দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে নাজমুল হাসান পাপনের জায়গায় বিসিবি প্রধানের দায়িত্ব নিয়েছিলেন সাবেক অধিনায়ক ফারুক আহমেদ। তবে বৃহস্পতিবার (২৯ মে) সকাল থেকেই জোর গুঞ্জন-পদত্যাগ করতে যাচ্ছেন তিনি। বিষয়টি নিজেই উড়িয়ে দিয়েছেন। ফারুক আহমেদ বলেছেন, পদত্যাগ করার কোনো কারণ নেই।
ক্রীড়া মন্ত্রনালয় থেকে সরে যেতে বললেও ফারুক আহমেদ পদত্যাগ করতে চান না বলে জানিয়েছেন। বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদ সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘আমি কেন পদত্যাগ করব? কারণ জানতে চাই।’
বুধবার রাতে মন্ত্রনালয় থেকে ফারুককে সরে যেতে বলা হয়। আজ বৃহস্পতিবার (২৯ মে) দিনভর আলোচনার মধ্যে বিকালে ফারুক সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘এই মুহূর্তে আমি পদত্যাগ করার কথা চিন্তা করছি না। আমাকে সরে যেতে বলা হলেও কেন, আমাকে সরে যেতে হবে সেটা বলা হয়নি। এছাড়া এই পদে আমি নিজের ইচ্ছায় আসিনি, আমাকে নিয়ে আসা হয়েছে। বাকি সবাই থাকলে আমাকেই শুধু যেতে হবে কেন?’
ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূইয়ার সঙ্গে বুধবার (২৮ মে) রাতে সাক্ষাত করেন বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদ। সেই সাক্ষাতের পর তিনি জেনেছেন, বিসিবি সভাপতি পদে তাকে আর রাখতে চায় না সরকার। তাৎক্ষণিকভাবে তার মনেও প্রশ্ন জেগেছিল কেন? সে প্রশ্ন তিনি ক্রীড়া উপদেষ্টাকে করেছেনও।
‘ক্রীড়া উপদেষ্টার কাছে কারণও জানতে চাই। তিনি বলেন,‘ আমাকে নাকি সরকারের ওপরমহল আর পছন্দ করছে না। এখন সরকারে ক্রীড়া উপদেষ্টার ওপরমহল কে, সেটি বুঝে নেওয়ার ভার আমি আপনাদের ওপরই ছেড়ে দিলাম। আপনারাই বুঝে নিন।’
তিনি বলেছেন, ‘আমাকে আমার ব্যর্থতার কথা বলতো, তাহলে বুঝতাম যে আমি কোথায় কোথায় ভুল করেছি। কিন্তু সেসব কিছুই নয়। আমাকে শুধু বলা হয়, ওপরমহল আমাকে আর চাইছে না।’
এদিকে সাবেক অধিনায়ক ও আইসিসি কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম বুলবুলকে ক্রীড়া মন্ত্রণালয় সভাপতি করতে চায় বলে জানা যায়। আমিনুল ইসলাম বুলবুল আজ বৃহস্পতিবার (২৯ মে) সকালেই সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, বিসিবিতে যুক্ত হতে মন্ত্রণালয় থেকে তাকে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, তিনিও এই প্রস্তাবে রাজী আছেন।
গত বছর অগাস্ট মাসে ক্ষমতার পালাবদলের সঙ্গে বদলে যায় বিসিবির শীর্ষ পদ। আত্মগোপনে থেকে নাজমুল হাসান পাপন পদত্যাগ করেন। একই দিনে ক্রীড়া পরিষদের মনোনয়ন নিয়ে বিসিবিতে কাউন্সিলর হয়ে পরিচালক ও সভাপতি হন ফারুক আহমেদ।
ক্রীড়া পরিষদই আবার ফারুককে সরে যেতে বলছে। তিনি নিজে সরে না গেলে তার কাউন্সিলরশিপ সরিয়ে নেওয়া হতে পারে কিনা এই ব্যাপারে কিছু বলতে চাননি ফারুক। গত অগাস্টে ক্রীড়া পরিষদ জালাল ইউনূস ও আহমেদ সাজ্জাদুল আলম ববিকে পদত্যাগ করতে বলে। জালাল পদ ছেড়ে দিলেও সাজ্জাদুল অনড় ছিলেন, পরে তাকে সরিয়ে দেওয়া হয়। এই দুজনের ফাঁকা পদেই পরিচালক হক নাজমুল আবেদিন ফাহিম ও ফারুক আহমেদ।
সম্প্রতি বিভিন্ন ইস্যুতে সরকারের ক্রীড়া মন্ত্রনালয়ের সঙ্গে বিসিবি সভাপতি ফারুকের টানাপোড়েন চলছে। তাকে জোর করে সরিয়ে দেওয়া হলে আবার সরকারি হস্তক্ষেপের বিষয়টিও সামনে আসতে পারে। সব মিলিয়ে দেশের ক্রিকেটে দেখা দিয়েছে অচলাবস্থা ও অস্থিরতা।
ক্রীড়া উপদেষ্টা আর ফারুকের এমন মুখোমুখি অবস্থানে দাঁড়িয়ে যাওয়ার বিষয়টি বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য বিপদই ডেকে আনতে পারে। কারণ ক্রিকেট প্রশাসনে সরকারি হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে বরাবরই সোচ্চার বিশ্ব ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইসিসি।
এ ক্ষেত্রে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি তাদের। সরকারি হস্তক্ষেপের জন্য শ্রীলকা ও জিম্বাবুয়ের নিষিদ্ধ হওয়ার ঘটনা নিকট অতীতেই আছে।
ফারুককে সরিয়ে দেওয়া হলে বাংলাদেশের ওপরও নেমে আসতে পারে নিষেধাজ্ঞার খড়গ। আবার ফারুক পদত্যাগ করলেও প্রমাণ করা মুশকিল যে এই সিদ্ধান্ত সরকারি প্রভাবমুক্ত নয়।