শনিবার, ১০ মে ২০২৫, ২৭ বৈশাখ ১৪৩২
পাল্টাপাল্টি হামলা

যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ছে ইসরাইল-হিজবুলস্নাহ!

ইসরাইলি হামলার জবাবে হিজবুলস্নাহর তিন শতাধিক রকেট হামলা ইসরাইলে ৪৮ ঘণ্টার জরুরি অবস্থা জারি
যাযাদি ডেস্ক
  ২৬ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০
যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ছে ইসরাইল-হিজবুলস্নাহ!
হিজবুলস্নাহর একটি রকেট ধ্বংস করে ইসরাইল

প্রস্তুতি চলছিলই। এবার বড়সড় হামলার পথে হাঁটল লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুলস্নাহ। একটি বিবৃতি দিয়ে তারা জানিয়েছে, ইসরাইলের গুরুত্বপূর্ণ সামরিক ঘাঁটিতে বেশ কয়েকটি ড্রোন হামলা চালানো হয়েছে। লেবানন থেকে ইসরাইলে তিন শতাধিক রকেট ছোড়া হয়েছে। হিজবুলস্নাহর হামলার পাল্টা হামলার ছক কষছে ইসরাইলি সেনাও। এরই মধ্যে সে দেশে ৪৮ ঘণ্টার জন্য জরুরি অবস্থা জারি হয়েছে। এদিকে পাল্টাপাল্টি হামলার পর বৈরুতে জর্ডানের সব ফ্লাইট বাতিল করেছে। ইসরাইলের বেন গুরিয়ন বিমানবন্দরও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। পরে তা খুলে দেওয়া হয়। তথ্যসূত্র : এএফপি, রয়টার্স, আল-জাজিরা

ইসরাইল অবশ্য বলেছে, তারা এই অঞ্চলে সর্বাত্মক যুদ্ধ চায় না। তবে রোববারের (২৫ আগস্ট) এই হামলা তারাই আগে শুরু করেছে। আর এর পেছনে অদ্ভুত অজুহাতও দিয়েছে। ইসরাইল জানিয়েছে, হিজবুলস্নাহ হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে- এমন তথ্য পেয়ে তারা আগেভাগেই হামলা চালিয়েছে। এখন কী হতে যাচ্ছে? ইসরাইল কি হিজবুলস্নাহর সঙ্গে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ছে?

রোববার ভোরে দক্ষিণ লেবাননে হামলা চালায় ইসরাইলি বাহিনী। এরপরই ইসরাইলের ১১টি সামরিক ঘাঁটি ও ব্যারাক লক্ষ্য করে পাল্টা রকেট হামলা চালায় হিজবুলস্নাহ। ইসরাইল দাবি করেছে, তাদের বাহিনী এসব রকেটের বেশিরভাগই ধ্বংস ও লক্ষ্যভ্রষ্ট করা হয়েছে। তবে ইসরাইলের এমন দাবি নাকচ করে দিয়ে হিজবুলস্নাহ প্রধান হাসান নাসরালস্নাহ বলেছেন, তাদের আক্রমণাত্মক ড্রোনগুলো নির্দিষ্ট সময়ে চালু করা হয়েছিল এবং সেগুলো সীমান্ত অতিক্রম করে ইসরাইলে তাদের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হেনেছে।

ইসরাইলের বিরোধী নেতা ইয়ার লাপিদ হামলার পক্ষে সাফাই গেয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম 'এক্সে' দেওয়া পোস্টে তিনি বলেছেন, হিজবুলস্নাহর বিরুদ্ধে আক্রমণ আত্মরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় কাজ। বিশ্বের উচিত ইসরাইলের আত্মরক্ষার অধিকারকে দ্ব্যর্থহীন সমর্থন দেওয়া। অবশ্য ইসরাইলি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসরাইল কাৎজ বলেছেন, তারা এই অঞ্চলে সর্বাত্মক যুদ্ধ চান না। ইরানের নেতৃত্বে অশুভ শক্তি হিসেবে উলেস্নখ করা শত্রম্নপক্ষের কাছ থেকে তারা তাদের নাগরিক ও ভূখন্ড রক্ষার কাজ করছেন বলেও উলেস্নখ করেছেন তিনি।

ইসরাইলে ৪৮ ঘণ্টা জরুরি অবস্থা

এদিকে পাল্টাপাল্টি হামলার পর ইসরাইলে ৪৮ ঘণ্টার জন্য জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছে। স্থানীয় সময় রোববার সকাল ৬টা থেকে দেশজুড়ে জরুরি অবস্থা জারি করেছেন দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ত। ইসরাইলি সামরিক বাহিনী লেবাননের ভেতরে হিজবুলস্নাহকে লক্ষ্য করে বড় ধরনের হামলা চালানোর পরই এই জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়। এক বিবৃতিতে ইয়োভ গ্যালান্ত বলেন, 'ইসরাইলি নাগরিকদের বিরুদ্ধে আসন্ন হুমকি নস্যাৎ করার জন্য আমরা লেবাননে সুনির্দিষ্ট হামলা চালিয়েছি। আমরা বৈরুতের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি এবং আমরা আমাদের নাগরিকদের রক্ষা করার জন্য আমাদের সব উপায় ব্যবহার করতে বদ্ধপরিকর।'

পৃথক এক বিবৃতিতে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিনকে সার্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে জানিয়েছেন ইয়োভ গ্যালান্ত। বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, দুই নেতা আঞ্চলিক উত্তেজনা এড়ানোর গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করেছেন।

রোববার ইসরাইলি সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র ড্যানিয়েল হ্যাগারি বলেছেন, লেবাননে হিজবুলস্নাহর 'হুমকি' দূর করতে 'সক্রিয়ভাবে' বিমান হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরাইল। তিনি বলেন, কিছু সময় আগে ইসরাইলের সামরিক বাহিনী জানতে পারে, হিজবুলস্নাহ ইসরাইলি ভূখন্ডের দিকে ক্ষেপণাস্ত্র ও রকেট নিক্ষেপের প্রস্তুতি নিচ্ছে। এই হুমকি দূর করতে লেবাননের লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালাচ্ছে ইসরাইলি বাহিনী।

হিজবুলস্নাহ জানিয়েছে, গত জুলাই মাসের শেষদিকে তাদের কমান্ডার ফুয়াদ শুকর হত্যার বদলা নিতে হামলার প্রথম পর্যায় সম্পন্ন হয়েছে। এতে পরিস্থিতি এখনকার মতো শান্ত রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

'লেভান্ট ইন্সটিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যাফেয়ার্স'র পরিচালক সামি নাদেরের মতে, 'পুরো অঞ্চলকে পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধের দিকে টেনে নেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।' কিন্তু হিজবুলস্নাহ ও ইসরাইল তা 'এড়াতে চেষ্টা করছে।' এরপর কী হবে? জানতে চাইলে সামি নাদের বলেন, 'এটা এখনো স্পষ্ট নয়।' গাজায় যুদ্ধের প্রায় এক বছর হতে চলেছে। এমন পরিস্থিতিতে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, ইসরাইল কি আরেকটি যুদ্ধের জন্য উদগ্রীব? ইসরাইল ও হিজবুলস্নাহ নেতারা বলছেন, তারা আর একটি পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধ চান না। তবে উভয় পক্ষই এজন্য প্রস্তুত বলে জানিয়েছে।

উলেস্নখ্য, পশ্চিম এশিয়ায় আমেরিকার অন্যতম বিশ্বস্ত সঙ্গী ইসরাইল। সাম্প্রতিক পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছে ওয়াশিংটনও। পেন্টাগন থেকে আগেই পশ্চিম এশিয়ায় আরও বাহিনী বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। একদিকে যখন ইসরাইল দফায় দফায় যোগাযোগ করছে আমেরিকার সঙ্গে, অন্যদিকে তখন ইরানও যোগাযোগ রাখছে চীনের সঙ্গে। ফলে ইসরাইল-ইরান সরাসরি যুদ্ধে শামিল হলে পরোক্ষভাবে আমেরিকা, চীনের মতো দেশগুলোও জড়িয়ে পড়বে পশ্চিম এশিয়ার সংঘাতে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে