সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের পতনের পর দেশটিতে একের পর এক হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী। সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস (এসওএইচআর) জানিয়েছে, গত রোববার থেকে এখন পর্যন্ত ইসরায়েল সিরিয়ায় অন্তত ৩১০ বার বিমান হামলা চালিয়েছে। বিমান হামলার পাশাপাশি গোলান মালভূমিতে সিরিয়ার নিয়ন্ত্রিত এলাকাও দখল করেছে ইসরায়েল। এ ছাড়া ইসরায়েলি বাহিনী গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট দখল করা অব্যাহত রেখেছে। মঙ্গলবার সিরিয়ার নিরাপত্তা সূত্র জানিয়েছেন, ইসরায়েলি বাহিনী সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কের প্রায় ২৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে পৌঁছে গেছে। তথ্যসূত্র : রয়টার্স, আল-জাজিরা, বিবিসি, এএফপি
ইসরায়েলি সেনারা সিরিয়ায় দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর কাতানায় পৌঁছে গেছে বলে জানিয়েছেন এক সিরিয়ান নিরাপত্তা সূত্র। যদিও এ বিষয়ে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী আইডিএফ থেকে তাৎক্ষণিক কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। আইডিএফ এর আগে এক বিবৃতিতে বলেছে, তারা সিরিয়ার সংঘাতে নিজেকে জড়াবে না। বাফার জোন দখল করাকে নিজেদের প্রতিরক্ষামূলক পদক্ষেপ বলে জানিয়েছে আইডিএফ। তবে সিরিয়ার সঙ্গে সীমান্ত এলাকার নির্ধারিত বাফার জোনের বাইরে সিরীয় ভূখন্ডে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর প্রবেশের খবর অস্বীকার করেছে তেল আবিব।
গত রোববার বাশার আল-আসাদের সরকারের পতনের পরপরই সিরিয়া নিয়ন্ত্রিত গোলান মালভূমির একটি বড় অংশ দখল করে নেয় ইসরায়েল। অঞ্চলটির পাঁচটি গ্রামের বাসিন্দাদের ঘরে থাকারও নির্দেশ দেয় ইসরায়েলি বাহিনী। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু জানান, গোলান মালভূমির বাফার জোনে প্রবেশ করেছে তাদের বাহিনী। ১৯৭৪ সালের যুদ্ধবিরতি চুক্তি অনুযায়ী অঞ্চলটিতে এই বাফার জোন ঘোষণা করা হয়েছিল। নেতানিয়াহু বলেন, 'পুরোনো ওই চুক্তি কার্যত ধ্বংস হয়ে গেছে। সিরীয় সেনারা তাদের অবস্থান ছেড়ে চলে যাওয়ায় আমরা বাধ্য হয়েছি এমন পদক্ষেপ নিতে।' তিনি বলেন, 'আমাদের সীমানায় কোনো শত্রম্ন শক্তির উপস্থিতি আমরা বরদাশত করব না।'
উলেস্নখ্য, ১৯৬৭ সালের যুদ্ধে ইসরায়েল গোলান মালভূমির একটি অংশ দখল করে এবং পরে তা সংযুক্ত করে নেয়। আমেরিকা ছাড়া বাকি বিশ্ব এটিকে অবৈধ দখলকৃত ভূমি হিসেবেই বিবেচনা করে।
দামেস্কসহ সিরিয়াজুড়ে লাগাতার
বিমান হামলা ইসরায়েলের
এদিকে, বিদ্রোহীরা যখন সরকার গঠনের চেষ্টা করছে, তখন সিরিয়াজুড়ে ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। রাজধানী দামেস্কসহ মধ্যপ্রাচ্যের এই দেশটির বিভিন্ন স্থানে বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক সিরীয় পর্যবেক্ষক সংস্থা সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস (এসওএইচআর) জানিয়েছে, ইসরায়েল গত ৪৮ ঘণ্টায় কমপক্ষে ২৫০ বার বিমান হামলা চালিয়েছে সিরিয়ায়। মঙ্গলবার দামেস্কেও বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। এক প্রতিবেদন বলা হয়েছে, সিরিয়ার সামরিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ বেশির ভাগ অঞ্চলকে ধ্বংস করে দিয়েছে ইসরায়েল। সিরিয়ার বেশ কিছু বিমানবন্দরেও হামলা হয়েছে। যদিও দামেস্কে হামলার অভিযোগ নিয়ে এখন পর্যন্ত কোনো মন্তব্য করেনি ইসরায়েল।
এদিকে, বাশারের পতনের পর সিরিয়ার ওপর হামলা শুরু করায় আন্তর্জাতিক মঞ্চেও ইসরায়েলকে প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে। যদিও জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে এ বিষয়ে নিজেদের অবস্থান জানিয়েছে ইসরায়েল সরকার। তারা বলেছে, সিরিয়ায় আকাশপথে হামলাকে সীমিত এবং সাময়িক। নিজেদের নাগরিকদের রক্ষা করতেই এই পদক্ষেপ বলে দাবি তাদের। ইসরায়েল বলছে, বাশার সরকারের পতনের পর অস্ত্রশস্ত্র যাতে 'উগ্রপন্থিদের হাতে চলে না যায়' সেজন্য তারা পদক্ষেপ নিয়েছে। গৃহযুদ্ধে বিধ্বস্ত সিরিয়ার সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর অভ্যন্তরীণ সংঘাতে তাদের কোনো যোগ নেই বলে দাবি নেতানিয়াহুর প্রশাসনের।
সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস বলছে, গত দুই দিনে সিরিয়ায় শত শত হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি বিমানগুলো। এর মধ্যে একটি দামেস্কের একটি সাইট আছে, যেটি ইরানের বিজ্ঞানীরা রকেট উন্নয়নের কাজে ব্যবহার করতেন।
এই হামলা এমন সময় হচ্ছে, যখন জাতিসংঘের রাসায়নিক অস্ত্র সম্পর্কিত পর্যবেক্ষণ সংস্থা সিরিয়ায় রাসায়নিক অস্ত্রের মজুদ থাকলে তা নিরাপদ রাখার বিষয়ে সতর্কবার্তা দিয়েছে। জাতিসংঘের অর্গানাইজেশন ফর দ্য প্রহিবিশন অফ কেমিক্যাল উইপনস (ওপিসিডাবিস্নউ)-এর মতে, রাসায়নিক অস্ত্র বলতে তাই বোঝানো হয়, যে রাসায়নিক দ্রব্য ইচ্ছাকৃতভাবে কারও মৃতু্য বা ক্ষতি করার কাজে ব্যবহৃত হয়। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, রাসায়নিক অস্ত্রের ব্যবহার নিষিদ্ধ, এমনকি সামরিক স্থাপনাকে টার্গেট করার ক্ষেত্রেও। কারণ এই অস্ত্র ছড়িয়ে পড়ে, কোনো সুনির্দিষ্ট টার্গেটে সীমাবদ্ধ থাকে না।
সিরিয়ার কতগুলো বা কোথায় রাসায়নিক অস্ত্র আছে, তা জানা যায়নি। তবে সাবেক প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ এ ধরনের অস্ত্র মজুদ করেছিলেন বলে বিশ্বাস করা হয়। এ বিষয়ে তিনি যে ঘোষণা দিয়েছিলেন সেটিও ছিল অসম্পূর্ণ।
\হ