মঙ্গলবার, ০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

বায়ুদূষণ প্রয়োজনীয় উদ্যোগ জরুরি

নতুনধারা
  ০৫ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
বায়ুদূষণ প্রয়োজনীয় উদ্যোগ জরুরি

কোনোভাবেই দূষণমুক্ত হচ্ছে না রাজধানী ঢাকা। এ প্রসঙ্গে বলা দরকার, বিভিন্ন সময়ে প্রকাশিত খবরে বায়ুদূষণ সংক্রান্ত যেসব তথ্য উঠে আসে, তা উদ্বেগজনক। সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরের মাধ্যমে জানা গেল, বিশ্বের ১০০ শহরের মধ্যে বায়ুদূষণে বুধবার সকালে ঢাকার অবস্থান ছিল তৃতীয়। এদিন সকাল সোয়া ১০টার দিকে আইকিউএয়ারের বাতাসের মানসূচকে ঢাকার স্কোর ছিল ১৯৩। এ স্কোরকে অস্বাস্থ্যকর বলে ধরা হয়। মঙ্গলবার দূষণে শীর্ষ অবস্থান নিয়ে ঢাকার স্কোর ছিল ২৪৬। এ স্কোর খুব অস্বাস্থ্যকর হিসেবে বিবেচিত হয়। বুধবার বিশ্বে বায়ুদূষণে প্রথম ও দ্বিতীয় স্থানে ছিল ভারতের পশ্চিমবঙ্গের শহর কলকাতা ও আফগানিস্তানের কাবুল। এ দুই শহরের স্কোর ছিল যথাক্রমে ২৬৫ ও ১৯৪।

প্রসঙ্গত, বায়ুদূষণের এ পরিস্থিতি নিয়মিত তুলে ধরে সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ার। বাতাসের মান নিয়ে তৈরি করা এই লাইভ বা তাৎক্ষণিক একিউআই সূচক একটি নির্দিষ্ট শহরের বাতাস কতটা নির্মল বা দূষিত, সে সম্পর্কে মানুষকে তথ্য দেয় ও সতর্ক করে। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টদের কতর্ব্য হওয়া দরকার, ঢাকার বায়ুদূষণ সংক্রান্ত সার্বিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা। লক্ষণীয়, আইকিউএয়ারের দেওয়া বুধবারের তালিকায় বলা হয়েছে, ঢাকার বাতাসে অতিক্ষুদ্র বস্তুকণাই (পিএম ২.৫) দূষণের প্রধান উৎস। এদিন ঢাকার বাতাসে যতটা এই বস্তুকণা আছে, তা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডবিস্নউএইচও) মানদন্ডের চেয়ে ২৯ গুণের বেশি। এক্ষেত্রে মনে রাখা দরকার, বায়ুদূষণ বেশি হলে সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকেন সংবেদনশীল গোষ্ঠীর ব্যক্তিরা। তাদের মধ্যে আছেন বয়স্ক, শিশু, অন্তঃসত্ত্বা ও জটিল রোগে ভোগা ব্যক্তিরা। তাদের বিষয়ে বিশেষ যত্নবান হওয়া দরকার বলে পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের। আমরা মনে করি, এই বিষয়টিকে সামনে রেখেও প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে।

বলা দরকার, ঢাকায় গত জানুয়ারিতে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক দিন দুর্যোগপূর্ণ বাতাসের মধ্যে কাটিয়েছে নগরবাসী। জানুয়ারির মোট ৯ দিন রাজধানীর বাতাসের মান দুর্যোগপূর্ণ ছিল- যা গত সাত বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। ফলে সার্বিকভাবে ঢাকার বায়ুদূষণ সংক্রান্ত পরিস্থিতি এড়ানোর সুযোগ নেই।

উলেস্নখ্য, আইকিউএয়ারের মানদন্ড অনুযায়ী, স্কোর ৫১ থেকে ১০০ হলে তাকে 'মাঝারি' বা 'গ্রহণযোগ্য' মানের বায়ু হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ১০১ থেকে ১৫০ স্কোরকে 'সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর' ধরা হয়। স্কোর ১৫১ থেকে ২০০ হলে তা 'অস্বাস্থ্যকর' বায়ু। স্কোর ২০১ থেকে ৩০০ হলে তাকে 'খুবই অস্বাস্থ্যকর' বায়ু ধরা হয়। আর ৩০১ থেকে তার ওপরের স্কোরকে 'দুর্যোগপূর্ণ' বা 'ঝুঁকিপূর্ণ' ধরা হয়। ১০০ শহরের মধ্যে বায়ুদূষণে বুধবার সকালে ঢাকার অবস্থান ছিল তৃতীয় আর সোয়া ১০টার দিকে আইকিউএয়ারের বাতাসের মানসূচকে ঢাকার স্কোর ছিল ১৯৩- এটি যেমন আমলে নিতে তেমনি বায়ুদূষণের সার্বিক চিত্র পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় উদ্যোগও অব্যাহত রাখতে হবে।

বায়ুদূষণের জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী ইটভাটাগুলো। অন্যদিকে, বায়ুদূষণের কারণ হিসেবে নির্মাণকাজ, যানবাহন, সড়ক ও মাটি থেকে সৃষ্ট ধুলার কারণে, বিভিন্ন জিনিসপত্রসহ পস্নাস্টিক পোড়ানোর বিভিন্ন কারণ উঠে এসেছে নানা সময়ে। এছাড়া বায়ুদূষণ বিশ্বের সবচেয়ে বড় পরিবেশগত স্বাস্থ্য হুমকি এটাও জানা গিয়েছিল। ফলে বায়ুর মানের বিষয়টি আমলে নিতে হবে। বায়ুদূষণের কারণে বাচ্চাদের স্বল্প ও দীর্ঘস্থায়ী রোগব্যাধি হয়। এছাড়া ফুসফুসে ক্যানসার, হৃদরোগ, লিভার ও কিডনিতে জটিলতা বাড়তে পারে এমন বিষয়ও এর আগে উঠে এসেছে। ফলে বায়ুদূষণ রোধে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকুক এমনটি কাম্য।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে