মঙ্গলবার, ১৩ মে ২০২৫, ৩০ বৈশাখ ১৪৩২
গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসন

যুদ্ধবিরতির আশা ম্স্নান হতেই ব্যাপক হামলা

ইসরাইল ইচ্ছাকৃতভাবে যুদ্ধবিরতি এবং জিম্মি মুক্তি চুক্তির আলোচনাকে দুর্বল করছে : হামাস ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার প্রস্তাব ইসরাইলি পার্লামেন্টে বাতিল
যাযাদি ডেস্ক
  ১৯ জুলাই ২০২৪, ০০:০০
আপডেট  : ২৪ জুলাই ২০২৪, ১৬:০৭
যুদ্ধবিরতির আশা ম্স্নান হতেই ব্যাপক হামলা
ইসরাইলি হামলায় ধ্বংসস্তূপ গাজা

প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু হামাসের ওপর চাপ বাড়ানোর ঘোষণা দেওয়ায় মার্কিন-ঘোষিত যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনার আশা ম্স্নান হয়ে যাওয়ার পর ইসরাইল বুধবার গাজায় ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়েছে। হামাসের রাজনৈতিক নেতা ইসমাইল হানিয়াহ ইসরাইলকে অভিযুক্ত করে বলেছেন, তারা ইচ্ছাকৃতভাবে একটি যুদ্ধবিরতি এবং জিম্মি মুক্তি চুক্তির জন্য আলোচনাকে দুর্বল করছে। কারণ, তারা যুদ্ধ শেষ করতে চায় না। এদিকে, ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখন্ডে ইসরাইলি বর্বর হামলায় আরও ৮১ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এতে করে উপত্যকাটিতে নিহতের মোট সংখ্যা পৌঁছে গেছে প্রায় ৩৮ হাজার ৮০০ জনে। এছাড়া গত বছরের অক্টোবর থেকে চলা এই হামলায় আহত হয়েছেন আরও ৮৯ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি। তথ্যসূত্র : এএফপি

ইসরাইলি সেনাবাহিনী বলেছে, 'সামরিক কাঠামো, যোদ্ধাদের অবকাঠামো, তাদের ইউনিটের অবস্থান এবং অস্থায়ী কাঠামো' লক্ষ্য করে তারা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ২৫টি হামলা চালিয়েছে। বারবার হামাসকে নির্মূল করার ঘোষণা দেওয়া নেতানিয়াহু গত মঙ্গলবার জোর দিয়ে বলেছেন, ক্রমবর্ধমান চাপ সত্ত্বেও হামাসের বিরুদ্ধে ইসরাইল অভিযানে পিছু হটবে না। তিনি বলেন, 'জীবিত সব জিম্মি এবং মৃতদের দেশে ফিরিয়ে আনা এবং যুদ্ধের সব লক্ষ্য অর্জনের জন্য চাপ আরও বাড়ানোর এটাই ঠিক সময়।' তিনি পার্লামেন্টে দেওয়া বক্তৃতায় এই লক্ষ্যের কথা তুলে ধরে বলেছেন, 'আমরা তাদের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছি। আমরা নিরঙ্কুশ বিজয়ের পথে আছি।'

1

হামাস শাসিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরাইলি হামলায় ৫৪ জন নিহত হয়েছে। এদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। ভূখন্ডের 'সিভিল ডিফেন্স এজেন্সি' জানিয়েছে, মধ্য গাজার নুসেইরাত শরণার্থী শিবিরে তিনটি হামলায় ৩০ জন নিহত হয়েছে। জাতিসংঘ পরিচালিত একটি স্কুলে, অন্যটি একটি বাড়িতে এবং তৃতীয়টি একটি মসজিদে হামলা চালানো হয়েছে। গাজার সিভিল ডিফেন্স এজেন্সি পরে বুধবার মধ্য ও উত্তর গাজা জুড়ে ইসরাইলি অভিযানে ১৫ জনের মৃতু্যর খবর দিয়েছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে খান ইউনিসের কাছে তিন শিশু এবং একজন নারী নিহত হয়েছেন। নাসের হাসপাতালের একটি মেডিকেল সূত্র জানিয়েছে, দক্ষিণ গাজায় রাফাহ শহরের উত্তর-পশ্চিমে শাকুশ এলাকায় ইসরাইলি বোমাবর্ষণে দুজন নিহত হয়েছেন।

ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ মনে করছে, গাজা উপত্যকা জুড়ে ধ্বংস হওয়া বাড়ির ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনো ১০ হাজারেরও বেশি লোক নিখোঁজ রয়েছেন। গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির দাবি জানিয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব সত্ত্বেও ইসরাইল অবরুদ্ধ এই ভূখন্ডে তার নৃশংস আক্রমণ অব্যাহত রেখেছে।

গাজার অন্তত ৯০ শতাংশ তাদের বাড়িঘর ছেড়ে যেতে বাধ্য হয়েছেন। তাদের অনেকেই জাতিসংঘ পরিচালিত স্কুলে আশ্রয় চাইছেন। এর মধ্যে সাতটি স্কুল গত ৬ জুলাই থেকে ইসরাইলি হামলার শিকার হয়েছে।

ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের জন্য জাতিসংঘের সংস্থা (ইউএনআরডাবিস্নউএ) জানিয়েছে, ৯ মাসের বেশি সময় ধরে চলা যুদ্ধে গাজা জুড়ে জাতিসংঘ পরিচালিত স্কুলগুলোর প্রায় ৭০ শতাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। হামলার শিকার হওয়া নুসেইরাতের জাতিসংঘ পরিচালিত একটি স্কুলে পরিবারের সঙ্গে আশ্রয় নেওয়া উম্মে মোহাম্মদ আল-হাসানাত বলেন, 'কেন তারা আমাদের টার্গেট করে, আমরা তো নিরীহ মানুষ!' তিনি বলেন, 'আমরা অস্ত্র বহন করি না, শুধু বসে থাকি এবং নিজেদের এবং আমাদের সন্তানদের নিরাপত্তা খোঁজার চেষ্টা করি।'

প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ৩১ মে ইসরাইলের যুদ্ধবিরতি রোডম্যাপ প্রকাশ করার পর থেকে ওয়াশিংটন ইসরাইল এবং হামাসের মধ্যে একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তির জন্য চাপ দিচ্ছে। মিসরীয় ও কাতারি মধ্যস্থতাকারীদের প্রচেষ্টা সত্ত্বেও, ইসরাইল ও হামাসের মধ্যে পরোক্ষ আলোচনার কোনো অগ্রগতি হয়নি। মঙ্গলবার গভীর রাতে তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিদানের সঙ্গে টেলিফোনে হামাস নেতা অচলাবস্থার জন্য ইসরাইলকে দায়ী করেন। গত রোববার হামাসের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা বলেন, ইসরাইলের প্রাণঘাতী হামলার পর দলটি বর্তমান আলোচনা থেকে সরে আসছে। কিন্তু যদি তাদের মনোভাব পরিবর্তন হয়, তবে তারা ফিরে আসতে প্রস্তুত।

ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার প্রস্তাব

ইসরাইলি পার্লামেন্টে বাতিল

ফিলিস্তিনকে পৃথক রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার একটি প্রস্তাব ইসরাইলি পার্লামেন্ট 'নেসেটে' সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে বাতিল হয়েছে। বৃহস্পতিবার প্রস্তাবটি পার্লামেন্টে উত্থাপিত হয়। পার্লামেন্টে ৬৮-৯ ভোটে বাতিল হয় ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার প্রস্তাবটি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে