সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১

নতুন শিক্ষা কারিকুলাম ও প্রাসঙ্গিক ভাবনা

যার ওপর ভর করে আমরা বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারব। তবে তা নির্ভর করবে ইতিবাচক মানসিকতা, নৈতিকতা এবং সততার ওপর। পানি ছাড়া যেমন মাছ বাঁচতে পারে না, তেমনি শিক্ষক ছাড়াও শিক্ষার্থী আলোকিত হতে পারে না।
সুধীর বরণ মাঝি
  ০৬ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০

শিক্ষা হবে আনন্দের, শিক্ষা হবে জীবনভিত্তিক জীবনের জন্য, স্বতঃস্ফূর্ত, চিত্তাকর্ষক, শিক্ষা হবে বিশ্বমানের, শিক্ষা হবে উন্নত চিন্তার, শিক্ষা হবে একই পদ্ধতির, স্যাকুলার এবং বিজ্ঞানভিত্তিক। শিক্ষা হবে সর্বজনীন। শিক্ষা হবে সহজলভ্য, প্রাণচাঞ্চল্য। শিক্ষা হবে মানবিক, আধুনিক, বিজ্ঞানভিত্তিক, যুক্তিনির্ভর। শিক্ষা হবে একের প্রতি অপরের শেয়ারিং, কেয়ারিং, সহানুভূতি, মমতাবোধ ইত্যাদি। ফলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে জাগ্রত হচ্ছে নীতি, নৈতিকতা, মূল্যবোধ, দায়িত্বশীলতার চর্চা। প্রচলিত শিক্ষায় আমরা প্রতিযোগিতামূলক মনোভাব নিয়ে বড় হয়েছি। সন্তানকে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার হতে হবে এই মানসিকতায়। কিন্তু নতুন শিক্ষাক্রমে প্রতিযোগিতা নয়, সহযোগিতার মাধ্যমেও কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছা যায়, সে প্রচেষ্টা রাখা হয়েছে। শিক্ষার্থী যখন বুঝতে পারবে যে, তার পড়ালেখায় কোনো প্রতিযোগিতা নেই, আছে অবাধ সহযোগিতা ও সহমর্মিতা, তাহলে অবশ্যই সে আনন্দ পাবে, আগ্রহী হবে এবং সম্মুখে এগিয়ে যাওয়ার সাহস পাবে। নতুন শিক্ষা কারিকুলাম প্রণয়ন এবং প্রয়োগের মধ্য দিয়ে আমরাও সামনের দিকে এগিয়ে যাব। সত্যকে সত্য বলে এবং মিথ্যাকে মিথ্যা বলে চিহ্নিত করে সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করার মাধ্যমে নৈতিক চর্চা চালিয়ে যেতে পারব। সময়োপযোগী একটি শিক্ষা কারিকুলামের মধ্য দিয়ে আমাদের ঘুণেধরা সমাজের পরিবর্তন করে নিখাদ সংস্কৃতির বৈষম্যহীন সম্প্রীতির সমাজ গড়ে তুলতে পারব। শিক্ষার নতুন কারিকুলামে আমাদের চিন্তার বিকাশ ঘটবে, জানার ইচ্ছে জাগবে, নতুন নতুন প্রশ্ন এবং উত্তর তৈরি হবে। এসাইনমেন্ট ও হোমওয়ার্ক তৈরির সরঞ্জাম প্রতিষ্ঠান থেকেই শিক্ষার্থীকে দেওয়া উচিত। অন্যথায় গরিব শিক্ষার্থীরা পিছিয়ে পড়বে। শিক্ষা হোক সাবলীল, জীবনঘনিষ্ঠ এবং আনন্দময়।

