নজিরবিহীনভাবে বাড়ছে বৈশ্বিক তাপমাত্রা। ফলে পরপর দুই দিন তাপমাত্রায় রেকর্ড দেখল বিশ্ব। জলবায়ু পরিবর্তন এবং এল নিনো আবহাওয়া পরিস্থিতিই এর জন্য দায়ী। এমন পরিস্থিতিতে আরও একটি দাবদাহময় গ্রীষ্মের মুখোমুখি উত্তর গোলার্ধ। যন্ত্রপাতির মাধ্যমে তাপমাত্রার রেকর্ড রাখা ও স্যাটেলাইটের মাধ্যমে তাপমাত্রা মনিটরিং শুরুর পর গত সোমবার ইতিহাসে সবচেয়ে 'গরম দিন' দেখে বিশ্ব। এদিন বিশ্বের গড় তাপমাত্রা ১৭ দশমিক ০১ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছায়। তবে 'সবচেয়ে গরম' দিনের এই রেকর্ড ভেঙে গেছে মাত্র এক দিনের ব্যবধানেই। মঙ্গলবার বিশ্বের তাপমাত্রা আরও বৃদ্ধি পায়। এদিন তাপমাত্রা ১৭ দশমিক ১৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ওঠে। যা আগের দিনের তুলনায় শূন্য দশমিক ১৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি। সংবাদসূত্র : গার্ডিয়ান, এপি, সিনহুয়া
কয়েক সপ্তাহ ধরে মারাত্মক 'হিট ডোম'-এর প্রভাবে ভুগছে আমেরিকার দক্ষিণাঞ্চল। অসহনীয় গরমে পুড়ছে চীনের রাজধানী বেইজিং। টানা কয়েকদিনের তীব্র রোদে বেড়েছে হিটস্ট্রোকের ঝুঁকি। আর সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্যগত দিকটি চিন্তা করে দেশটির সরকার বেইজিংয়ে ঘরের বাইরের সব ধরনের কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে। উত্তর আফ্রিকায় তাপমাত্রা প্রায় ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি যেতে দেখা গেছে। এমনকি অ্যান্টার্কটিকায় শীতকাল চলা সত্ত্বেও অস্বাভাবিক উষ্ণ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে।
ইম্পেরিয়াল কলেজ অব লন্ডনের 'গ্রান্থাম ইন্সটিটিউট ফর ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যান্ড দ্য এনভায়রনমেন্ট'র জলবায়ু বিজ্ঞানী ফ্রিডেরিক অটো বলেছেন, এটি উদযাপন করার মতো কোনো মাইলফলক নয়। এটি মানুষ ও বাস্তুতন্ত্রের জন্য মৃতু্যদন্ড। একই কলেজের জলবায়ু বিজ্ঞানের প্রভাষক ডক্টর পাওলো সিপ্পি বলেছেন, 'এল নিনো এখনো সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছায়নি এবং উত্তর হ্যাম্পশায়ারে পূর্ণ গ্রীষ্মকাল চলছে। যদি সামনের দিনে আবারও রেকর্ড ভেঙে যায়, তাহলে এতে আশ্চর্য হওয়ার কিছু থাকবে না।'
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এমন অস্বাভাবিক তাপমাত্রা সামনে আরও দেখা যাবে। মঙ্গলবার সর্বোচ্চ তাপমাত্রার যে নতুন বিশ্বরেকর্ড হয়েছে, সেটি আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই আবারও ভেঙে যেতে পারে। সোমবারের আগে বিশ্বে সবচেয়ে গরম দিনের রেকর্ডটি হয়েছিল ২০১৬ সালের আগস্ট মাসে। সে বছর এক দিন বিশ্বের গড় তাপমাত্রা ১৬ দশমিক ৯২ সেলসিয়াসে পৌঁছেছিল। এর প্রায় সাত বছর পর আবারও অসহনীয় গরম পড়তে দেখা যাচ্ছে।
গত মঙ্গলবার জাতিসংঘের বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা নিশ্চিত করে, আবহাওয়ার অস্বাভাবিক অবস্থা এল নিনো আবারও ফিরে এসেছে। বিশেষজ্ঞরা সতর্কতা দিয়েছেন, মনুষ্য কারণে বৃদ্ধি পাওয়া বৈশ্বিক তাপমাত্রা ও এল নিনোর সংমিশ্রণে বিশ্বে সামনে আরও অসহনীয় উষ্ণ দিন দেখা যেতে পারে।