রাশিয়ার কাজান শহরে ড্রোন হামলার প্রতিক্রিয়ায় ইউক্রেনকে ধ্বংস করার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভস্নাদিমির পুতিন। শনিবার তাতারস্তান অঞ্চলের এই শহরে ছয়টি ড্রোন আবাসিক ভবনে এবং একটি ড্রোন একটি শিল্প কারখানায় আঘাত হানে। এই ঘটনার পর রবিবার এক ভিডিও বক্তৃতায় পুতিন বলেন, যারা আমাদের দেশকে ধ্বংস করতে চায়, তারা এর বহু গুণ বেশি ধ্বংসযজ্ঞের মুখোমুখি হবে এবং তাদের এই কাজের জন্য অনুশোচনা করতে হবে।
শনিবার সকালের ওই হামলায় আনুষ্ঠানিকভাবে এখনো কোনো হতাহতের খবর জানানো হয়নি। তবে রুশ গণমাধ্যম জানিয়েছে, জানালার কাচ ভেঙে তিনজন সামান্য আঘাত পেয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়ানো ভিডিওতে দেখা যায়, ড্রোনের আঘাতে একটি উঁচু ভবনে আগুন ধরে যায় এবং বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।
কাজান শহরটি ইউক্রেনের সীমান্ত থেকে এক হাজার কিলোমিটারেরও বেশি দূরে অবস্থিত। যদিও ইউক্রেন এই হামলার দায় স্বীকার করেনি। তবে এটি কিয়েভে রুশ ক্ষেপণাস্ত্র হামলার প্রতিক্রিয়া বলে ধারণা করা হচ্ছে।
পুতিন অতীতে কিয়েভের কেন্দ্রে হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলার হুমকি দিয়েছিলেন। এরই মধ্যে রাশিয়া পূর্ব ইউক্রেনে নতুন অগ্রগতির দাবি করেছে। রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, তারা খারকিভ অঞ্চলের লোজোভা গ্রাম এবং দোনেৎস্ক অঞ্চলের সোনৎসিভকা গ্রাম দখল করেছে।
সোনৎসিভকা রাশিয়ার জন্য কৌশলগতভাবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এটি কুরাখোভের নিকটে অবস্থিত। কুরাখোভে সম্পদসমৃদ্ধ এলাকা রাশিয়ার প্রায় ঘিরে ফেলা হয়ে গেছে এবং এটি মস্কোর জন্য দোনেৎস্ক দখলের চাবিকাঠি হতে পারে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, মস্কো ২০২৪ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতা গ্রহণের আগেই যতটা সম্ভব এলাকা দখল করতে চাইছে। ট্রাম্প ইউক্রেন সংকট সমাধানে দ্রম্নত পদক্ষেপ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও কোনো নির্দিষ্ট সমাধানের পরিকল্পনা জানাননি।
রাশিয়ার সেনাবাহিনী দাবি করেছে, তারা এ বছর ১৯০টিরও বেশি ইউক্রেনীয় বসতি দখল করেছে। ইউক্রেন বর্তমানে জনবল এবং গোলাবারুদের সংকটের কারণে প্রতিরোধ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে।
\হএর আগে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেন, যে রাশিয়ার আরও আগেই ইউক্রেনে আক্রমণ শুরু করা উচিত ছিল এবং যুদ্ধের জন্য আরও ভালোভাবে প্রস্তুত থাকা প্রয়োজন ছিল। বছরের শেষ সংবাদ সম্মেলনে বৃহস্পতিবার পুতিন বলেন, পেছনে তাকিয়ে মনে হয়, ২০২২ সালের আক্রমণের জন্য ব্যবস্থাগত প্রস্তুতি থাকা দরকার ছিল। ওই আক্রমণকে তিনি অবশ্য বিশেষ সামরিক অভিযান হিসেবে বর্ণনা করেন।
রাশিয়া ২০১৪ সালে ইউক্রেনের ক্রিমিয়া দখল করে এবং পূর্ব ইউক্রেনে রুশপন্থী বাহিনী সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে। এর আট বছর পর পুতিন কিয়েভ দখলের চেষ্টা করেন।