শিক্ষা প্রত্যেক নাগরিকের সাংবিধানিক অধিকার। শিক্ষা মানুষকে লড়তে শেখায় সব অপশক্তির বিরুদ্ধে। শিক্ষা মুখস্থ করার কোনো বিষয় নয়, শিক্ষা আত্মস্থ করার। মুখস্থ করে কেউ কোনো দিন আইনস্টাইন, সক্রেটিস, রবীন্দ্রনাথ, নজরুল কিংবা কোনো বিজ্ঞানী, কোনো দার্শনিক, সাহিত্যিক হতে পেরেছে এমন উদাহরণ আমোদের সামনে নেই। মুখস্থ করে লেখা আর নকল করে লেখার মধ্যে মৌলিক কোনো পার্থক্য আছে বলে আমার কাছে মনে হয় না। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, মুখস্থ করে পরীক্ষা দিয়ে পাস করার মধ্যে শিক্ষার্থীর কোনো অর্জন নেই। শিক্ষা মানুষকে পূর্ণতা দান করে। আর মুখস্থ করার শিক্ষা দিয়ে সেটা কখনোই সম্ভব নয়। সৃজনশীলতার বিকাশ ঘটায়। শিক্ষা সম্প্রীতির বন্ধন গড়ে তুলে মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হতে শেখায় সব অন্যায় ও কূপমন্ডকতার বিরুদ্ধে। শিশুরা, শিক্ষার্থীরা শিখবে আনন্দের সঙ্গে, উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়ে আগ্রহের সঙ্গে।

সেই দিক থেকে বিজয়ের ৫২ বছরেও আমাদের শিক্ষা কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য থেকে অনেক দূরে। এখনো পর্যন্ত আমরা একটি পূর্ণাঙ্গ শিক্ষানীতি ও শিক্ষাক্রম তৈরি করতে পারিনি। যেখানে শিক্ষা হবে দেশপ্রেমভিত্তিক সর্বজনীন ও বিজ্ঞানভিত্তিক। একই ধারার এবং শিক্ষার মাধ্যম হবে মাতৃভাষা। শিক্ষার্থীরা পরীক্ষার ভীতিমুক্ত থাকবে। আমাদের দেশের মতো শিক্ষার এমন হ-য-ব-র-ল অবস্থা বিশ্বের অন্য কোনো দেশে আছে বলে আমাদের জানা নেই। শিক্ষার এমন হ-য-ব-র-ল অবস্থার মধ্যেও শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন স্তরে দক্ষতা এবং কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখে চলছে। বঙ্গবন্ধু, জাতীয় চার নেতা, সূর্যসেন, ক্ষুদিরাম, প্রীতিলতা, ভগৎসিংহ, জগদীশ চন্দ্র বসু, গোবিন্দ সাহা, নজরুল ইসলামসহ দেশবরণ্যদের জীবনী শিক্ষার্থীদের পাঠ্যপুস্তকের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

আমরা যে মেধাবী তারও প্রমাণ পাওয়া যায়। যদি মেধা বিকাশের পর্যাপ্ত আয়োজন থাকে, আমরা অনেক দূর এগিয়ে যেতে পারব। একটি আধুনিক এবং সৃজনশীল মেধা বিকাশ সহায়ক শিক্ষাক্রমের মধ্য দিয়ে আমরা শিক্ষার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জনে সফল হতে পারব বলে বিশ্বাস রাখি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে সীমাহীন ক্ষতিগ্রস্ত দেশ জাপান আজকে উন্নত এবং সভ্য দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম। এটা শুধু সম্ভব হয়েছে জাপানের দেশপ্রেমভিত্তিক সর্বজনীন ও বিজ্ঞানভিত্তিক একই ধারার এবং মাতৃভাষাভিত্তিক শিক্ষার মাধ্যমে। একটি আধুনিক শিক্ষা কারিকুলাম প্রণয়নের মধ্য দিয়ে তারা আজকের সফল অবস্থানে।

নতুন শিক্ষা কারিকুলাম প্রণয়ন এবং প্রয়োগের মধ্য দিয়ে আমরাও সামনের দিকে এগিয়ে যাব। সত্যকে সত্য বলে এবং মিথ্যাকে মিথ্যা বলে চিহ্নিত করে সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করার মাধ্যমে নৈতিক চর্চা চালিয়ে যেতে পারব। সময়োপযোগী একটি শিক্ষা কারিকুলামের মধ্য দিয়ে আমাদের ঘুণেধরা সমাজের পরিবর্তন করে নিখাদ সংস্কৃতির বৈষম্যহীন সম্প্রীতির সমাজ গড়ে তুলতে পারব। শিক্ষার নতুন কারিকুলামে আমাদের চিন্তার বিকাশ ঘটবে, জানার ইচ্ছে জাগবে, নতুন নতুন প্রশ্ন এবং উত্তর তৈরি হবে।

২০২৩ সালে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণি এবং ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নের ধাপ শুরু হয়েছে। কারিকুলামের মূল অংশটুকু পাঠকদের উদ্দেশ্যে উপস্থাপনের মাধ্যমে আলোচনার চেষ্টা করছি। নতুন শিক্ষাক্রমের লক্ষ্য পড়াশোনা হবে আনন্দময়। বিষয়বস্তু ও পাঠ্যপুস্তকের বোঝা এবং চাপ কমানো হবে। গভীর শিখনে গুরুত্ব দেওয়া হবে। মুখস্থ নির্ভরতার বিষয়টি যেন না থাকে। এর বদলে অভিজ্ঞতা ও কার্যক্রমভিত্তিক শিক্ষাকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।

শিক্ষার্থীর দৈহিক ও মানসিক বিকাশে খেলাখুলা ও অন্যান্য কার্যক্রমকে গুরুত্ব দেওয়া হবে। ক্লাস শেষে যেন শিক্ষার্থীরা নিজেদের মতো সময় কাটাতে পারে। পড়াশোনার বাইরে খেলাধুলা বা অন্যান্য বিষয়ের সুযোগ কমে গেছে, এটি যেন না হয়। জ্ঞান, দক্ষতা, মূল্যবোধ ও দৃষ্টিভঙ্গির সমন্বয়ে যোগ্যতা অর্জন করতে হবে। ২০২৪ সালে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণি এবং অষ্টম ও নবম শ্রেণি এ শিক্ষাক্রমের আওতায় আসবে। ২০২৫ সালে পঞ্চম ও দশম শ্রেণি যুক্ত হবে। ২০২৬ সালে একাদশ ও ২০২৭ সালে দ্বাদশ শ্রেণি যুক্ত হবে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সমন্বয় রেখে বর্তমান শিক্ষা কারিকুলামে আধুনিকায়ন করা হচ্ছে। শিক্ষায় আমরা এগিয়ে যাব পুরাতন মুখস্থ করার পদ্ধতি থেকে আত্মস্থ করার পথে। প্রথম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত চলমান শিক্ষাক্রমের ভুলত্রম্নটি সংশোধন, আন্তর্জাতিক মান ও সময়ের চাহিদা বিবেচনা করে পরিবর্তন আনার উদ্যোগ নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়- যা প্রশংসার দাবিদার।

দেশের স্বার্থে প্রয়োজনে এই শিক্ষা কারিকুলামকে আরও বিশেষভাবে পর্যালোচনা করা যেতে পারে। এটি বাস্তবায়নের ফলে মাধ্যমিক পর্যন্ত কোনো বিভাগ বিভাজন থাকছে না। ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি সবাইকে পড়তে হবে ১০টি বিষয়। একইভাবে সবাই মিলে একই সত্যকে জানতে পারবে। নিজেদের মধ্যে বিভাজনের পরিবর্তে সৃষ্টি হবে ঐক্য। দশম শ্রেণির পাঠ্যসূচির ওপরই অনুষ্ঠিত হবে এসএসসি পরীক্ষা। একাদশ শ্রেণিতে গিয়ে শিক্ষার্থীদের বিভাগ পছন্দ করতে হবে।

একাদশ শ্রেণি শেষে পরীক্ষা এবং দ্বাদশ শ্রেণি শেষে পরীক্ষা নেওয়া হবে। এই দুই পরীক্ষার ফলের সমন্বয়ে তৈরি হবে এইচএসসির ফল। এ ছাড়াও প্রাথমিকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত কোনো পরীক্ষা থাকছে না। চতুর্থ থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়তে হবে আটটি বই। তবে সব শ্রেণিতেই শিখনকালীন মূল্যায়নেই বেশি জোর দেওয়া হয়েছে। শিক্ষার্থীরা যেন মানসিক দৃঢ়তা ধরে রাখতে পারে, এ জন্য কিছু মৌলিক জ্ঞান এ বিষয়ের মাধ্যমে শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ পাবে। এর ফলে শিশুরা সব ধরনের প্রতিকূলতা মোকাবিলা করার সক্ষমতা অর্জন করবে। জন্ম থেকেই আমাদের সবাইকে (ছেলে ও মেয়ে) প্রজননের অনেক ধাপ অতিক্রম করতে হয়। এ বিষয়ে যেন শিক্ষার্থীরা সুস্পষ্ট ধারণা পায়, এ জন্য 'শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য এবং সুরক্ষা' বিষয়ে প্রজনন স্বাস্থ্য নামে অধ্যায় রাখা হয়েছে।

অন্যদিকে, 'জীবন ও জীবিকা' বিষয়টি হবে পেশাভিত্তিক। নবম ও দশম শ্রেণিতে এ বিষয়ে বাধ্যতামূলকভাবে প্রত্যেক শিক্ষার্থী কৃষি, সেবা বা শিল্প খাতের একটি পেশায় দক্ষতা অর্জন করবে। এতে দশম শ্রেণি শেষে একজন শিক্ষার্থী যে কোনো একটি পেশায় নিজেকে নিয়োজিত করতে পারবে। শিক্ষার্থীরা আর চাপে নয়, বরং আনন্দের সঙ্গে শিখবে। জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখা-২০২১ সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নতুন কারিকুলামে সব শ্রেণিতে জোর দেওয়া হবে শিখন পদ্ধতির ওপর। বর্তমান পাঠ্যক্রমে আমাদের একটি বিষয় আছে যার নাম 'চারুকলা'।

নতুন শিক্ষাক্রমে এর নাম দেওয়া হয়েছে 'শিল্প ও সংস্কৃতি'। এর ফলে এ বিষয়ে শিখন ক্ষেত্র অনেক বাড়বে। আগে যেমন এ বিষয়ে শুধু চারুকলাকে ফোকাস করা হতো, এখন চারুকলার পাশাপাশি নৃত্যকলা, নাট্যকলা ও সংগীত ইত্যাদি বিষয় থেকে শিক্ষার্থী জানতে পারবে। বিষয়টি প্রাথমিকে থাকবে শিল্পকলা নামে এবং মাধ্যমিকে শিল্প ও সংস্কৃতি নামে। অন্যদিকে 'শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য এবং সুরক্ষা' বিষয়ে শিক্ষার্থীরা স্বাস্থ্য সম্পর্কিত মৌলিক বিষয়ের পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্যের বিভিন্ন বিষয়ের সঙ্গেও পরিচিত হতে পারবে। বর্তমান শিক্ষাক্রমে আমাদের আইসিটি নামে একটি বিষয় আছে। এই বিষয়টির ব্যাপ্তি বাড়িয়ে এর নাম দেওয়া হয়েছে 'ডিজিটাল প্রযুক্তি'। এর ফলে শিক্ষার্থীরা আইসিটির প্রাথমিক জ্ঞান আহরণ করার পাশাপাশি ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহারের সতর্কতা, অনলাইন ক্রাইম, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারের নিয়মকানুন ইত্যাদি সম্পর্কে জানতে পারবে।

দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা, আমাদের একটি বিজ্ঞানভিত্তিক একটি শিক্ষা কারিকুলাম হবে। নতুন কারিকুলামের বইগুলো অবশ্যই বিজ্ঞানভিত্তিক, চিন্তাশীল এবং সঠিক তথ্যনির্ভর হতে হবে। নতুন কারিকুলামের সফল বাস্তবায়নের জন্য শিক্ষকদের পর্যাপ্ত এবং মানসম্পন্ন প্রশিক্ষণের কোনো বিকল্প নেই। কারিকুলামের সফলতার জন্য বিদ্যালয় এবং শিক্ষকদের নিয়মিত মনিটরিং করতে হবে। সংশ্লিষ্ট সবাইকে জবাবদিহির মধ্যে নিয়ে আসতে পারলেই কারিকুলাম সফল করা সহজ হবে। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট শিক্ষক, কর্মকর্তা ও অভিভাবকদের শতভাগ আন্তরিক হতে হবে। শিক্ষকদের জন্য উদ্দীপনামূলক পুরস্কারের আয়োজনও করা যেতে পারে। শিক্ষকরা তাদের সন্তানদের নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করালে এই কারিকুলামের সাফল্য আসবে দক্ষতার সঙ্গে।

দেশে বর্তমানে কো-কারিকুলাম খুবই অবহেলিত। ফলে বর্তমান শিক্ষায় শিক্ষিতরা এক ধরনের স্বার্থপর হয়ে বেড়ে উঠছে। শিক্ষা যেখানে মানুষের মধ্যে দায়বোধ শেখায়, সেখানে বর্তমান শিক্ষা আমাদের উল্টো পথে হাঁটতে শেখাচ্ছে। দেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, সমসাময়িক প্রযুক্তি, জ্ঞান-বিজ্ঞান, শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর অধিক গুরুত্ব দিয়ে নতুন শিক্ষা কারিকুলাম প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন হবে বলে আমরা বিশ্বাস করি। সেই সঙ্গে শিক্ষাও পূর্ণতা লাভ করবে। আগামী দিনে আমরা একটি দক্ষ এবং সৃজনশীল জাতি পাব। পাঠ্যপুস্তকগুলো হতে বিজ্ঞানভিত্তিক, আনন্দদায়ক, ইতিহাস-এতিহ্য-সংস্কৃতিপূর্ণ। বৃটিশ বিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে স্বাধীনতা পরবর্তী প্রতিটি গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সঠিক ইতিহাস শিক্ষার্থীদের মাঝে তুলে ধরতে হবে। বর্তমান কারিকুলাম এবং শিক্ষাক্রমের মধ্য দিয়ে শারীরিক, মানসিক সমৃদ্ধ একটি উন্নত জাতি গঠন করতে হলে স্বাস্থ্য ও সুরক্ষা বিষয়টিকে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত পাবলিক পরীক্ষায় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই এই ব্যবস্থা বিদ্যমান। বর্তমান কারিকুলামকে আরও বেশি প্রায়োগিক এবং বাস্তবিক করে শিক্ষাবিদ এবং বুদ্ধিজীবীদের পরামর্শ নেওয়া যেতে পারে।

যার ওপর ভর করে আমরা বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারব। তবে তা নির্ভর করবে ইতিবাচক মানসিকতা, নৈতিকতা এবং সততার ওপর। পানি ছাড়া যেমন মাছ বাঁচতে পারে না, তেমনি শিক্ষক ছাড়াও শিক্ষার্থী আলোকিত হতে পারে না।

শিক্ষকদের সম্মানজনক বেতনভাতাসহ সামাজিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো পর্যাপ্ত শিক্ষক নিশ্চিত করতে হবে। শিক্ষা কারিকুলাম হবে শিক্ষাবান্ধব, শিক্ষার্থীবান্ধব, উন্নয়ন ও উন্নতিবান্ধব। সততা, দক্ষতা, প্রজ্ঞার মধ্য দিয়ে নতুন শিক্ষা কারিকুলামের সাফল্য কামনা করছি।

সুধীর বরণ মাঝি :শিক্ষক, কলাম লেখক

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে