যুক্তরাজ্য সফররত প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস লন্ডনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে বৈঠকে বসতে যাচ্ছেন। শুক্রবার (১৩ জুন) স্থানীয় সময় সময় ৯টা থেকে ১১টার মধ্যে এই বৈঠক হবে বলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানিয়েছেন।
মঙ্গলবার (১০ জুন) ঢাকার গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, প্রধান উপদেষ্টা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। তিনি যে হোটেলে উঠেছেন সেখানেই বৈঠক হবে।
এদিকে, ড. ইউনূসের যুক্তরাজ্য সফরের ঘোষণা আসার পর থেকেই তারেক রহমানের সঙ্গে বৈঠকের সম্ভাবনা নিয়ে রাজনীতির অঙ্গনে আলোচনা চলছিল, যদিও প্রধান উপদেষ্টার আনুষ্ঠানিক সফর সূচিতে বৈঠকের বিষয়টি ছিল না।
সোমবার (৯ জুন) বিএনপির চেয়ারপারসনের সাবেক প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান ফেসবুক স্ট্যাটাস দিয়েছেন অধ্যাপক ইউনূসের সঙ্গে তারেক রহমানের সাক্ষাৎ হওয়ার বিষয়ে। সেদিন রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটি একটি জরুরি বৈঠক সেরে ফেলেছে এই বৈঠককে কেন্দ্র করে।
সরকারের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জানায়, লন্ডনের স্থানীয় একটি হোটেলে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক হবে তারেক রহমানের। আগামী দিনের সম্ভাব্য এই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে অনুষ্ঠেয় এই বৈঠকের দিকে নজর রয়েছে রাজনীতিকদের।
ইতোমধ্যে গত ৬ জুন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস আগামী এপ্রিলের প্রথমার্ধে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা উল্লেখ করেছেন। আপাতত বিএনপির পক্ষ থেকে এই সিদ্ধান্তকে নাকচ করে দেওয়া হয়েছে। যদিও দলের অবস্থান শেষ পর্যন্ত নমনীয় হবে কিনা, এ আলোচনাও এখন সামনে।
সিনিয়র একাধিক রাজনীতিক আলাপে উল্লেখ করেছেন, নির্বাচনের সময়টিই এখন প্রধান আলোচ্য বিষয়। এক্ষেত্রে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের জন্য অধিকাংশ রাজনৈতিক দল চাপাচাপি করলেও শেষ পর্যন্ত দুই নেতার বৈঠক থেকে বিশেষ কিছু উঠে আসতে পারে।
বিএনপির সিনিয়র নেতারা মনে করছেন, দলীয়ভাবে বৈঠকের আগে আপাতত তারা এ বিষয়টিকে পর্যবেক্ষণে রেখেছেন। বৈঠকের পর দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সঙ্গে আলোচনার মধ্য দিয়ে পরবর্তী রাজনৈতিক করণীয় নির্ধারণ করবেন তারা।
গণতন্ত্র মঞ্চের অন্যতম নেতা, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, ‘দেশের ক্রান্তিকালে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপির কার্যকরী নেতা তারেক রহমানের সম্ভাব্য বৈঠকটি নিছকই সৌজন্য সাক্ষাৎ নয়, এই সাক্ষাতের গুরুত্ব ও তাৎপর্য অনেক। এই বৈঠকে দেশের অধিকাংশ রাজনৈতিক দল ও জনগণের চিন্তা ও আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটবে ঘটবে বলে আশা করি।’
সাইফুল হকের ভাষ্য, তিনি মনে করেন প্রধানত দুই নেতার সাক্ষাতটি সৌজন্যমূলক।
তিনি বলেন, ‘তারেক রহমান একটি দলের প্রধান কার্যকরী নেতা। সে হিসেবে সরকার প্রধানের সঙ্গে বৈঠকটি স্বাভাবিক। বিএনপি সিদ্ধান্ত নিয়েছে পজিটিভ, যে তারা সাক্ষাৎ করবেন। আমি মনে করি, বিএনপির যে বার্তা দেওয়া দরকার তা তারেক রহমান দেবেন। সরকারকে যে বিএনপি এবং বিরোধী দলগুলো সমর্থন করছে, সে বিষয়েও অবহিত করবেন।’
সাইফুল হক বলেন, সরকারের প্রধান যে তিনটি ম্যান্ডেট— বিচার, সংস্কার ও নির্বাচন, সে বিষয়ে তিনি বিএনপির বার্তা তুলে ধরবেন। নির্বাচনের ব্যাপারে বিএনপিসহ অধিকাংশ রাজনৈতিক দলগুলোর ভাবনা, যুক্তি তারেক রহমান তুলে ধরবেন।
একাধিক সিনিয়র রাজনীতিক জানান, ড. ইউনূসের সঙ্গে তারেক রহমানের ১৩ জুনের সাক্ষাৎটি হবে দুজনের প্রথম মোলাকাত। ফলে, দুই নেতার মুখোমুখি সাক্ষাতে রাজনৈতিক তাৎপর্য অনেক বেশি। বিশেষ করে তারেক রহমানের দেশে ফেরার প্রাসঙ্গিকতা, আগামী নির্বাচনের সময়, নির্বাচন পরবর্তী বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের এজেন্ডা, নানা দেশি-বিদেশি উদ্যোগ ও প্রসঙ্গ নিয়ে দুই নেতার মধ্যে আলোচনা হবে।
একাধিক রাজনীতিক বিষয়টির ‘স্পর্শকাতরতার’ প্রশ্নে উদ্ধৃত হয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি।
বৈঠকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সিনিয়র কোনও নেতা যোগ দেবেন কিনা, তা এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের লন্ডনযাত্রা সম্পর্কে আশা করছেন কেউ কেউ।