর হবে। তখন পর্দার আড়ালের শক্তিগুলো সুযোগ নেবে। এবং ইউনূস সাহেবের স্বপ্নের নির্বাচন হারিয়ে যাবে দৃশ্যপট থেকে।

নির্বাচনকে ঘিরে ভেতরে-বাইরে বহু রকম খেলা হয়েছে। একটি নির্বাচনবিরোধী শক্তি সরকারেই সক্রিয় ছিল, তবে সাম্প্রতিক ঘটনাবলি সেই ভিত্তি অনেকটাই নাড়িয়ে দিয়েছে। এখন আর পেছনে তাকানোর সুযোগ নেই ইউনূস সাহেবের। কে বন্ধু আর কে শত্রু—এখন তা দিবালোকের মতো স্পষ্ট। বিদেশি বন্ধুরাও সাবধান করছেন—সরকার হতে হবে বাংলাদেশকেন্দ্রিক, কেবল ঢাকাকেন্দ্রিক নয়। কিন্তু এখনো উপদেষ্টাদের বেশিরভাগই বাস্তবতার বাইরে অবস্থান করছেন।

একটি কার্যকর ও গতিশীল সরকার গড়তে হলে ইউনূস সাহেবকে আগে নিজের পরিমণ্ডল শুদ্ধ করতে হবে। বিগত কয়েকদিনের অভিজ্ঞতা সেটিই নির্দেশ করে।

আমরা চেয়েছিলাম তিনি বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণে নেতৃত্ব দেবেন। অথচ আজ এমন এক পর্যায়ে এসে দাঁড়িয়েছে দেশ, যেখানে সেনাপ্রধান নির্বাচনের দাবি করছেন, আর বেসামরিক সরকার তারিখ নিয়ে গড়িমসি করছে। এটি ড. ইউনূস এবং তার উপদেষ্টাদের ব্যর্থতা ছাড়া কিছু নয়।

এই অবস্থায় ঘুঁটি সাজানো নয়, প্রয়োজন সরল চিন্তা ও আন্তরিকতা। জটিল রাজনীতি নয়, সহজ পথেই মিলবে সফলতা—ইন শা আল্লাহ।

আমাদের দেশে প্রায়শই দেখা যায়, আমের চেয়ে আঠি বড় হয়ে যায়। ইউনূস সাহেব বিনয়ী হলেও তার কিছু উপদেষ্টা ও সচিবদের কথাবার্তা, ভঙ্গি ও শব্দচয়ন অহংকারে ভরা। তারা যেন মনে করেন, তারাই সব জানেন। সরকারে থাকলে সমালোচনা শুনতেই হয়, সেটি স্বাভাবিক। মানুষ প্রশ্ন তুলবেই।

একটি প্রবাদ আছে—যে গাছে ফল ধরে, তার মাথা নিচু থাকে। তাই যাদের সামনে ক্ষমতায় আসার সম্ভাবনা আছে, তাদের আরও সহনশীল হওয়া উচিত। না হলে, অতীতের মতো তারাও জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে।

স্বাধীনতার পর বহুবার এমন দৃশ্য দেখেছি। এবার যদি ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেওয়া যায়, তবে এখনও সময় আছে পরিবর্তনের।

লেখক : চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী গবেষণা কেন্দ্র।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে