শুক্রবার, ০৯ মে ২০২৫, ২৬ বৈশাখ ১৪৩২

দুইশ আ.লীগ কর্মীকে দলে নিল জামায়াত

গুরুদাসপুর (নাটোর) প্রতিনিধি
  ০৮ মে ২০২৫, ১৯:১৪
আপডেট  : ০৮ মে ২০২৫, ১৯:২৬
দুইশ আ.লীগ কর্মীকে দলে নিল জামায়াত
প্রতীকি ছবি

নাটোরের গুরুদাসপুরে দীর্ঘদিনের আওয়ামী সমর্থক হিসেবে পরিচিত শিকারপুর গ্রামের ২০০ জন নারী-পুরুষ একযোগে জামায়াতে ইসলামীতে যোগদান করেছেন। গত (৬ মে) উপজেলার মশিন্দা ইউনিয়নের শিকারপুর গ্রামের এসব মানুষ জামায়াতের সহযোগী সদস্য হিসেবে ফরম পূরণের মাধ্যমে এই দলে অন্তর্ভুক্ত হন।

জানা গেছে, শিকারপুর গ্রামটি বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় "মুজিব নগর" নামে আখ্যায়িত ছিল। অধিকাংশ পরিবার আওয়ামী লীগের সমর্থক ছিল এবং দলীয় প্রভাবও ছিল ব্যাপক। তবে ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর থেকে গ্রামের রাজনৈতিক চিত্রে পরিবর্তনের আভাস দেখা যায়। আওয়ামী লীগ ছাড়িয়ে ভিন্ন রাজনৈতিক দলে যোগ দেওয়ার প্রবণতা শুরু হয়।

এরই ধারাবাহিকতায় কোনো আনুষ্ঠানিকতা ছাড়াই গোপনে প্রায় ২০০ জনেরও বেশি নারী-পুরুষ জামায়াতের সহযোগী সদস্য ফরম পূরণ করেন। জামায়াতে যোগ দেওয়া নতুন সদস্যদের মধ্যে ৩০ জন নারী রয়েছেন বলে জানা গেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকন নতুন যোগদানকারী বলেন, "আমরা কখনও আওয়ামী লীগের কোনো পদে ছিলাম না। শুধু রাজনৈতিক চাপে এবং পরিবেশের কারণে সমর্থন দেখাতে হতো। এমনকি অনেক সময় ভোট না দিয়েও আমাদের নামে ভোট হয়ে যেতো। এখন ইসলামের পথে চলতে চাই। জামায়াতের সাংগঠনিক শৃঙ্খলা আর ইসলামী আদর্শ দেখে আমাদের ভালো লেগেছে, তাই যোগ দিয়েছি।"

জামায়াতে যোগ দেওয়া আলহাজ আলী, মোঃ রেজাউল করিম, মনিরুল ইসলাম, মোশাররফ হোসেন, জুয়েল রানা, শিহাব আলী, মুনসুর আলীসহ আরও অনেকে জানান, "জামায়াত একটি সু-শৃঙ্খল পরিপাটি দল। তাদের মধ্যে কোনো চাঁদাবাজি, দখল বা মারামারি নেই। সংগঠনের মধ্যে যে শৃঙ্খলা ও ন্যায়বিচার রয়েছে, তা দেখে আমরা জামায়াতকে বেছে নিয়েছি।"

মশিন্দা ইউনিয়ন জামায়াতের সভাপতি মোঃ দুলাল হোসেন এনটিভি অনলাইনকে বলেন, "জামায়াতে যোগ দেওয়া আওয়ামী সমর্থকরা কেউ দলীয় কোনো পদে ছিল না। বিগত সরকার আমলে তারা রাজনৈতিক চাপে আওয়ামী লীগ সমর্থক হতে বাধ্য হয়েছিলেন। ইসলামের ন্যায়বিচারের পথে নিজেদের সংশোধন করতে এবং সুন্নাহ মোতাবেক চলার জন্যই তারা জামায়াতে যোগ দিয়েছেন। আমাদের সংগঠন সবসময়ই ইসলামের আদর্শ মেনে সমাজের কল্যাণে কাজ করে আসছে।"

গুরুদাসপুর উপজেলা জামায়াতের সেক্রেটারি (ভারপ্রাপ্ত আমির) মোঃ শরিফুল ইসলাম এনটিভি অনলাইনকে বলেন, "জামায়াতকে বেছে নেওয়া মানে মূলত সুন্নাহর পথে চলার অঙ্গীকার। আমাদের সংগঠন সুন্নাহ মোতাবেক পরিচালিত হয়, আর এই পথেই রয়েছে প্রকৃত শান্তি ও কল্যাণ। দীর্ঘ ১৫ বছর মানুষের ওপর যে জুলুম-নির্যাতন চলেছে, সেই অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে মানুষ ইসলামী আদর্শের দিকে ফিরে আসছে।"

তিনি আরও বলেন, "অনেকেই আগে আওয়ামী লীগের সমর্থক ছিলেন। কিন্তু ইসলামী মূল্যবোধে নিজেদের পরিচালিত করার জন্য তারা জামায়াতে যোগ দিয়েছেন। আমরা তাদের স্বাগত জানাই, তবে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছি—জামায়াতের নিয়মবিধি মেনে চলতে হবে। জামায়াতের নীতিমালা লঙ্ঘন করলে সংগঠনে থাকার সুযোগ নেই। আমাদের লক্ষ্য ইসলামের আদর্শে সমাজ গঠন, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা, এবং শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নিশ্চিত করা।"

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, শিকারপুরের মতো গ্রামগুলোর রাজনৈতিক ধারা পরিবর্তন স্থানীয় পর্যায়ে বড় ধরনের পরিবর্তনের ইঙ্গিত বহন করে। দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক চাপ এবং আদর্শিক অস্থিরতার পর, সাধারণ মানুষ ইসলামের নীতি-নৈতিকতার প্রতি ঝুঁকছে। জামায়াতের শৃঙ্খলা, সুশাসন এবং অপরাধমুক্ত ভাবমূর্তিও মানুষকে আকৃষ্ট করছে।

স্থানীয়ভাবে এই যোগদানের বিষয়টি নিয়ে নানা আলোচনা চলছে। অনেকে বলছেন, জামায়াতের প্রতি মানুষের এই আস্থার পেছনে রয়েছে রাজনৈতিক অস্থিরতা থেকে মুক্তি এবং ইসলামী ন্যায়ের পথে ফিরে আসার আকাঙ্ক্ষা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে