ইরানের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হামলার পর তা ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এমনটা দাবি করা হলেও সেখান থেকে এখন বেশখানিকটা সরে এসেছে হোয়াইট হাউস। যুদ্ধ পর্যবেক্ষকরাও ইরানের পারমাণবিক স্থাপনার ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে সংশয় প্রকাশ করতে শুরু করেছে। কেউ কেউ বলছেন, হামলায় পারমাণবিক কেন্দ্রগুলো সামান্য ক্ষতি হলেও তা দ্রুত পূণরুদ্ধার সম্ভব।
একদিকে ট্রাম্প প্রশাসন দাবি করেছে যে ইরানের পারমাণবিক কার্যক্রমে বড় ধাক্কা দেওয়া হয়েছে, অন্যদিকে সামরিক সূত্রে জানা যাচ্ছে, বাস্তবতা হয়তো ততটা 'চূড়ান্ত' নয়।
কি বললেন ট্রাম্প ও হেগসেথ?
সাবেক সেনা ও বিশ্লেষক পিট হেগসেথ আরও বলেন, `আমরা এখনো নিশ্চিত না— ফোর্দো বা নাতাঞ্জে ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা কতটা। কিছু স্যাটেলাইট ছবি ক্ষয় দেখালেও, ইরানের প্রতিক্রিয়া বোঝায় তারা এখনো পুনরুদ্ধারে সক্ষম।'
তিনটি টার্গেট: কী জানা গেছে? ফোর্দো ইউরেনিয়াম এনরিচমেন্ট প্ল্যান্ট: পেন্টাগনের দাবি অনুযায়ী, এখানে একাধিক সেন্ট্রিফিউজ ধ্বংস হয়েছে। তবে IAEA বা নিরপেক্ষ সূত্র থেকে সুনির্দিষ্ট তথ্য আসেনি।
নাতাঞ্জ ফ্যাসিলিটি: ইরানের মূল সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র। কিছু অংশ আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও, এর নিচের ভূগর্ভস্থ অংশ অক্ষত থাকার দাবি করছে ইরান।
ইসফাহান রিসার্চ সাইট: এখানে বেশ কিছু গবেষণাগার ছিল, ক্ষয় হয়েছে তবে কতটা তা পরিষ্কার না।
এই অবস্থানে বিশ্লেষকদের মতে, ইরানের ক্ষতি হয়েছে, তবে পুরোপুরি নির্মূল নয়। পারমাণবিক কার্যক্রম পুনর্গঠনের সক্ষমতা তারা এখনো ধরে রেখেছে।
ইরান-ইসরায়েল সংঘর্ষের এই পর্বে পারমাণবিক কেন্দ্র লক্ষ্য করে যুক্তরাষ্ট্রের অভিযান একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড় হলেও, ট্রাম্প প্রশাসনেরই কিছু অংশ এখন এর পরিণাম ও বাস্তব সফলতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে। যুদ্ধবিরতির ধোঁয়াশার মধ্যে দিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের এই নতুন সঙ্কট এখনো এক অনিশ্চিত গন্তব্যের দিকে এগোচ্ছে।
এদিকে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে বোমা হামলায় কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা নিরূপণের চেষ্টা করছে তারা। অবশ্য ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেছেন, ‘আমরা তাদের কয়েক বছর পিছিয়ে দিয়েছি।’
সিএনএন মঙ্গলবার এক প্রতিবেদনে জানায়, মার্কিন প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থার (ডিআইএ) ফাঁস হওয়া প্রাথমিক মূল্যায়নে বলা হয়েছে, ইরানের ভূপৃষ্ঠের অনেক গভীরের ফর্দো পারমাণবিক স্থাপনা এবং নাতাঞ্জ পারমাণবিক কেন্দ্রের ভূগর্ভস্থ স্থাপনাগুলো ধ্বংস হয়নি এবং সেন্ট্রিফিউজসহ মূল অবকাঠামো কয়েক মাসের মধ্যেই আবার চালু করা সম্ভব।
গার্ডিয়ান ও অন্যান্য সংবাদমাধ্যম সিএনএনের ফাঁস করা প্রতিবেদনের সত্যতা নিশ্চিত করেছে। ওয়াশিংটন পোস্ট জানিয়েছে, প্রতিবেদনটি ‘কম বিশ্বাসযোগ্য’ হিসেবে চিহ্নিত করা ছিল। তবে একটি সূত্র গার্ডিয়ানকে বলেছে, অধিকতর মূল্যায়নে প্রাথমিক প্রতিবেদনের তুলনায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরও কম পাওয়া যেতে পারে।
মার্কিন প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে ইরানের কাছে উচ্চমাত্রায় সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের মজুতের বড় অংশ থাকার কথা বলা হয়েছে। ভবিষ্যতে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হলে সেগুলো ব্যবহার করা হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের হামলার আগে ইরান সেগুলো অন্য গোপন পারমাণবিক স্থাপনায় সরিয়ে নিয়ে থাকতে পারে।