বৃহস্পতিবার, ২৯ মে ২০২৫, ১৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

কী পেলেন বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীরা এমপিও নীতিমালা-২০২১ থেকে

২০২১ এর নীতিমালায় সর্বমোট ২৬টি ধারা রাখা হয়েছে- যা ২০১৮ নীতিমালায় ধারা ছিল ২৫টি। ২০২১ এর নীতিমালা ৪৪ পৃষ্ঠার, তবে ২০১৮ নীতিমালা ২৮ পৃষ্ঠার। ১,২,৩ ধারা ২০১৮ ও ২০২১ হুবহু এক। ৪নং ধারায় ২০২১ সালে ২৭টি উপধারা যুক্ত করা হয়েছে। কিন্তু ২০১৮ সালে ৪নং এ কোনো উপধারা যুক্ত ছিল না। এ উপধারাগুলোতে বিভিন্ন বিষয়ের সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে যেটা পূর্বে ছিল না। ৫নং ধারায় ২০১৮ এর নীতিমালায় ৭টি উপধারা ছিল কিন্তু ২০২১-এর নীতিমালায় উপধারা আছে ১০টি। যা এ নীতিমালাকে বিষেশায়িত করেছে।
দুলাল চন্দ্র চৌধুরী
  ০৮ এপ্রিল ২০২১, ০০:০০
কী পেলেন বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীরা এমপিও নীতিমালা-২০২১ থেকে

এমপিও নীতিমালা-২০২১ গত ২৫ মার্চ, ২০২১ মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়েছে। এ নীতিমালায় অনেক ভালো দিক আছে। যারা এটা প্রণয়ন করেছেন তারা ধন্যবাদ পাওয়া যোগ্য। অবশ্যই আমরা তাদের ধন্যবাদ জ্ঞাপন করব। তবে এর সব কৃতিত্ব তার পাওয়া উচিত- যিনি যথাযথ কর্তৃপক্ষকে এমন একটি নীতিমালা তৈরির নির্দেশনা দিয়েছেন। আমরা তাকেই প্রথম শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাই। তবে তার পূর্বে এমপিও নীতিমালা-২০১০, সংশোধিত ২০১৩, ২০১৮ এবং ২০২১ এর তুলনামূলক আলোচনা করা যাক। এসব নীতিমালায় কিছু ধারা সব সময় আছে তবে তার বাস্তবায়ন নেই। এমনই ২০১৮ নীতিমালায় ছিল- যা সামান্য শব্দের পরিবর্তন করে ২০২১ নীতিমালায় যুক্ত করা হয়েছে। ২০২১ এর নীতিমালায় সর্বমোট ২৬টি ধারা রাখা হয়েছে- যা ২০১৮ নীতিমালায় ধারা ছিল ২৫টি। ২০২১ এর নীতিমালা ৪৪ পৃষ্ঠার, তবে ২০১৮ নীতিমালা ২৮ পৃষ্ঠার। ১,২,৩ ধারা ২০১৮ ও ২০২১ হুবহু এক। ৪নং ধারায় ২০২১ সালে ২৭টি উপধারা যুক্ত করা হয়েছে। কিন্তু ২০১৮ সালে ৪নং এ কোনো উপধারা যুক্ত ছিল না। এ উপধারাগুলোতে বিভিন্ন বিষয়ের সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে যেটা পূর্বে ছিল না। ৫নং ধারায় ২০১৮ এর নীতিমালায় ৭টি উপধারা ছিল কিন্তু ২০২১-এর নীতিমালায় উপধারা আছে ১০টি। যা এ নীতিমালাকে বিষেশায়িত করেছে।

ধারা ৬.১-এর ক. নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পদ সংখ্যা ২০২১-এর নীতিমালায় ২০১৮ নীতিমালা থেকে ১টি বেশি। ধারা ৬.১ এর খ. মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পদ সংখ্যা ২০২১-এর নীতিমালায় ২০১৮ নীতিমালা থেকে ৩টি বেশি। গ. উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পদ সংখ্যা ২০২১-এর নীতিমালায় ২০১৮ নীতিমালা থেকে ৩টি বেশি। বাকিগুলো পদ সংখ্যা সমান রয়েছে।

1

ধারা ৬.২. নিম্ন মাধ্যমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রত্যেক শ্রেণির শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৪০ জন। ২০১৮ নীতিমালায় ছিল ৬০- যা শিক্ষানীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।

ধারা ৮.১. এ শিফট খোলার অনুমতি দেওয়া হয়েছে- যা ২০১৮-তে ছিল না।

ধারা ৮.২. ব্রাঞ্চ খোলার অনুমতি দিয়েছে- যা ২০১৮ এর নীতিমালায় বন্ধ ছিল।

ধারা ৯.৫. এমপিও ভুক্ত কোনো প্রতিষ্ঠান কোনো কারণে বন্ধ হয়ে গেলে ওই প্রতিষ্ঠানের এমপিও ভুক্ত শিক্ষক- কর্মচারীকে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বিভাগ, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অফিস আদেশ জারি করে নিকটবর্তী কোনো প্রতিষ্ঠানের শূন্য পদে সমন্বয় করতে পারবে- যা ২০১৮-এর নীতিমালায় ছিল না।

ধারা ১১-তে ২০১৮ নীতিমালায় ১৭টি উপধারা ছিল, ২০২১-এর নীতিমালায় উপধারা আছে ২৭টি।

ধারা ১১.৪. এ উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়/স্কুল ও কলেজ/উচ্চ মাধ্যমিক কলেজে জ্যেষ্ঠ প্রভাষক পদ সৃষ্টি করা হয়েছে।

ধারা ১১.৫. এ শুধু ডিগ্রি কলেজে ৮ বছর সন্তোষজনক চাকরির প্রভাষকদের মোট পদের ৫০% সহকারী অধ্যাপক পদে বিভিন্ন সূচকে মূল্যায়ন সাপেক্ষে পদোন্নতির ব্যবস্থা করা হয়েছে।

ধারা ১১.৭. এর ক,খ,গ,ঘ যুক্ত করা হয়েছে। এ ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে এ বিষয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় এমন বিষয় যুক্ত করে ১১.৭-এর ঙ ধারা যুক্ত করে নতুন বিতর্কের সৃষ্টি করেছেন। কী আছে ১১.৭ (ঙ) ধারায়? শিক্ষক-কর্মচারীদের মূল বেতন/বোনাসের নির্ধারিত অংশ/ বৈশাখী ভাতার নির্ধারিত অংশ সরকারের জাতীয় বেতন স্কেল ২০১৫/সরকারের সর্বশেষ জাতীয় বেতন স্কেলের সঙ্গে মিল রেখে করতে হবে। এটা দেখে কেউ কেউ শতভাগ বোনাস প্রাপ্তির ঘোষণা হয়েছে বলে দিল। যারা এটা দেখে এরূপ ব্যাখ্যা দেয় তাদের জ্ঞানের পরিধি নিয়ে আমরা সন্দেহ পোষণ করি।

ধারা ১১.৮. ও ধারা ১১.৯. এ সহকারী শিক্ষকদের উচ্চতর গ্রেড বিষয়ে সুনির্দিষ্ট করেছেন। তাদের বি এড স্কেলকে উচ্চতর গ্রেড ধরেনি এটা ভালো- যা ২০১৮ নীতিমালায় ছিল না।

ধারা ১১.১০. আবার শিক্ষক/প্রদর্শক /কর্মচারীরা তাদের এমপিও ভুক্তির তারিখ হতে ১০ বছর সন্তোষজনক চাকরি পূর্ণ হলে পরবর্তী উচ্চতর গ্রেড প্রাপ্য হবেন। এ ধারাটি হুবহু ২০১৮-এর নীতিমালায় ১১.৫ এ উলেস্নখ আছে। এখানে শিক্ষক বলতে কাদের বোঝানো হয়েছে? পূর্বে নীতিমালায় শিক্ষক থাকায় আমরা সবাই বুঝেছি যে, এখানে সহকারী শিক্ষক, সহকারী প্রধান শিক্ষক, প্রধান শিক্ষক, প্রভাষক সবাই আছে। এবারে সহকারী শিক্ষক ও প্রভাষকদের জন্য আলাদা ধারা করায় সহকারী প্রধান শিক্ষক, প্রধান শিক্ষকরা উচ্চতর গ্রেড প্রাপ্তির সুষ্ঠ ঘোষণা চান। আর যদি ১১.১০ ধারায় এর শিক্ষক বলতে সহকারী প্রধান শিক্ষক, প্রধান শিক্ষক ও অধ্যক্ষ বুঝাতে দিয়ে থাকেন তবে সমস্যার সমাধান হয়। অন্যথায় সহকারী প্রধান শিক্ষক, প্রধান শিক্ষক ও অধ্যক্ষরা বৈষম্যের স্বীকার হবেন।

ধারা ১৬-তে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গ্রেডিংয়ের একটি সুন্দর মূল্যায়ন ছক করা হয়েছে।

ধারা ১১.২২. এ মাধ্যমিক বিদ্যালয় পরবর্তী সময়ে উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় হিসেবে এমপিও ভুক্ত হলে ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের কাম্য শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকা শর্তে অধ্যক্ষ হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।

বর্তমান নীতিমালার দুর্বল দিক-

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিফট খোলার অনুমতি দেওয়া।

অবসরে যাওয়ার পর চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়ার সুযোগ রাখা।

প্রধান শিক্ষক ও সহকারী প্রধান শিক্ষকদের উচ্চতর গ্রেড প্রাপ্তির সুস্পষ্ট ঘোষণা না থাকা।

মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে এমপিও ভুক্ত হলে কর্মরত প্রধান শিক্ষকের কাম্য যোগ্যতা থাকার পরেও একধাপ নিচের স্কেলে বেতন প্রদানের ঘোষণা।

নব সৃষ্টপদ অফিস সহায়কের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এমপিও করার সুযোগ না থাকা।

\হকোনো বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে সরকারি স্কুল-কলেজের শিক্ষক অথবা সরকারি কর্মকর্তা প্রেষণে নিয়োগদানের সুযোগ রাখা।

শতভাগ উৎসবভাতা প্রদানের সুনির্দিষ্ট ঘোষণা না থাকা।

বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের বদলি ব্যবস্থা নীতিমালার গ্যারাকলে আটকে রাখা।

কোনো কোনো বিষয় চর্বিত চর্বন হয়েছে।

১১.৮ ও ১১.৯ এ সহকারী শিক্ষকদের বিষয় উলেস্নখ করেও ১১.১০ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কর্মরত শিক্ষক-কর্মচারীদের কথা বলা হয়েছে। তাহলে এখানে শিক্ষক বলতে কাদের বুঝানো হলো। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সহকারী শিক্ষক আছে, সহকারী প্রধান শিক্ষক আছে এবং প্রধান শিক্ষক আছে। তাহলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক কারা? এ সব বিষয়ে সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা দিতে হবে।

২০১৮ সালের জনবল কাঠামোর সঙ্গে ২০২১ জনবল কাঠামোর তুলনামূলক বিশ্লেষণ করে বিভিন্ন প্রশ্নের ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে। ভালো দিকগুলোর জন্য সবাইকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। নীতিমালার দুর্বল দিকগুলো অপসারণের জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

দুলাল চন্দ্র চৌধুরী : প্রধান শিক্ষক, ইস্কাটন গার্ডেন উচ্চ বিদ্যালয় ও যুগ্ম আহ্বায়ক কেন্দ্রীয় কমিটি, বাংলাদেশ মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধান পরিষদ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে