রোববার, ১১ মে ২০২৫, ২৮ বৈশাখ ১৪৩২
জানালেন লুকাশেঙ্কো

ওয়াগনার প্রধান প্রিগোজিন এখন রাশিয়ায়

ম আছেন রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের জন্মভূমি সেইন্ট পিটার্সবার্গে ম প্রিগোজিনের বিদ্রোহকে নাটক মনে করেছেন বিশ্লেষকদের একাংশ
যাযাদি ডেস্ক
  ০৭ জুলাই ২০২৩, ০০:০০
ওয়াগনার প্রধান প্রিগোজিন এখন রাশিয়ায়
ইউক্রেনের পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর লভিভে বৃহস্পতিবার ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। এতে অন্তত চারজন নিহত হয়েছেন। একটি আবাসিক ভবনে ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানলে প্রাণহানির এই ঘটনা ঘটে। রুশ হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত সেই ভবন -আল-জাজিরা

গত মাসে রাশিয়ায় সশস্ত্র বিদ্রোহের নেতৃত্ব দেওয়া ওয়াগনার গ্রম্নপের প্রধান ইয়েভগেনি প্রিগোজিন এখন আর বেলারুশে নেই। তিনি বর্তমানে রাশিয়ায় অবস্থান করছেন বলে বৃহস্পতিবার বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেক্সান্ডার লুকাশেঙ্কো নিশ্চিত করেছেন। ইউক্রেন যুদ্ধের শুরু থেকে রাশিয়াকে সমর্থন করা ওয়াগনার গ্রম্নপ গত মাসে হঠাৎ করেই রুশ সেনাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ শুরু করে। সে সময় ইউক্রেনীয় বাহিনীর বিপক্ষে লড়াইয়ে রুশ সেনাদের সমর্থনের বদলে তারা রুশ বাহিনীর ওপরই পাল্টা আক্রমণ চালায়। সংবাদসূত্র : বিবিসি, রয়টার্স, আল-জাজিরা

গত ২৩ জুন রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের ঘোষণা দেন প্রিগোজিন। সেই ঘোষণা অনুযায়ী, নিজের সেনাদের রাজধানী মস্কোর দিকে পাঠান তিনি। তবে ওই দিন রাতে বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেক্সান্ডার লুকাশেঙ্কোর মধ্যস্থতায় বিদ্রোহ থামিয়ে দেন এই 'ওয়ার লর্ড'। পরে এক অডিও বার্তায় প্রিগোজিন বলেছিলেন, 'রুশ ভাই-বোনেদের রক্ত ঝরার আশঙ্কা এড়াতেই আমরা মস্কোর রাজপথে প্রতিবাদের সিদ্ধান্ত বাতিল করেছিলাম।' এবার তিনি ফিরলেন রাশিয়ায়। আর ফিরলেন একেবারে সেইন্ট পিটার্সবার্গেই, যা পুতিনের জন্মভূমি।

ওই সময় রাশিয়ার সরকার ও প্রিগোজিনের মধ্যে কয়েকটি বিষয়ে চুক্তি হয়। এই চুক্তির অন্যতম শর্ত ছিল- তাকে রাশিয়া ছেড়ে বেলারুশে চলে যেতে হবে। চুক্তি অনুযায়ী, দেশটিতে গিয়েছিলেনও তিনি। তবে প্রিগোজিন ঠিক কোথায় ছিলেন, সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

বর্তমানে ওয়াগনার প্রধান রাশিয়ায় আছেন, এমনটি জানিয়ে বেলারুশের প্রেসিডেন্ট বলেছেন, 'চুক্তি অনুযায়ী প্রিগোজিন ২৭ জুন এসেছিলেন। এখন তিনি এখন রাশিয়ার সেইন্ট পিটার্সবার্গে আছেন, তিনি বেলারুশে নেই।' লুকাশেঙ্কোর বৃহস্পতিবারের বিবৃতিটি তার আগের দাবির সম্পূর্ণ বিপরীত। কারণ, তিনি গত সপ্তাহে ঘোষণা করেছিলেন, প্রিগোজিন বেলারুশে পৌঁছেছেন। 'বিবিসি'ও প্রিগোজিনের ব্যক্তিগত বিমানকে জুন মাসের শেষ দিকে বেলারুশে উড়তে শনাক্ত করেছিল। কিন্তু ওই দিনই তা রাশিয়ায় ফিরে আসে। বিমানটি এরপর সেইন্ট পিটার্সবার্গে ও মস্কোর মধ্যে একাধিকবার চলাচল করেছে। যদিও এটি স্পষ্ট নয়, এতে প্রিগোজিন ছিলেন কিনা।

