সোমবার, ০৪ নভেম্বর ২০২৪, ১৮ কার্তিক ১৪৩১
বিবিসির বিশ্লেষণ

ভারত-কানাডার বিরোধ নিয়ে পশ্চিমারা কেন উদ্বিগ্ন

যাযাদি ডেস্ক
  ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:০০
জাস্টিন ট্রুডো নরেন্দ্র মোদি

ভারত-কানাডার মধ্যকার কূটনৈতিক বিরোধ নিয়ে বিশ্বনেতারা উদ্বিগ্ন। এ বিরোধ যাতে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অন্যান্য ক্ষেত্রে ছড়িয়ে না পড়ে, নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে না পারে, তা নিশ্চিতে পশ্চিমা মন্ত্রী-কর্মকর্তারা নিরলসভাবে কাজ করবেন।

যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্য পশ্চিমা শক্তিগুলো এখন যা চায়, তা হলো অটোয়া-নয়াদিলিস্নর মধ্যে চলমান বিরোধের জেরে যেন ভারতের সঙ্গে তাদের বিভক্তি বা দূরত্ব তৈরি না হয়।

কেননা ভূরাজনৈতিক দাবার বোর্ডে ভারত এখন একটি গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়। ভারত শুধু একটি ক্রমবর্ধমান শক্তিই নয়, তারা বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশ। তারা বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ। তা ছাড়া পশ্চিমারা ভারতকে চীনের বিরুদ্ধে একটি সম্ভাব্য শক্তিশালী প্রতিরক্ষা প্রাচীর হিসেবে বিবেচনা করে আসছে।

বিষয়টি সম্প্রতি ভারতে অনুষ্ঠিত জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনেও স্পষ্ট হয়েছিল। এই শীর্ষ সম্মেলনে ইউক্রেনের পশ্চিমা মিত্ররা একটি চূড়ান্ত ঘোষণার বিষয়ে সম্মত হয়। তবে ইউক্রেনে আগ্রাসন চালানোর জন্য এই ঘোষণাপত্রে রাশিয়ার নাম উলেস্নখ করে নিন্দা জানানো হয়নি।

সম্মেলনের ঘোষণাসংক্রান্ত বিবৃতি নিয়ে বিরোধ এড়িয়ে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষার বিষয়টিকে বেছে নিয়েছিল ইউক্রেনের পশ্চিমা মিত্ররা। যদিও ব্যাপারটি ইউক্রেনকে কিছুটা ক্ষুব্ধ করে। ভারত-কানাডার বিরোধ পশ্চিমা কূটনীতিকদের মধ্যে নানা উদ্বেগ-শঙ্কার জন্ম দিয়েছে। এর মধ্যে একটি হচ্ছে ভারত-কানাডা বিরোধে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কোনো একটি পক্ষে অবস্থান নেওয়ার ঝুঁকির দিকটি।

অটোয়া-নয়াদিলিস্নর মধ্যকার উত্তেজনা চলতি সপ্তাহের শুরুতে নাটকীয়ভাবে বেড়ে যায়। গত সোমবার কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো তার দেশের পার্লামেন্টে শিখ নেতা হরদীপ সিং নিজ্জর হত্যাকান্ড নিয়ে কথা বলেন। গত জুনে কানাডার পশ্চিমাঞ্চলে আততায়ীর গুলিতে নিহত হন কানাডীয় নাগরিক হরদীপ। এ হত্যাকান্ডে ভারতের হাত থাকার অভিযোগ তোলেন ট্রুডো।

পার্লামেন্টে ট্রুডো বলেন, হরদীপ হত্যায় ভারতীয় এজেন্টদের জড়িত থাকার বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ তার দেশের গোয়েন্দাদের কাছে আছে। কানাডার মাটিতে একজন কানাডীয় নাগরিককে হত্যার সঙ্গে কোনো বিদেশি সরকারের জড়িত থাকার বিষয়টি তার দেশের সার্বভৌমত্বের লঙ্ঘন, যা অগ্রহণযোগ্য। ট্রুডোর এমন বক্তব্যের পরই সোমবার কানাডায় ভারতের বৈদেশিক গোয়েন্দা সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস উইংয়ের (র) প্রধানকে বহিষ্কার করে অটোয়া।

ট্রুডোর বক্তব্যকে অযৌক্তিক বলে প্রত্যাখ্যান করে ভারত। একই সঙ্গে অটোয়ার পাল্টা হিসেবে ভারতে নিযুক্ত কানাডার এক জ্যেষ্ঠ কূটনীতিককে বহিষ্কার করে নয়াদিলিস্ন।

সাম্প্রতিক সময়ে ভারত নিজেকে উন্নয়নশীল দেশগুলোর নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছে। এই দেশগুলোকে 'গেস্নাবাল সাউথ' বৈশ্বিক দক্ষিণ নামেও ডাকা হয়। এর মধ্যে অনেক দেশই ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসনের নিন্দা জানায়নি। যুক্তরাষ্ট্র ও কিছু ইউরোপীয় দেশ এসব দেশের মন জয় করতে কূটনৈতিক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তারা এই দেশগুলোকে বলছে, এ যুদ্ধ তাদের জন্য একটি উদ্বেগের বিষয়। পশ্চিমা কূটনীতিকেরা কোনোভাবেই চাইবেন না, ভারত-কানাডা বিরোধের জেরে তাদের এই প্রচেষ্টা ভেস্তে যাক। কমনওয়েলথভুক্ত দু'টি দেশের বিরোধের জেরে উত্তর বনাম দক্ষিণের একটি লড়াই বেধে যাক। ট্রান্স-আটলান্টিক শক্তির সঙ্গে উন্নয়নশীল বিশ্বের একটা দ্বন্দ্ব তৈরি হোক।

কানাডার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, হরদীপ হত্যার বিষয়টি মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকের কাছে উত্থাপন করেছেন ট্রুডো। আপাতত যা দেখা যাচ্ছে, তা হলো কানাডার মিত্ররা অটোয়ার প্রতি সতর্কতার সঙ্গে সমর্থন বজায় রেখেছে।

হোয়াইট হাউস বলেছে, যুক্তরাষ্ট্র এই হত্যার অভিযোগের বিষয়ে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। এ নিয়ে কানাডার তদন্ত এগিয়ে নেওয়া, দোষীদের বিচারের মুখোমুখি করাটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়ায় শিখ সম্প্রদায়ের একটা বৃহৎ জনগোষ্ঠী রয়েছে। ফলে অটোয়া-নয়াদিলিস্নর বিরোধ যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়ায় অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে প্রভাব ফেলতে পারে।

যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেমস ক্লিভারলি বলেছেন, কানাডা যে গুরুতর অভিযোগ তুলেছে, তা অত্যন্ত মনোযোগ দিয়ে শুনবে তার দেশ। তিনি সোমবারই অভিযোগটি নিয়ে কানাডার পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেলানি জোলির সঙ্গে কথা বলেছেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে