বৃহস্পতিবার, ০৮ মে ২০২৫, ২৫ বৈশাখ ১৪৩২
পাঠক মত

সাইবার অপরাধ

  ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০০:০০
সাইবার অপরাধ

সাইবার জগতে অত্যাধুনিক এবং সম্ভবত সবচেয়ে জটিল একটি সমস্যা হলো সাইবার ক্রাইম বা সাইবার অপরাধ। বিভিন্ন আইন ও অপরাধ সংক্রান্ত বইপত্রে সাইবার ক্রাইমকে বিভিন্নভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়। সাইবার অপরাধসংক্রান্ত কয়েকটি উলেস্নখযোগ্য উদাহরণ হলো- কম্পিউটার হ্যাকিং, মোবাইল ফোন হ্যাকিং, ফেসবুক অ্যাকাউন্ট হ্যাকিং, এটিএম বুথ হ্যাকিং, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট হ্যাকিং, বিকাশ-নগদ অ্যাকাউন্ট হ্যাকিং ইত্যাদি। অর্থাৎ 'যে সব অপরাধ সংঘটিত করতে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কম্পিউটার বা ইন্টারনেট ব্যবহৃত হয়ে থাকে, সাধারণভাবে সেগুলোই সাইবার অপরাধ বা সাইবার ক্রাইম হিসেবে পরিগণিত হয়' এবং কোনো অপরাধমূলক কাজ যেখানে কম্পিউটার বা ইন্টারনেটকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয় কিংবা অপরাধের জন্য কম্পিউটার বা ইন্টারনেটকে টার্গেট করা হয়। অথবা কম্পিউটার বা ইন্টারনেট দ্বারা অপরাধ করার পরবর্তীতে তার সাপেক্ষে অন্য কোনো অপরাধ করা হয়। এ সব অপরাধই সাইবার ক্রাইমের অন্তর্ভুক্ত হবে।

তথ্যপ্রযুক্তি আইন

ইংল্যান্ড বিশ্বে প্রথম সাইবার আইন প্রণেতা হিসেবে তৈরি করে কম্পিউটার মিসইউজ অ্যাক্ট ১৯৯০। ই-অপরাধ প্রতিরোধে ২০০৮ সালে জাতীয় ই-অপরাধ ইউনিটও গঠন করা হয়। ভারতেও তৈরি হয় তথ্যপ্রযুক্তি আইন ২০০০। বাংলাদেশে ২০০৬ সালে তথ্যপ্রযুক্তি ও যোগাযোগ আইন তৈরি হয় এবং পরে এ আইন সংশোধন করা হয়।এ আইনের ৫৭ ধারায় বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি ইচ্ছা করে ওয়েবসাইট বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক বিন্যাসে এমন কিছু প্রকাশ বা সম্প্রচার করেন, যা মিথ্যা ও অশ্লীল বা সংশ্লিষ্ট অবস্থা বিবেচনায় কেউ পড়লে বা শুনলে নীতিভ্রষ্ট বা অসৎ হতে উদ্বুদ্ধ হতে পারে বা যার মাধ্যমে মানহানি ঘটে, আইন-শৃঙ্খলা ঘটে বা ঘটার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়, রাষ্ট্র বা ব্যক্তির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয় বা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে বা করতে পারে এ ধরনের তথ্যাদির মাধ্যমে কোনো ব্যক্তি বা সংগঠনের বিরুদ্ধে উস্কানি দেওয়া হয়, তাহলে তার এই কাজ অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। কোনো ব্যক্তি এ ধরনের অপরাধ করলে তিনি অনধিক ১০ বছর কারাদন্ডে দন্ডিত হতে পারেন এবং অনধিক এক কোটি টাকা অর্থদন্ডে দন্ডিত হতে পারেন।

আমাদের দেশে আইন থাকলেও আইনি অব্যবস্থাপনা নিয়ে জনসাধারণের মধ্যে চাপা ক্ষোভ রয়েছে। বর্তমানে আমাদের দেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা দিনদিন বাড়ছে। তার সঙ্গে পালস্না দিয়ে বাড়ছে সাইবার অপরাধও। ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের বেশিরভাগেরই তথ্যপ্রযুক্তি আইন সম্পর্কে কোনো ধারণা নেই। তাই বুঝে হোক বা না বুঝে হোক সাইবার অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। যারা সাইবার অপরাধের শিকার, তারাও সঠিক আইনি ব্যবস্থা নিতে জানেন না। আবার অনেকে থানায় গেলেও ফল পান না। কারণ অনেক পুলিশ কর্মকর্তাই জানেন না এ ধরনের অভিযোগ পেলে তার ঠিক কী করা উচিত। তাই এই আইন সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধিতে আইনের প্রচার বাড়াতে হবে ও প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। একই সঙ্গে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারে আপনাকে খুব সচেতন হতে হবে। যেমন আপনি যদি ই-মেইল, ফেসবুক কিংবা কোনো অনলাইন অ্যাকাউন্টের নিরাপত্তার বিষয়গুলো ঠিকভাবে সেটিং করতে পারেন দুনিয়ার যত বড় ক্রিমিনাল হোক আপনার অ্যাকউন্টের ক্ষতি করতে পারবে না। তাই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট জোর দাবি জানানো যাচ্ছে, সাইবার ক্রাইম বা অপরাধের মতো ভয়াবহ বিষয়টির উপর সুদৃষ্টি রেখে কম্পিউটার বা ইন্টারনেট গ্রাহকদের নিরাপত্তার জোর দাবি জানাচ্ছি।

মাতুব্বর করিম

সরকারি রাজেন্দ্র কলেজ ফরিদপুর

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে