ডিসেম্বরের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন দাবিতে সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখবে বিএনপি। এসময়ের মধ্যে নির্বাচন-না হলে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি সমর্থন আর ধরে রাখবে না দলটি।
এই সরকারের নিরপেক্ষতা নিয়ে ইতোমধ্যেই প্রশ্ন তুলেছে বিএনপি। দলটির নেতারা বলছেন, ঐক্যের স্বার্থে অন্তর্বর্তী সরকারের সর্বোচ্চ নিরপেক্ষতা বজায় রাখার কথা ছিল। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, কোনো কোনো মহলের রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করাই যেন, অর্ন্তবর্তী সরকারের কর্মপরিকল্পনার অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
অন্যদিকে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ ছোট হওয়া উচিত বলে মনে করে বিএনপি। দলটির নেতারা বলছেন, একটি জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান করাই যেহেতু এই সরকারের প্রধান কাজ; তাই মাথাভারী উপদেষ্টা পরিষদ না রেখে শুধু রুটিন ওয়ার্ক (দৈনন্দিন কার্যক্রম) পরিচালনার জন্য একটি ছোট আকারের উপদেষ্টা পরিষদ রাখাই বাঞ্ছনীয়।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, বিএনপি এ বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের যৌক্তিকতার বিষয়টি বর্তমানে যেভাবে বিভিন্ন ফোরামে তুলে ধরছে, আগামী আরও বেশ কিছুদিন ঠিক একইভাবে তা অব্যাহত রেখে সরকারের ওপর চাপ বজায় রাখবে। জাতীয়তাবাদী যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের যৌথ উদ্যোগে বর্তমানে বিভাগীয় শহরে তারুণ্যের সমাবেশ চলছে।
সর্বশেষ আগামী ২৮ মে ঢাকায় বিভাগীয় তারুণ্যের সমাবেশ থেকে জাতীয় নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট দিনক্ষণের দাবিতে বিএনপির অবস্থান আরও স্পষ্ট করা হবে। এছাড়া ঈদুল আজহার পর দলটির সাংগঠনিক ও রাজনৈতিক কর্মসূচিও থাকবে। সেখান থেকেও নির্বাচনের জোরালো দাবি তুলে ধরা হবে। বিএনপি নেতারা বলছেন, ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন নিয়ে তারা কঠোর অবস্থানে রয়েছেন। এটা ক্রমেই বাড়বে। অবশ্য দলটি মনে করছে, আগামী জুলাই নাগাদ সরকারের তরফ থেকে নির্বাচনের দিনক্ষণের বিষয়টি স্পষ্ট করা হতে পারে।
নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এ বিষয়ে তার অবস্থান আগের মতোই। দেশের ভবিষ্যৎ পথ নির্ধারণের অধিকার একটি নির্বাচিত সরকারেরই রয়েছে। দেশের সার্বিক পরিস্থিতিতে সেনাপ্রধান তার যে অবস্থান ব্যাখ্যা করেছেন, সেটিকে যৌক্তিক বলছে বিএনপি। সরকার এটিও আমলে নেবে বলে দলটি মনে করে।
গত সপ্তাহে অন্তত দুটি ইস্যুতে বিএনপিকে হার্ডলাইনে দেখা গেছে। ঢাকার দক্ষিণে মেয়র পদে ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেনের শপথ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের নেতা সৌম্য হত্যার প্রতিবাদে রাজধানীতে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলে দলটির নেতাকর্মীরা। নির্বাচন নিয়ে বিএনপির যে শঙ্কা সেটিই মূলত দলটিকে হঠাৎ করে রাজপথে এমন সিদ্ধান্ত নিতে কিংবা তাদেরকে এই পথে ঠেলে দিয়েছে বলে দায়িত্বশীল নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে। দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত নিয়ে বিএনপি এই অবস্থান নিয়েছিল।
বিএনপি মনে করে, চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব। এমন অবস্থায় দলটির পক্ষ থেকে বার বার সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপের দাবি জানানো হলেও সরকারের তরফ থেকে স্পষ্ট ঘোষণা আসেনি। সেইসঙ্গে নানান ধরনের শঙ্কা, গুজব সামনে চলে আসায় সরকারকে একটি বার্তা দেওয়ার জন্য রাজপথে তাদের সাংগঠনিক শক্তি প্রদর্শন করে দলটি।
নেতারা বলছেন, এই সরকার ব্যর্থ হোক, সেটা তারা চান না। তারা শুরু থেকেই সরকারকে সর্বোতভাবে সহযোগিতা করে আসছেন। তবে তাদের নির্বাচনের দিনক্ষণের দাবি বারবার উপেক্ষিত হওয়ায় রাজপথে হঠাৎ বিশাল জমায়েতে শক্তি প্রদর্শনের মাধ্যমে তারা সরকারকে এই বার্তা দিতে চেয়েছে যে, বিএনপি চাইলে সরকারকে যেকোনো সময়ই অসহযোগিতা করতে পারে।
জানা গেছে, রাজপথে এমন কর্মসূচি অব্যাহত রাখা বিএনপির সিদ্ধান্ত নয়। কারণ, তারা এই সরকারকে কোনোভাবেই বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলতে চায় না। সর্বশেষ গত সোমবার অনুষ্ঠিত দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ ইস্যুতে তারা কমপক্ষে আরও দুই মাস সরকারের কর্মকাণ্ড পর্যবেক্ষণ করার সিদ্ধান্ত নেয়। এই সময় পরে নির্বাচন নিয়ে সরকারের তরফ থেকে কোনো সুস্পষ্ট দিনক্ষণ ঘোষণা করা না হলে কিংবা নির্বাচন প্রলম্বিত করার কোনো লক্ষণ স্পষ্ট হলে তখন রাজপথের কর্মসূচির কথা ভাববে বিএনপি।