ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকা নিয়ন্ত্রণকারী সশস্ত্র ইসলামি রাজনৈতিক গোষ্ঠী হামাসকে কাতার ছেড়ে চলে যাওয়ার নোটিশ দিয়েছে দেশটির সরকার। প্রায় এক সপ্তাহ আগে এই নোটিশ দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন কাতারের একজন উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তা। ওই কর্মকর্তা জানিয়েছেন, গাজায় শান্তি স্থাপনের জন্য সর্বশেষ যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব মেনে না নেওয়া এবং অবশিষ্ট জিম্মিদের মুক্তি দিতে হামাস অস্বীকৃতি জানানোয় আমেরিকার 'অনুরোধে' এই পদক্ষেপ নিয়েছে দোহা। দুই সপ্তাহ আগে হামাসকে প্রস্তাবের খসড়া পাঠানো হয়েছিল। তথ্যসূত্র : সিএনএন, রয়টার্স
কাতারের ওই কর্মকর্তা জানান, '২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামলা চালিয়ে যাদের হত্যা করেছিল হামাস, তাদের মধ্যে মার্কিন নাগরিকরাও ছিল। যাদের জিম্মি হিসেবে ধরে নিয়ে গেছে হামাস, তাদের মধ্যেও মার্কিন নাগরিকরা রয়েছে। যুদ্ধবিরতির সর্বশেষ প্রস্তাব এবং জিম্মিদের মুক্তি দেওয়ার জন্য দুই সপ্তাহ আগে আমেরিকা হামাসকে আহ্বান জানিয়েছিল; কিন্তু হামাস তাতে সায় দেয়নি। তারপর ওয়াশিংটন কাতার সরকার বরাবর অনুরোধ করে, হামাসকে যেন দোহা ছাড়ার নোটিশ দেওয়া হয়। আমরা সেই অনুরোধে সাড়া দিয়েছি।' তবে নোটিশ দেওয়া হলেও কত দিনের মধ্যে হামাস নেতাদের দোহা ছাড়তে হবে, এ সংক্রান্ত কোনো তথ্য জানাতে অপারগতা জানিয়েছেন ওই কর্মকর্তা।
মার্কিন সংবাদ মাধ্যম 'ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল'কে কাতারের এক সরকারি কর্মকর্তা বলেছিলেন, 'গাজায় যুদ্ধবিরতি সংক্রান্ত সংলাপ কার্যত থেমে আছে এবং শিগগিরই আবার তা শুরু হবে- এমন সম্ভাবনা এই মুহূর্তে খুবই কম। কাতার শুরু থেকে এই যুদ্ধের মধ্যস্থতাকারী দেশ হিসেবে ভূমিকা রেখে আছে এবং যুদ্ধ থামানোর জন্য মধ্যস্থতাকারী হিসেবে যা যা করা প্রয়োজন, তার সবই করেছে। এ কারণে যুদ্ধের যে পর্যায় বর্তমানে চলছে, তা কাতার এবং হামাস- উভয়ের জন্য অস্বস্তিকর এবং উভয়পক্ষের মধ্যেই এক ধরনের অবিশ্বাস সৃষ্টি হয়েছে।'
এদিকে, নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ঊর্ধ্বতন মার্কিন কর্মকর্তা বলেন, 'জিম্মিদের মুক্তি দেওয়ার জন্য প্রস্তাবগুলো বারবার প্রত্যাখ্যান করার পর এর (হামাসের) নেতাদের আমেরিকার কোনো অংশীদার (দেশের) রাজধানীতে আর স্বাগত জানানো উচিত নয়। কয়েক সপ্তাহ আগে হামাস আরেকটি জিম্মি মুক্তির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করার পর আমরা এটি কাতারকে পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিয়েছি।'
আগের যুদ্ধবিরতি আলোচনার পর্বগুলোতে মে মাসে বাইডেনের দেওয়া যুদ্ধবিরতি প্রস্তারের একটি সংস্করণ হামাস মেনেও নিয়েছিল, এরপরও গাজায় ভবিষ্যৎ সামরিক উপস্থিতি নিয়ে ইসরায়েল নতুন কিছু দাবি তোলে যা নিয়ে মতবিরোধে ওই চুক্তি বাধাগ্রস্ত হয়। এই আলোচনার সঙ্গে ঘনিষ্ঠাভাবে জড়িত একটি সূত্র জানান, হামাস সেই সময় অনুভব করে ইসরায়েল একটি চুক্তির 'শেষ মুহূর্তে' গোল পোস্ট সরিয়ে নিয়েছে। এতে তারা উদ্বিগ্ন হয়ে ওঠে এই ভেবে যে, তারা কোনো ছাড় দিলে ইসরায়েল আরও নতুন নতুন দাবি তুলবে।
এদিকে, প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন গাজা ও লেবাননে ইসরায়েলের আক্রমণ বন্ধ করার চেষ্টায় শেষ উদ্যোগ নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। গত মঙ্গলবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান ডোনাল্ড ট্রাম্প দেশটির পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন। এতে শেষ কয়েক সপ্তাহের জন্য হোয়াইট হাউসে থাকা বাইডেনের উদ্দেশ্য সাধনের শক্তি উলেস্নখযোগ্যভাবে হ্রাস পাবে।
প্রসঙ্গত, ১৯৮৮ সালে প্রতিষ্ঠিত সশস্ত্র রাজনৈতিক গোষ্ঠী হামাস সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পক্ষপাতি। পাশাপাশি এই গোষ্ঠীটি ইসরায়েলকে নিশ্চিহ্ন করতে চায় এবং 'দ্বিরাষ্ট্র সমাধান নীতিতেও' তাদের আস্থা নেই।
২০০৬ সালের নির্বাচনে জিতে ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকার নিয়ন্ত্রণ নেয় রাজনৈতিক গোষ্ঠী হামাস। তারপর আর নির্বাচন হয়নি গাজায়। তবে গাজা শাসন করলেও হামাসের শীর্ষ নেতৃত্বের কেউ সেখানে থাকেন না। মার্কিন প্রস্তাবের ভিত্তিতে ২০১২ সাল থেকে কাতারে অবস্থান করছেন হামাসের শীর্ষ নেতারা। গোষ্ঠীটির রাজনৈতিক শাখার প্রধান দপ্তরও দোহায় অবস্থিত। এছাড়া কাতার হামাসের সবচেয়ে বড় আর্থিক সহায়তা দাতা দেশ। ২০২৩ সালে হামলার আগ পর্যন্ত হামাসকে প্রতি বছর গড়ে ১৮০ কোটি ডলার সহায়তা দিয়েছে কাতার।