চার ঘণ্টার সংবাদ সম্মেলনে পুতিন সিরিয়ার অপসারিত নেতা, রাশিয়ার আরও আক্রমণাত্মক পারমাণবিক নীতি এবং অভ্যন্তরীণ নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। সংবাদ সম্মেলনটি রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন টিভি চ্যানেল সম্প্রচার করে।
এদিন সংবাদ সম্মেলনে পুতিন একটি বড় নীল পর্দার সামনে হাজির হন, যেখানে রাশিয়ান ফেডারেশনের একটি মানচিত্র প্রদর্শন করা ছিল। ওই মানচিত্রে ইউক্রেনের দখলকৃত অংশও অন্তর্ভুক্ত ছিল।
তিনি সাধারণ নাগরিক, বিদেশি সাংবাদিক এবং পেনশনধারীদের কাছ থেকে প্রশ্ন নেন। তবে এটি ছিল একটি অত্যন্ত পরিকল্পিত এবং কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত অনুষ্ঠান। বিবিসির রাশিয়া সম্পাদক স্টিভ রোজেনবার্গ পুতিনের কাছে জানতে চান, ২৫ বছর আগে বরিস ইয়েলৎসিন রাশিয়াকে যেখানে রেখে গিয়েছিলেন, সেই তুলনায় দেশ কি আরও ভালো অবস্থায় রয়েছে? জবাবে পুতিন বলেন, রাশিয়া তার 'সার্বভৌমত্ব' পুনরুদ্ধার করেছে। তিনি বলেন, এর আগে যা ঘটছিল, তাতে রাশিয়া সম্পূর্ণভাবে সার্বভৌমত্ব হারানোর পথে ছিল।
সিরিয়ায় বাশার আল-আসাদ সরকারের পতন নিয়ে জানতে চাইলে পুতিন অনেকটা জোর দিয়েই বলেন, এটি ক্রেমলিনের পরাজয় নয়। পরিস্থিতি 'জটিল' হয়ে পড়েছিল। চলতি মাসের শুরুর দিকে বাশার আল-আসাদ দামেস্ক ছেড়ে পালিয়ে মস্কোয় আশ্রয় নেন। পুতিন জানান, এখনো আসাদের সঙ্গে তার কথা হয়নি। তবে শিগগিরই কথা বলার পরিকল্পনা রয়েছে।
\হআন্তজাতিক অপর এক গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, শনিবার রাশিয়ার কাজান শহরে ইউক্রেনীয় ড্রোন হামলায় একটি আবাসিক ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এই হামলার স্থান মূল যুদ্ধক্ষেত্র থেকে এক হাজার কিলোমিটারেরও বেশি দূরে অবস্থিত। রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, স্থানীয় সময় সকাল ৭টা ৪০ মিনিট থেকে ৯ টা ২০ পর্যন্ত তিন দফায় ড্রোন হামলা হয়।
তাতারস্তান আঞ্চলিক সরকারের প্রেস সার্ভিস জানায়, হামলায় আটটি ড্রোন ব্যবহৃত হয়েছে। এর মধ্যে ছয়টি আবাসিক ভবনে ও একটি শিল্প এলাকায় আঘাত হানে এবং আরেকটি ড্রোন ভূপাতিত করা হয়। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এই ঘটনায় কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। ইউক্রেন এই হামলার দায় স্বীকার করেনি।
ড্রোন হামলার কারণে কাজান বিমানবন্দরে পেস্নন ওঠানামা সাময়িকভাবে বন্ধ ছিল বলে জানিয়েছে রাশিয়ার আকাশ পরিবহন কর্তৃপক্ষ রোসাভিয়াতসিয়া।
পূর্ব ইউক্রেনের দোনেৎস্ক অঞ্চলের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিতে লড়াই অব্যাহত রেখেছে রাশিয়া। শনিবার রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তারা কোস্তিয়ানতিনোপলস্কে গ্রামটি দখল করেছে। রাশিয়া এই গ্রামটিকে ওস্ত্রভস্কি নামে উলেস্নখ করেছে। গ্রামটি কুরাখোভ শহরের ১০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত। রাশিয়ার সেনারা কুরাখোভ শহর আক্রমণ চালিয়ে ঘিরে ফেলার চেষ্টা করছে বলে জানিয়েছে ইউক্রেনের মানচিত্র বিশ্লেষণকারী দল ডিপস্টেট।
সূত্র: আল-জাজিরা