পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়ায় সন্ত্রাসীদের হামলায় ১৬ জন সেনাসদস্য নিহত হয়েছেন। শনিবার এক বিবৃতিতে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর মিডিয়া শাখা ইন্টার-সার্ভিসেস পাবলিক রিলেশনস (আইএসপিআর)। আইএসপিআর জানিয়েছে, ২১ ডিসেম্বর রাতে দক্ষিণ ওয়াজিরিস্তান জেলার মাকিন এলাকায় সন্ত্রাসীরা একটি নিরাপত্তা চৌকিতে হামলার চেষ্টা চালায়। সেনা সদস্যরা সাহসিকতার সঙ্গে ওই হামলা প্রতিহত করেন। সংঘর্ষে ৮ সন্ত্রাসী নিহত হয়। তবে তীব্র গোলাগুলির সময় ১৬ জন সেনা সদস্যও প্রাণ হারান।

এ হামলায় গুরুতর আহত হয়েছেন পাঁচজন। পাকিস্তান তালেবান নামে পরিচিত জঙ্গি গোষ্ঠী তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি) হামলার দায় স্বীকার করেছে।

পুলিশ কর্মকর্তা হিদায়াত উলস্নাহ জানান, শুক্রবার স্থানীয় সময় রাত ২টায় নিরাপত্তা বাহিনীর একটি পোস্টে হামলা চালানো হয়। হামলাকারীরা হালকা এবং ভারী অস্ত্র ব্যবহার করেছে। এলাকায় একটি তলস্নাশি অভিযান চলছে।

তবে, টিটিপি দাবি করেছে, হামলায় ৩৫ জন সেনা নিহত এবং ১৫ জন আহত হয়েছেন। যদিও তারা তাদের যোদ্ধাদের হতাহতের বিষয়ে কোনো তথ্য দেয়নি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন জ্যেষ্ঠ গোয়েন্দা কর্মকর্তা এএফপিকে বলেন, খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশের মাকিন এলাকার একটি সেনা তলস্নাশিচৌকিতে ওই হামলায় ৩০ জনের বেশি অংশ নেন। তিনি আরও বলেন, হামলায় ১৬ সেনা নিহত এবং ৫ জন গুরুতর আহত হয়েছেন।

হামলা চালিয়ে সশস্ত্র ব্যক্তিরা তলস্নাশিচৌকিতে থাকা তারবিহীন যোগাযোগের যন্ত্র, বিভিন্ন নথিপত্র ও অন্যান্য সামগ্রী পুড়িয়ে দেন। পরে পালিয়ে যান তাঁরা। আফগান সীমান্ত থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরে পাকিস্তানের অভ্যন্তরে এ হামলা হয়।

ওই কর্মকর্তা বলেন, হামলা চালিয়ে সশস্ত্র ব্যক্তিরা তলস্নাশিচৌকিতে থাকা তারবিহীন যোগাযোগের যন্ত্র, বিভিন্ন নথিপত্র এবং অন্যান্য সামগ্রী পুড়িয়ে দেন। পরে পালিয়ে যান তাঁরা। আফগান সীমান্ত থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরে পাকিস্তানের অভ্যন্তরে এ হামলা হয়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে দ্বিতীয় আরেকজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা হামলায় হতাহত সেনাদের ওই সংখ্যা নিশ্চিত করেছেন।

সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ঘটনাস্থলে তলস্নাশি অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে এবং হামলাকারীদের বিচারের আওতায় আনার জন্য কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আইএসপিআর বলেছে, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে পাকিস্তানের নিরাপত্তা বাহিনী প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফ এই হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন এবং নিহত সেনা সদস্যদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন। এক বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, আমাদের সাহসী সেনারা সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অসামান্য সাহসিকতা দেখিয়েছেন। সমগ্র জাতি তাদের আত্মত্যাগের জন্য কৃতজ্ঞ।

প্রধানমন্ত্রী নিহত সেনা সদস্যদের পরিবারগুলোর প্রতি সমবেদনা জানিয়ে তাদের জন্য প্রার্থনা করেন এবং দেশের সুরক্ষায় সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে দৃঢ় সংকল্প পুনর্ব্যক্ত করেন। এর আগে, গত ডিসেম্বর ১৯-২০ ডিসেম্বর রাতে খাইবার জেলায় পাকিস্তান-আফগান সীমান্তে অনুপ্রবেশ প্রতিহত করতে গিয়ে এক সেনা সদস্য নিহত হন। এসময় প্রাণ হারায় চার সন্ত্রাসীও।

সাম্প্রতিক মাসগুলোতে পাকিস্তানে সন্ত্রাসী হামলার সংখ্যা উলেস্নখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। একটি প্রতিবেদনে উলেস্নখ করা হয়েছে, চলতি বছরের প্রথম তিন ত্রৈমাসিকে সন্ত্রাসী হামলা এবং নিরাপত্তা বাহিনীর পাল্টা অভিযানে মোট ১ হাজার ৫৩৪ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঘটনা ঘটেছে খাইবার পাখতুনখোয়া এবং বেলুচিস্তানে।

সূত্র: ডন