সার্ভার জটিলতায় রাঙ্গামাটির রাজস্থলী উপজেলার তিন টি ইউনিয়নে বন্ধ রয়েছে সরকারের বিনামূল্যে ৩০ কেজি চাল (ভিডব্লিউবি) এর আবেদন কার্যক্রম। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে ভোক্তভোগি নারীরা।
সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী ১২ মে আবেদনের শেষ দিন হলেও সার্ভার জটিলতার কারণে উপজেলার ইউনিয়নে থমকে আছে সরকারের বিনামূল্যে ৩০ কেজি চালের আবেদনের কার্যক্রম। নারীরা সকাল থেকে সারারাত ইউনিয়ন উদ্যাক্তার নিকট বসে থাকলেও আবেদন করতে পারছেনা।
সার্ভার সচল করে সময় বাড়ানোর দাবী জানিয়েছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সাধারণ মানুষ। সরকারি ৩০ কেজি চাউল সহায়তার সার্ভার বিপর্যয়, অনলাইনে আবেদন করতে সারারাত এমন কি বিভিন্ন কম্পিউটারের দোকানে এবং ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারে মহিলাদের দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করেও হতাশ হয়ে বাড়ি ফিরছে। সার্ভার সচল করার পাশাপাশি আবেদনের সময় সীমা বাড়ানোর দাবী করেছেন ভুক্তভোগীরা।
জানা যায়, সারা দেশের অসচ্ছল নারীদের প্রতি মাসে বিনামূল্যে ৩০ কেজি করে চাল দেবে সরকার। ভালনারেবল উইমেন বেনিফিট প্রোগ্রামের আওতায় এ চাল দেওয়া হবে। সম্প্রতি এ-সংক্রাক্ত পরিপত্র জারি করেছে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়। পরিপত্রে বলা হয়েছে, ভালনারেবল উইমেন বেনিফিট কার্যক্রমের ২০২৫-২৬ চক্রের উপকারভোগী নির্বাচনের জন্য একটি ওয়েব পোর্টাল অ্যাপ চালু করা হয়েছে।
এটি মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় বাস্তবায়িত দেশের গ্রামীণ দুস্থ নারীদের আর্থসামাজিক উন্নয়নে একটি বৃহত্তর সামাজিক নিরাপত্তামূলক কর্মসূচি। এর আওতায় দেশের দরিদ্র নারীকে দুই বছর মেয়াদে, প্রতি মাসে খাদ্য সহায়তা হিসেবে পুষ্টি সমৃদ্ধ ৩০ কেজি করে চাল দেওয়া হবে। আর আবেদনের সময় দেওয়া হয়েছে ১২ মে পর্যন্ত।
কিন্তু শুরু থেকেই সার্ভার জটিলতায় রাজস্থলী উপজেলার তিন টি ইউনিয়নে বন্ধ রয়েছে সরকারের বিনামূল্যে ৩০ কেজি চাল (ভিডব্লিউবি) এর আবেদন কার্যক্রম। নারীরা দিন রাত পর্যন্ত কম্পিউটারের দোকানে বসে থাকলেও আবেদন করতে পারছেনা। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে ভোক্তভোগি নারীরা। সার্ভার সচল ও আবেদনের সময় বাড়ানো না হলে যেভাবে সার্ভার সমস্যা হচ্ছে এতে হাজার হাজার হতদরিদ্র নারী সরকারের বিনামূল্যে ৩০ কেজি চাল পাওয়া থেকে বঞ্চিত হবে।
ভুক্তভোগী কয়েক জন নারী জানান, গত কয়েক দিন আগে আমার আইডি কার্ড এবং মোবাইল রেখে এসেছি ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারে। কিন্তু সার্ভার বন্ধ থাকার কারণে এখনো আবেদন করতে পারিনি।
আমাদের মত আরো অনেক নারীর একই অবস্থা হয়েছে। ঘিলাছড়ি ইউনিয়নের বাসিন্দা মনোয়ারা বেগম বলেন, একটি আবেদন করতে সারা দিন অপেক্ষা করেছি, কিন্তু সার্ভার ডাউনের কারণে আবেদন করতে পারিনি। পরের দিন অনেক কষ্ট করে পরে দিন আবেদন করে প্রিন্ট দিতে পেরেছি।
ঘিলাছড়ি ইউনিয়নের ডিজিটাল স্বত্বাধিকারী নিরন্তন তনচংগ্যা জানান, আবেদন শুরু হওয়ার পর থেকে সার্ভার জটিলতার কারণে আমি একশত জনের মধ্যে মাত্র ৩ জনকে আবেদন করে দিতে পেরেছি। আমার মত প্রতিটি কম্পিউটারের দোকানের অবস্থা একই। সরকারী সার্ভারে যদি এই অবস্থা হয় তা হলে ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মান যেন স্বপ্নেই থেকে গেল। তিনি সার্ভার সচল করে সময় বাড়ানোর জন্য সরকারের প্রতি জোর দাবী জানান। সার্ভার সমস্যার কথা আমরা রাজস্থলী উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে জানিয়েছি। যেভাবে সার্ভার সমস্যা দেখা দিচ্ছে এতে ৩০% লোকও আবেদন করতে পারবেনা। এতে হাজার হাজার হতদরিদ্র নারী সরকারের বিনামূল্যে ৩০ কেজি চাল পাওয়া থেকে বঞ্চিত হবে। তাই সার্ভার সচল করে আবেদনের সময় বাড়ানোর জন্য জোর দাবী জানাচ্ছি।
রাজস্থলী উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা সিথি চাকমা জানান, সার্ভার সংক্রান্ত কিছু জটিলতার কারণে সমস্যা হচ্ছে। আমরা ঊর্ধবতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি। শিঘ্রই এ সমস্যার সমাধান হবে। তবে কবে নাগাদ সার্ভার সমস্যা ঠিক হবে তারও কোনো নিশ্চয়তা নেই।
রাজস্থলীর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) সজীব কান্তি রুদ্র বলেন, সার্ভারটা মাঝেমধ্যে ডাউন হয় পরে আবার রিভাইজ করে। এমন একটা সমস্যা আছে। সারাদেশ থেকে একসাথে একদিনে হাজার হাজার আবেদন হচ্ছে তাই এই সমস্যা হচ্ছে। সময় বাড়ানো হবে কি না তা ঊর্ধবতন কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ অব্যাহত রয়েছে।