বই মানুষের চিন্তার জগৎকে সমৃদ্ধ করে তোলে। লেখকরা বিভিন্ন গল্প, উপন্যাস, কাব্যগ্রন্থ, ভ্রমণবৃত্তান্ত, প্রবন্ধগ্রন্থ ইত্যাদিতে ফুটিয়ে তুলেন সমাজ ও দেশের নানান অসঙ্গতি, জটিলতা। আবার সেই লেখনীতেই নিহিত থাকে সেইসব সংকটসমূহের সুন্দর ও সুপরিকল্পিত সমাধানও। তরুণ ও নবীন লেখকরা তাদের তীব্র ও তীক্ষ্ন চিন্তাশক্তিকে লিপিবদ্ধ করেন বইয়ের প্রতিটি পাতায় পাতায়। প্রতি বছর একটি নির্ধারিত সময়ে সেই বইগুলোকে পাঠকদের কাছে উপস্থাপন করার একটি মাধ্যম হলো বইমেলা। আমাদের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ এই বইমেলা। এটি প্রতিটি লেখক ও পাঠকের জন্য হয়ে উঠে একটি উৎসবমুখর মিলনমেলা। লেখক, পাঠক, বইপ্রেমী মানুষ বইমেলাকে করে তোলে অধিক প্রাণবন্ত। ঐতিহ্যের এই মিলনমেলাকে উপলক্ষ করে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়েও প্রতি বছর হয়ে আসছে বইমেলা উৎসব। এরই ধারাবাহিকতায় এবারও হয়ে গেল ২০২৫ এ শহীদ আবু সাঈদ স্মৃতি বইমেলা। বিগত বছরগুলোতে নানান সংগঠন ও অঙ্গসংগঠনের উদ্যোগে এই বইমেলা অনুষ্ঠিত হলেও এবছর বেরোবি প্রশাসন দেখিয়েছে ভিন্ন নজির। বাংলাদেশ তরুণ কলাম লেখক ফোরাম, বেরোবিসহ আরও বেশ কয়েকটি সামাজিক সংগঠনের সহযোগিতা ও পরামর্শের মধ্য দিয়ে নিজ উদ্যোগে এবারের বইমেলা আয়োজন করেছে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন '২৪-এর প্রথম শহীদ আবু সাঈদের দেশমাতৃকার জন্য আত্মত্যাগকে স্মরণীয় করে রাখতে এবারের বইমেলা নামকরণ করা হয় 'শহীদ আবু সাঈদ স্মৃতি বইমেলা-২০২৫'। মেলা শুরু হয় ১৮ ফেব্রম্নয়ারি এবং চলে ২২ ফেব্রম্নয়ারি পর্যন্ত, প্রতিদিন বেলা আড়াইটা থেকে রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত। অনুষ্ঠানে উদ্বোধনী দিনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শহীদ আবু সাঈদের বাবা মকবুল হোসেন এবং সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে নিহত কিশোরী ফেলানী খাতুনের বাবা নূর ইসলাম। অনুষ্ঠানটি উদ্বোধন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. শওকাত আলী। তিনি মেলার সবগুলো স্টল ঘুরে ঘুরে দেখেন।
ওই মেলায় সর্বমোট ৪০টি স্টল অংশগ্রহণ করে, যেখানে ১৮টি প্রকাশনী এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৭টি সক্রিয় সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন তাদের বই ও কার্যক্রম প্রদর্শন করে। প্রতিটি স্টলে প্রদর্শন করানো হয় জুলাই বিপস্নবে আহত শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন ছবি। মেলায় লেখক-পাঠক আড্ডা, বিভিন্ন প্রতিযোগিতা, বিতর্ক, আবৃত্তি, বুক রিভিউসহ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. শওকাত আলী বলেন, শহীদ আবু সাঈদের বিশ্ববিদ্যালয়ের এই বইমেলা বাংলাদেশমুখী সাংস্কৃতিক অভিযাত্রার সূচনা করবে। এই বইমেলার মাধ্যমেই উত্তরাঞ্চলের মানুষের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি গোটা জাতির সামনে ফুটে উঠবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এই মেলার আয়োজনকে স্বাগত জানিয়েছেন এবং অভিমত প্রকাশ করেছেন যে, এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক পরিবেশকে আরও সমৃদ্ধ করবে। তারা আরও জানিয়েছেন, এই মেলা যেন প্রতি বছর নিয়মিতভাবে আয়োজন করা হয়। বিভিন্ন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায় 'শহীদ আবু সাঈদ স্মৃতি বইমেলা-২৫' বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও স্থানীয় জনগণের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে।