শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

স্বাগত মাহে রমজান সিয়াম সাধনায় পরিশুদ্ধ হোক জীবন

নতুনধারা
  ২৪ মার্চ ২০২৩, ০০:০০

মুসলমানদের সংযম সাধনার মাস পবিত্র রমজান। ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের অন্যতম ফরজ ইবাদত হলো সিয়াম বা রোজা। দীর্ঘ ১১ মাসের প্রতীক্ষার পর রহমত, বরকত ও মাগফিরাতের সওগাত নিয়ে সারা বিশ্বে মুসলমানের কাছে সাম্য, সৌহার্দ্য, সম্প্রীতি, ভ্রাতৃত্ব, মানবিকতা, ত্যাগ, সংযম ও আত্মশুদ্ধির মাস এই পবিত্র মাহে রমজান ফিরে আসে। বছর ঘুরে আসা পবিত্র মাহে রমজান মাসের শুভাগমনকে আমরা স্বাগত জানাই।

বলার অপেক্ষা রাখে না, কুপ্রবৃত্তি দমন ও আত্মশুদ্ধির সর্বোত্তম মাস হলো পবিত্র রমজান মাস। পুণ্যময় এই মাস রহমত, বরকত ও মুক্তির বার্তা নিয়ে আসে, হৃদয়কে প্রশান্ত করে। বিশ্ব মুসলিমকে সংযত-সুন্দর জীবনযাপনের শিক্ষা দেয়। মুসলিম নর-নারীর কাছে রোজার মাস অত্যন্ত কাঙ্ক্ষিত। মহান আলস্নাহতায়ালার নৈকট্য লাভের আশায় মুসলমানরা শ্রদ্ধা ও নির্মল ভালোবাসায় বরণ করে এই মাসকে। মহান আলস্নাহ এই মাসের প্রতিটি দিন ও মুহূর্তকে নির্ধারিত করে দিয়েছেন সংযম সাধনার জন্য। পবিত্র এই মাসের মধ্যে নিহিত রয়েছে দুনিয়া ও পরকালের অশেষ কল্যাণ। আর এই পবিত্র মাসে শুধু পানাহার থেকে বিরত থাকাই নয়, এর পাশাপাশি তাগিদ দেওয়া হয়েছে জাগতিক সব বিষয়ে সংযত জীবনাচারের জন্য। রমজানের শিক্ষা হলো সব ধরনের পাপ কাজ থেকে বিরত থাকা এবং আত্মশুদ্ধি অর্জন করা। নিজের এবং অন্যের ওপর জুলুম করা, অপচয় করা থেকে বিরত থাকা।

তবে পরিতাপের বিষয় হলেও সত্য যে, পবিত্র রমজানে অনেকেই বেখেয়াল থাকেন। এ ছাড়া রোজার মাস এলেই দেখা যায় জিনিসপত্রের দাম হু হু করে বেড়ে যায়। একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী এই মাসে বেশি মুনাফার আশায় দাম বাড়িয়ে নিজেদের স্বার্থ আদায়ে মরিয়া হয়ে ওঠে- যা অত্যন্ত দুঃখজনক। বিশেষ করে রমজান মাসকে সামনে রেখে চাল, ডাল, আটা, তেল ও পেঁয়াজসহ ইফতারে প্রয়োজনীয় বিভিন্ন খাদ্যপণ্যের দাম বাড়ানোর পালস্নায় নামেন ব্যবসায়ীরা, এমনটি এর আগে দেখা গেছে। এ প্রসঙ্গে এটাও বলা দরকার, বিভিন্ন ধরনের অজুহাত সামনে রেখে বাজার অস্থির হওয়ার বিষয়টি যেমন নতুন নয়; তেমনি কারসাজিসহ নানা কারণেই নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির বিষয় বারবারই আলোচনায় আসে। অথচ নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধিকে কেন্দ্র করে নিম্ন আয়ের মানুষ দিশাহারা হয়ে পড়ে।

আমরা বলতে চাই, পবিত্র রমজানে যদি খাদ্যপণ্যসহ বিভিন্ন পণ্যর দাম বৃদ্ধির ঘটনা ঘটে তবে তা কোনোভাবেই এড়ানোর সুযোগ নেই। এটি আমলে নিয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। প্রসঙ্গত এটাও বলা দরকার, বিশ্বে মুসলমানের পবিত্রতম রমজান মাস এবারও এমন এক পরিস্থিতিতে সমাগত- যখন ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ চলছেই। আর এই যুদ্ধের প্রভাবও বিদ্যমান। করোনা পরিস্থিতি পৃথিবীকে দিশাহারা করে তুলেছিল, আর তা কাটিয়ে যখন সবকিছু প্রায় স্বাভাবিক হয়ে আসছিল তারপরই এই যুদ্ধ পৃথিবীকে নতুন সংকটে ফেলে দেয়। খাদ্যপণ্যসহ নানামুখী পণ্যদ্রব্যের দাম বেড়েছে। শঙ্কা তৈরি হয়েছে। ফলে সার্বিক বিষয়গুলো আমলে নিতে হবে। পবিত্র রমজানে যেন অসাধু ব্যবসায়ীরা দাম বাড়াতে না পারে, মানুষকে জিম্মি করতে না পারে সেদিকে দৃষ্টি দিতে হবে। এটা ভুলে যাওয়া যাবে না, রমজান মাসকে পুঁজি করে প্রতি বছর নিত্যপণ্যের দাম বাড়িয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটে। ফলে নিত্যপণ্যের মূল্য যেন অযৌক্তিভাবে বেড়ে না যায় এই বিষয়টি কঠোরভাবে নিশ্চিত করতে হবে সংশ্লিষ্টদেরই। বাজার মনিটরিং করতে হবে।

সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, রমজানের তাৎপর্য গভীরভাবে উপলব্ধি করা এবং সেই মোতাবেক আমল করা প্রয়োজন। মনে রাখতে হবে, সিয়াম সাধনার শিক্ষা জীবনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিজেকে পরিশুদ্ধ করতে হবে এবং এর মাধ্যমে অর্জিত শিক্ষা জীবনে প্রতিফলিত করতে হবে। তবেই ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক পরিমন্ডলে শান্তিশৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত হবে। এক মাসের সংযম সাধনার ভেতর দিয়ে প্রত্যেকের জীবন পরিশুদ্ধ ও পবিত্র হয়ে উঠুক; সমাজ হয়ে উঠুক মানবিকতাপূর্ণ- এমনটিই আমাদের প্রত্যাশা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে