ইসরাইল ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর গাজায় বোমা হামলা শুরু করে। এর আগে হামাস সীমান্ত পেরিয়ে প্রায় ১ হাজার ২০০ মানুষ হত্যা এবং ২৫১ জনকে জিম্মি করে গাজায় নিয়ে যায়। এক সপ্তাহ পর স্থল অভিযান শুরু হলেও এটি দ্রম্নত শেষ হবে বলে ধারণা ছিল। তবে ১৫ মাস ধরে চলা এই সংঘর্ষ বুধবার যুদ্ধবিরতির ঘোষণার মধ্য দিয়ে শেষ হতে যাচ্ছে। এটি ইসরাইলের ১৯৪৮ সালের স্বাধীনতার যুদ্ধের পর সবচেয়ে দীর্ঘ যুদ্ধ। ৭ অক্টোবর হামাসের হামলায় নিহতদের মধ্যে বেশিরভাগই বেসামরিক মানুষ। হামলার তীব্রতা যেমন নজিরবিহীন ছিল, ইসরায়েলের প্রতিক্রিয়াও তেমনই। ২০২৩ সালের নভেম্বরের স্বল্পকালীন যুদ্ধবিরতি এবং জিম্মি মুক্তি চুক্তির পর ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু হামাসের বিরুদ্ধে 'সম্পূর্ণ বিজয়ের' প্রতিশ্রুতি দেন। গাজার সাধারণ মানুষের ওপর এই অভিযানের প্রভাব মানবাধিকার সংস্থাসহ বিভিন্ন মহল থেকে ইসরাইলের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ ওঠে। দক্ষিণ আফ্রিকা আন্তর্জাতিক বিচারিক আদালতে একটি মামলা দায়ের করে। ইতিহাসবিদ ওমার বার্টোভ উলেস্নখ করেছেন, ২০২৪ সালের মে মাসে ইসরাইলের কর্মকান্ডকে 'যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ' হিসেবে চিহ্নিত করা সম্ভব। গাজার স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের মতে, ইসরাইলি হামলায় ৪৬ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ১৩ হাজার ৩১৯ শিশু রয়েছে। আহত হয়েছেন আরও ১ লাখ ১০ হাজার জন। তবে ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে থাকা আনুমানিক ১০ হাজার জনের মরদেহ উদ্ধার সম্ভব হয়নি। গবেষণা অনুযায়ী, প্রকৃত মৃতের সংখ্যা ৭০ হাজার ছাড়িয়ে যেতে পারে। গাজায় ৯০ শতাংশ ঘরবাড়ি ধ্বংস বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ১৯ লাখ মানুষ বাস্তুচু্যত হয়েছেন, যা গাজার মোট জনসংখ্যার ৯০ শতাংশ। আশ্রয় শিবিরগুলোতে তীব্র দুর্দশার মধ্যে দিন কাটাচ্ছে লাখো মানুষ। গাজার ৬৫৪টি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে হামলা চালানো হয়। ১ হাজার ৬০ জন স্বাস্থ্যকর্মী নিহত হয়েছেন। ৬ লাখ ৬০ হাজার শিক্ষার্থী এক বছরেরও বেশি সময় ধরে শিক্ষাবঞ্চিত। ৫৩৪টি স্কুল পুরোপুরি ধ্বংস হয়েছে। ইসরাইলের অবরোধের ফলে গাজার খাদ্য সংকট তীব্র হয়। ২০২৪ সালের নভেম্বরের হিসাবে ৯৬ শতাংশ শিশু এবং নারীরা পুষ্টিহীনতায় ভুগছেন। যুদ্ধের প্রভাবে গাজার পরিবেশও বিপর্যস্ত। চাষাবাদের ৪০ শতাংশ জমি ধ্বংস এবং বিষাক্ত বর্জ্য মাটিতে মিশে গেছে। যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত নেতানিয়াহু ও সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে। গাজায় হামাস ও ইসরাইলের মধ্যে যুদ্ধবিরতি চুক্তি আগামীকাল রোববার থেকে কার্যকর হওয়ার কথা রয়েছে। তবে এই সময়ের মধ্যেও অবরুদ্ধ এলাকাটিতে অব্যাহত হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরাইলি বাহিনী। এতে যুদ্ধবিরতি চুক্তির পর গাজায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১০১ জনে দাঁড়িয়েছে। এ সব নিহতের মধ্যে ৩১ নারী ও ২৭ শিশু রয়েছে। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় হামলা চালাচ্ছে ইসরাইল। এতে মোট নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৪৬ হাজার ৭৮৮ জনে দাঁড়িয়েছে। আহত হয়েছেন এক লাখ ১০ হাজার ৪৫৩ জন।
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখন্ডের বিধ্বস্ত স্বাস্থ্য ব্যবস্থা পুনর্গঠনে কমপক্ষে ১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বা আরও বেশি অর্থের প্রয়োজন হতে পারে। আগামী পাঁচ থেকে সাত বছরে বিপুল পরিমাণ এই অর্থের প্রয়োজন হতে পারে বলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডবিস্নউএইচও) প্রাথমিক হিসেবে উঠে এসেছে। শুক্রবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা এএফপি। ফিলিস্তিনি ভূখন্ডে জাতিসংঘের স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিনিধি রিক পিপারকর্ন সাংবাদিকদের বলেছেন, গাজার স্বাস্থ্য ব্যবস্থা পুনর্গঠন করতে অনেক বড় অংকের অর্থের প্রয়োজন হতে পারে। তার মতে, 'গাজার শুধুমাত্র স্বাস্থ্যখাত পুনর্গঠনের জন্য প্রথম দেড় বছরের জন্য ৩ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি এবং তারপর পাঁচ থেকে সাত বছরের জন্য ১০ বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন হবে বলে তারা প্রাথমিকভাবে অনুমান করছেন।'