উলেস্নখ্য, যুদ্ধক্ষেত্রে রাশিয়ার সঙ্গে বেশকিছু বিষয় নিয়ে দ্বন্দ্বের কারণেই মূলত ওয়াগনার গ্রম্নপের মধ্যে বিদ্রোহ শুরু হয়। সম্প্রতি বেশ কয়েকটি ভিডিও বার্তা প্রকাশ করেন ইয়েভগেনি। এসব ভিডিও বার্তায় তিনি জানান, রাশিয়া বাখমুতে তাদের ওপর নির্ভর করলেও তাদের কোনো রকম সাহায্য করা হচ্ছে না। ফলে গোলাবারুদের অভাবে তার বাহিনীর সদস্যদের মৃতু্য হচ্ছে। বাখমুত থেকে গ্রম্নপের সদস্যদের ফিরিয়ে নেওয়ার কথা বলেছিলেন তিনি। এরপরই দ্রম্নত নিজেদের সিদ্ধান্ত জানায় মস্কো। প্রশাসন বিবৃতি দিয়ে জানায়, ওয়াগনার গ্রম্নপকে সবরকম সাহায্য করা হবে। তাদের গোলাবারুদ ও অস্ত্র সরবরাহ করা হবে।

গত বছরের ২৪ ফেব্রম্নয়ারি ইউক্রেনে হামলা চালায় রাশিয়া। ওই সময় রাশিয়ার সেনাবাহিনীর সঙ্গে এই হামলায় যোগ দেয় ভাড়াটে সেনাবাহিনী ওয়াগনার গ্রম্নপও। এই বাহিনীর সেনারা দীর্ঘ আট মাস লড়াই করে জুনের প্রথম দিকে ইউক্রেনের বাখমুত শহর দখল করে।

তবে এর মধ্যে অন্য সম্ভাবনাও দেখছেন কিছু বিশ্লেষক। কারণ, যিনি পুতিনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছিলেন, একসময় তিনিই ছিলেন তার বিশ্বস্ত সহচর। তাকে বলা হতো 'পুতিনের রাঁধুনি'। কেননা, ক্রেমলিনে খাবার সরবরাহ করত প্রিগোজিনেরই রেস্তোরাঁ ও কেটারিং সংস্থা। ২০১৪ সালে পুতিনের মদদেই ওয়াগনার গ্রম্নপ তৈরি করেন প্রিগোজিন। সেই কারণেই তার হঠাৎ এই বিদ্রোহের পরও পুতিনের নীলনকশা মেনেই ওয়াগনার বিদ্রোহ, এই সম্ভাবনাকে উড়িয়ে দিচ্ছেন না বিশ্লেষকদের একাংশ। তারা মনে করছেন, আসলে পুতিনের হাত শক্ত করতেই এই বিদ্রোহের 'নাটক', এমন সম্ভাবনা তাই রয়েই গেছে। সেইন্ট পিটার্সবার্গে প্রিগোজিনের প্রত্যাবর্তনে যা সম্ভবত আরও জোরালো হলো বলেই মনে করা হচ্ছে।

এর মধ্যে বেলারুশের প্রেসিডেন্টের আরেকটি বক্তব্য এই জল্পনায় হাওয়া দিয়েছে। প্রেসিডেন্ট লুকাশেঙ্কো বৃহস্পতিবার বলেছেন, রাশিয়ার ভাড়াটে সেনাদের গ্রম্নপ ওয়াগনারকে বেলারুশের প্রতিরক্ষায় ব্যবহার করা হবে। লুকাশেঙ্কো এদিন সাংবাদিকদের বলেন, 'আমি একেবারেই চিন্তিত ও উদ্বিগ্ন নই যে, আমাদের এখানে (বেলারুশে) একটি নির্দিষ্ট সংখ্যক যোদ্ধা মোতায়েন থাকবে।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে