শনিবার, ০৩ মে ২০২৫, ২০ বৈশাখ ১৪৩২
কঠোর অবস্থানে সিরিয়ার অন্তর্বর্তী সরকার

বিদ্রোহী ১৬২ জনের মৃতু্যদন্ড

মানবাধিকার সংস্থা সিরিয়ান ওয়ার মনিটরের দাবি
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
  ০৯ মার্চ ২০২৫, ০০:০০
বিদ্রোহী ১৬২ জনের মৃতু্যদন্ড
প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারা

ক্ষমতাচু্যত প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদপন্থি আলাউইত বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছেন সিরিয়ার নতুন প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারা। তিনি বিদ্রোহীদেরকে আত্মসমর্পণের আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, অন্যথায় কঠিন পরিণতি ভোগ করতে হবে। শুক্রবার আসাদপন্থি অন্তত ১৬২ জনকে হত্যা বা 'মৃতু্যদন্ড কার্যকর' করা হয় বলে জানিয়েছে মানবাধিকার সংস্থা সিরিয়ান ওয়ার মনিটর। এরআগের দিন আসাদপন্থি বিদ্রোহী এবং অন্তবর্তী সরকারের নিরাপত্তাবাহিনীর ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। এ সময় দুই পক্ষের সংঘর্ষে অন্তত ৭১ জন নিহত হয়। এরপর আলাউইত সম্প্রদায়ের বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে ব্যাপাক অভিযান শুরু করে সিরীয় বাহিনী। অভিযানকালে তাদের ধরে ধরে তাৎক্ষণিক হত্যা বা মৃতু্যদন্ড কার্যকর করা হয়।

বিদ্রোহীদের হুমকি দিয়ে প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারা বলেছেন, "আপনারা সব সিরীয়র ওপর হামলা চালিয়েছেন এবং ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ করেছেন। ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়ার সময় এসেছে। আর আপনারা এটি প্রতিরোধ করতে পারবেন না। অস্ত্র ফেলে দিন এবং আত্মসমর্পণ করুন, খুব বেশি দেরি হওয়ার আগে।" বৃহস্পতিবার দেশটির পশ্চিমাঞ্চলীয় উপকূলীয় অঞ্চলে হঠাৎ করে শুরু হওয়া বিদ্রোহী ও সরকারি বাহিনীর লড়াইয়ে ৭১ জনের মতো মানুষ প্রাণ হারায়। এরআগেও সেখানে প্রাণঘাতি সংঘাতের ঘটনা ঘটেছিল। বৃহস্পতিবারের সংঘর্ষ এই হয়েছে দেশটির উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে রাশিয়া-নিয়ন্ত্রিত বিমানঘাঁটির কাছে লাতাকিয়া প্রদেশে। গত ডিসেম্বরে আসাদের পতনের পর থেকে সিরিয়ার ইসলামপন্থি সরকারের সঙ্গে যুক্ত বাহিনীর ওপর এটি সবচেয়ে সহিংস হামলার ঘটনা। এর বাইরে আলাউইত সম্প্রদায়ের প্রাণকেন্দ্র ও আসাদ পরিবারের শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত উপকূলীয় অঞ্চলে সংঘর্ষ অব্যাহত রয়েছে। হোমস ও আলেপ্পো শহরেও সংঘর্ষের খবর পাওয়া যায়। সিরিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র কর্নেল হাসান আব্দুল গনিও রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমের মাধ্যমে লাতাকিয়ায় লড়াইরত আসাদের অনুগতদের প্রতি সতর্কবার্তা জারি করেছেন। তিনি বলেন, হাজার হাজার মানুষ তাদের অস্ত্র সমর্পণ করে তাদের পরিবারের কাছে ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, আবার কেউ কেউ খুনি এবং অপরাধীদের রক্ষায় পালিয়ে যাওয়ার ও মৃতু্যর জন্য জোর দিচ্ছে। পছন্দটি স্পষ্ট; আপনার অস্ত্র জমা দিন অথবা অনিবার্য পরিণতির মুখোমুখি হোন। এ অবস্থায় অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারার জন্য এই অঞ্চলটি একটি বড় নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আলাউইত সম্প্রদায়ের কর্মীরা জানিয়েছেন, আসাদের পতনের পর থেকে তাদের সম্প্রদায় সহিংসতা ও আক্রমণের শিকার হয়েছে। বিশেষ করে, হোমস ও লাতাকিয়ার গ্রামীণ এলাকাগুলো।

এই সপ্তাহের শুরুতে সিরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিশ্বব্যাপী রাসায়নিক অস্ত্র পর্যবেক্ষণ সংস্থাকে বলেছিলেন, নতুন সরকার আসাদের অধীনে উৎপাদিত অবশিষ্ট যেকোনো মজুত ধ্বংস করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

\হএদিকে প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদকে উৎখাত করার পর থেকে ৩ লাখেরও বেশি শরণার্থী সিরিয়ায় ফিরে এসেছে। শুক্রবার জাতিসংঘ এ তথ্য জানিয়েছে। দামেস্ক থেকে এক ভিডিও লিঙ্কের মাধ্যমে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআরের সেলিন স্মিট জেনেভায় সাংবাদিকদের বলেন, গত ৮ ডিসেম্বরের পর এখন পর্যন্ত তিন লাখের বেশি মানুষ ফিরে এসেছে। বৃহস্পতিবার তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়ে্যপ এরদোয়ান বলেছেন, আসাদকে উৎখাত করার পর তুরস্ক থেকে এক লাখ ৩৩ হাজারেরও বেশি সিরীয় নিজ দেশে ফিরেছেন।

২০১১ সালে সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর তুরস্কে প্রায় ত্রিশ লাখ শরণার্থী আশ্রয় নেয়। তারা এখন দেশে ফিরে যেতে আগ্রহী। ডিসেম্বরের শুরুতে বিদ্রোহীদের আক্রমণে বাশার আল-আসাদ ক্ষমতা ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন। অবসান ঘটে কয়েক দশকের স্বৈরতান্ত্রিক শাসনের।সিরিয়ার যুদ্ধে পাঁচ লাখেরও বেশি মানুষ নিহত এবং লাখ লাখ মানুষ তাদের ঘরবাড়ি থেকে বাস্তুচু্যত হয়েছেন। স্মিট বলেন, এটি বিশ্বের বৃহত্তম বাস্তুচু্যতি সংকট হিসেবে রয়ে গেছে। যুদ্ধ থেকে পালিয়ে আসা বেশিরভাগ মানুষ তাদের বাড়িতে ফিরে যেতে আগ্রহী। তিনি বলেন, ফিরে আসা শরণার্থীদের পাশাপাশি অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচু্যত আরও নয় লাখ তাদের নিজ এলাকায় ফিরে গেছেন। তিনি আরও বলেন, উত্তর-পশ্চিম সিরিয়ার শিবির ও স্থানগুলোতে বসবাসকারী প্রায় দশ লাখ অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচু্যত মানুষ আগামী বছরের মধ্যে নিজ বাড়িতে ফিরে যেতে চান। সূত্র: গার্ডিয়ান ও বিবিসি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে