অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার রচিত ‘জুলাই: মাতৃভূমি অথবা মৃত্যু’ বই নিয়ে নেট দুনিয়ায় চলছে তুমুল আলোচনা-সমালোচনা। অভিযোগ উঠেছে, বইয়ের ভেতরে শেখ হাসিনার পতনের পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রথম সংবাদ সম্মেলনের ছবিতে বাদ দেওয়া হয়েছে অন্যতম সমন্বয়ক সাদিক কায়েমকে। আন্দোলনের পরে জানা যায় তিনি ইসলামী ছাত্রশিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি।
জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে আহত হওয়া মো. আবু জুবায়ের আলোচ্য ছবিটি সংযুক্ত করে ফেসবুক পোস্টে লেখেন, ‘মিস্টার আসিফ মাহমুদের ইতিহাস বিকৃতির নয়া অধ্যায়! আসিফ মাহমুদ তার বইয়ে সাদিক কায়েমের ছবি কাটছাঁট করে কী প্রমাণ করতে চান? ইতিহাস অস্বীকারের এ কৌশল কি কারো প্রেসক্রিপশনে চলছে? বাম ও ভারতীয় প্রভাবিত চক্রান্তেরই অংশ নয় তো? আর সত্য গোপন করেও সত্যকে মুছে ফেলা যায় না! প্রশ্ন রইলো— প্রথমা প্রকাশনীর দ্বারস্থ হওয়ার রহস্য কী?’
সাংবাদিক কেফায়েত শাকিল তার ফেসবুকে লেখেন, ‘খুন ইতিহাস কীভাবে বিকৃত হয়। এতদিন আমার কোন ধরনের ইতিহাস পড়েছিলাম দেখতে পারেন। ইতিহাস কীভাবে বিকৃত করা হয়। এটাই তারা উদাহরণ হতে পারে। আসিফ মাহমুদের লেখা “জুলাই: মাতৃভূমি অথবা মৃত্যু” বইটি প্রকাশ করেছে প্রথমা প্রকাশনী। বইটিতে কৌশলে আব্দুল হান্নান মাসুদ, সাদিক কায়েম এবং আব্দুল কাদেরের মতো অগ্রণী ভূমিকা রাখা কয়েকজন সমন্বয়ককে কেটে দেওয়া হয়েছে। অথচ আসিফ-নাহিদরা যখন হাসিনার মন্ত্রীদের সঙ্গে মিটিং করে সমঝোতার পথে যাচ্ছিল তখন আন্দোলনের হাল ধরেছিলের সাদিক-হান্নান-কাদের-রিফাত।’
তিনি আরও লেখেন, ‘আমরা যেসব সাংবাদিকরা সরাসরি আন্দোলন প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত ছিলাম আমরাতো ঘটনার বড় সাক্ষী। কিন্তু এখন দেখছি ইতিহাস বিকৃতির খেলা। সংযুক্তি: দুইটা দুই অ্যাঙ্গেলে তোলা ছবি। কিন্তু ফটো সিলেকশনটা দেখেন। ইতিহাস অস্বীকার করাটা দেখেন।’
এদিকে ‘জুলাই’ বই নিয়ে বিতর্কের মাঝে আগস্ট-পরবর্তী আসিফ মাহমুদের একটি পোস্টের স্ক্রিনশট ভাইরাল হয়েছে। গত বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর ওই পোস্টটি করেন তিনি। সেখানে লেখেন, ‘কে রাজাকার? কে রাজাকার? তুই রাজাকার, তুই রাজাকার! লাখো শহীদের রক্ষে কেনা, দেশটা কারো বাপের না। সেদিন স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার সুপ্রিমেসিকে বৃদ্ধঙ্গুলী দেখিয়েছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।’
তার এই পোস্ট নিয়েও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চলছে আলোচনা-সমালোচনা।
আব্দুল্লাহ হিল বাকী তার পোস্টে আসিফ মাহমুদের বই উদ্ধৃত করে লেখেন যে, ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পলায়নের পর হাসনাত আবদুল্লাহ ও সারজিস আলম সেনাবাহিনীর গাড়িতে করে ক্যান্টনমেন্টে যাচ্ছেন। শুনে আমার মনটা খুবই বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠল। সঙ্গে সঙ্গে হাসনাত আবদুল্লাহকে ফোন করে বললাম, ক্যান্টনমেন্টে গেলে আপনাদেরও জাতীয় বেইমান ঘোষণা করা হবে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এই সমন্বয়কের বইয়ের এই অংশ নিয়ে আপত্তি করেন হাসনাত আব্দুল্লাহ।
এ নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট করেছেন আসিফ মাহমুদ। তিনি লিখেছেন, ‘বইটা জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার সংক্ষিপ্ত বর্ণনা, সম্পূর্ণ গণঅভ্যুত্থানের ইতিহাস না। গতকাল প্রকাশনা অনুষ্ঠানেও বলেছি, আবারও বলছি। জুলাই: মাতৃভূমি অথবা মৃত্যু বইটা আমার চোখে গণঅভ্যুত্থানকে যেভাবে দেখেছি সেই অভিজ্ঞতার সংক্ষিপ্ত বর্ণনা। সম্পূর্ণ গণঅভ্যুত্থানের ইতিহাস না। ব্যক্তি আসিফ মাহমুদের অভ্যুত্থানের অভিজ্ঞতাকে সম্পূর্ণ গণঅভ্যুত্থানের ইতিহাস হিসেবে ধরে নেওয়া ভুল হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এছাড়াও বইটি সংক্ষিপ্ত, এখানে অনেক বড় ঘটনাকেও ১ লাইনের মধ্যে নিয়ে আসা হয়েছে। মাত্র ১২০ পৃষ্ঠায় আমার নিজের অভিজ্ঞতার বিস্তারিত বর্ণনা সম্ভব নয়।’ পরবর্তীতে ফ্রি সময় পেলে বইয়ের টাইমলাইন ধরে ধরে বিস্তারিত লিখবেন বলে আশা প্রকাশ করেছেন আসিফ মাহমুদ।
এদিকে তার পোস্টে অনেকেই তাকে ‘ইতিহাস বিকৃতিকারী’ হিসেবে মন্তব্য করেছেন। আশিকুর রহমান তানভির নামে একজন মন্তব্য করেছেন, ‘উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার লেখা ‘জুলাই’ বইটা নিয়ে অনেক কন্ট্রোভার্সি থাকবে সেটা আমার আগে থেকেই আন্দাজ করা বিষয়বস্তু। উনি যখন থেকে বইয়ের নাম ‘জুলাই’ রেখেছিলেন, ঠিক তখনই আমি বুঝতে পেরেছিলাম এই বই নিয়ে হট্টগোল বাঁধবে। এবং বাঁধলোও ঠিকই।
তিনি আরও বলেন, ‘এই ধরণের বই মূলত লিখতে হয় সমন্বিতভাবে সকলের গল্পকে মার্জ করে। নিজের পার্সপেক্টিভ থেকে লিখা একটা বইয়ের নাম ‘জুলাই’ রাখা যাবে না। রাখতে হবে “আমার দৃষ্টিকোণ থেকে জুলাই”। ইতিহাস কখনো একপাক্ষিক হয় না। ইতিহাস মূলত একধরণের ব্যাপক ওয়াইডস্প্রেড শিট। একা একা বই লিখলে সেটা মিসগাইডেড হবে এটাই নিয়ম।’
এস ইমতিয়াজ আহমেদ নামে একজন লেখেন, ‘ইতিহাস বিক্রিকারী আপনি। আপনার প্রতি যে সম্মান ছিলো সেটা আর নাই। কতটা আশা ছিলো এই নতুন দলের কাছে। সব আশা নিরাশা।’
যাযাদি/ এস